১৯৫১ সালের কাছাড়ের নাগরিক পঞ্জি খুঁজে বের করতে ফের আর্জি জানাল ‘ইউনাইটেড ফোরাম ফর সিটিজেনস রাইট’।
সংগঠনের বক্তব্য, যে নাগরিক পঞ্জি সংশোধনের কাজ এখন চলছে, তার মূল নথিটিরই হদিস নেই। সাধারণ মানুষকে পুরনো নথি খুঁজতে বলা হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও সরকার ১৯৫১ সালের নথি সুরক্ষিত রাখতে পারেনি। ১৯৫১ সালের নথি ছাড়া কাছাড় জেলার নাগরিক পঞ্জি পূর্ণতা পাবে না বলেই সংগঠনটির অভিমত।
ফোরামের মুখ্য আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম বড়ভুঁইঞা বলেন, ‘‘উগ্র অসমিয়ারা এনআরসি, বিদেশি চিহ্নিতকরণ এবং ভূমিপুত্র শব্দগুলিকে একসঙ্গে উচ্চারণ করছে। তাই নাগরিক পঞ্জি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে তুচ্ছ ভেবে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’’ তাঁর বক্তব্য, কে কোন বছরের নথি দেখাচ্ছেন নতুন নাগরিক পঞ্জিতে তার উল্লেখ থাকবে। কাছাড়ে ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি না পাওয়ায় মানুষকে ১৯৬৬ বা ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকা থেকে লিগ্যাসি ডেটা সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
বাহারুলের আশঙ্কা, এনআরসি সংশোধনের আড়ালে ভূমিপুত্র নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। না হলে নাগরিক পঞ্জির আবেদনপত্রে কোন বছরের নথি দেওয়া হচ্ছে, সেই পংক্তি রাখা হতো না। ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি নেই— সেই অজুহাত দেখিয়ে কাছাড়ের ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত চলছে। মূল লক্ষ্য, পরবর্তী সময়ে ১৯৫১ সালকে ভিত্তি ধরে কাছাড়ের আসনগুলি উপজাতি বা ভূমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষিত করা, যাতে বিধানসভায় বঙ্গভাষীদের প্রতিনিধিত্ব কমানো যায়।
তাঁর কথায়, ‘‘অন্যান্য জেলার মত কাছাড়েও ১৯৫০ সালে নাগরিক পঞ্জি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। ১৯৫১ সালে তা প্রকাশিত হয়। বর্তমানে যাঁরা এই জেলায় বসবাস করছেন, তাঁদের অধিকাংশের পূর্বপুরুষের নাম রয়েছে ওই নাগরিক পঞ্জিতে। এটি হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে কাছাড়বাসীর শিকড় উৎপাটনের কাজ শুরু হয়েছে।’’ বাহারুল বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভাল করে খুঁজলে নিশ্চিত ভাবে পুরনো ওই নাগরিক পঞ্জির সন্ধান মিলবেই।’’
১৯৫১ সালের এনআরসি খুঁজে না পেয়েও কী ভাবে সেটি সংশোধনের কাজ চলছে, নাগরিক অধিকার রক্ষা সমিতি (সিআরপিসি)-র মুখ্য উপদেষ্টা হাফিজ রসিদ চৌধুরী সেই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী।’’ তিনি জানান, সর্বোচ্চ আদালত নাগরিক পঞ্জির কাজ শুরুর আগে ১০০ শতাংশ লিগ্যাসি ডেটা তৈরি করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল। অর্থাৎ ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি, ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকা এবং ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকা জনগণের কাছে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকার আদালতকে জানিয়েছে, তাদের হাতে যা যা ছিল, সবই জনসাধারণের কাছে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুনানি চলাকালীন এ বিষয়টিও সুপ্রিম কোর্টের নজরে আনা হবে বলে হাফিজ রশিদ জানিয়েছেন।
কাছাড়-সহ কার্বি আংলং, বাকসা, শিবসাগর ও ডিমা হাসাও জেলাতেও ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি খুঁজে পাওয়া যায়নি। কয়েকটি জেলায় তা আংশিক নেই। একই অবস্থা ১৯৬৬ সালের ভোটার তালিকার। তা-ও কয়েকটি জায়গায় পুরোপুরি মিলছে না। তার দায় নাগরিকরা কেন বহন করবেন, জানতে চান হাফিজ রশিদ, বাহারুলরা।