ন’বছর আগে এক দিন জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল আচমকাই। একটু একটু করে বদলে যাচ্ছিল চেনা চোখের চেনা দৃষ্টিগুলোও। কিন্তু হাল ছাড়েনি ষোড়শী। তার হার না মানা পণেরই স্বীকৃতি মিলতে চলেছে এ বার। প্রতি বছরই বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সাহসিনীদের লড়াইকে সম্মানকে জানাতে ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ’ পুরস্কার দেয় মার্কিন বিদেশ দফতর। ২০১৪-এর লড়াকুদের সেই তালিকায় নাম রয়েছে তার।
ভাল নাম লক্ষ্মী। অ্যাসিড হানায় ঝলসে গিয়েছে মুখ। পোড়া দাগে ভর্তি দু’হাতেও। নয়াদিল্লির এই বাসিন্দার বয়স এখন পঁচিশের কোঠায়। এইটুকু বয়সে এত ঝড়-ঝাপটা গিয়েছে, কিন্তু তার পরও মোছেনি মুখের হাসিটা।
ন’বছর আগের সেই দিনটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। বাস ধরবেন বলে দাঁড়িয়েছিলেন দিল্লির খান মার্কেট স্টপে। হঠাৎই জ্বলে ওঠে সর্বাঙ্গ। কিছু দিন ধরেই এক বন্ধুর দাদার কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পাচ্ছিলেন তিনি। সেই ডাকে সাড়া দিতে মন চায়নি ষোড়শী লক্ষ্মীর। প্রত্যাখ্যানের বদলা নিতেই তাঁর গায়ে অ্যাসিড ছুড়ে দিয়ে পালায় ওই যুবক। ঝলসে যাওয়া চোখেই এক পলক দেখতে পেয়েছিলেন আততাতীয় মুখ।
অ্যাসিডে পোড়া বীভৎস দাগগুলো চেহারাটা বদলে দিয়েছে চিরতরে। বাইরের দুনিয়াকে পোড়া মুখ দেখাবেন না, হামেশাই এমন পণ করেন অ্যাসিড হানায় আক্রান্ত বহু তরুণী। বড় জামার আড়ালে লুকিয়ে রাখেন ক্ষত-বিক্ষত শরীর। পড়াশোনো-চাকরি ছেড়ে বাড়িতে বসে যাওয়ার নজিরও বিরল নয়। লজ্জায় অপমানে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন অনেকেই।
লক্ষ্মী কিন্তু এই চেনা ছকে হাঁটেননি। মুখ লুকিয়ে ঘরের কোণে বসে না থেকে এসেছেন প্রচারের আলোয়। অ্যাসিড আক্রমণ বন্ধ করেই ছাড়বেন এই যেন তাঁর সংকল্প। এই উদ্দেশে জাতীয় টিভি চ্যানেলে মুখও দেখিয়েছেন বহু বার। খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রি বন্ধ করতে সাতাশ হাজার সই সংগ্রহও করেছেন। সেই সই-সমেত আবেদন জমা দিয়েছেন শীর্ষ আদালতে।
সাহসিনীর লড়াইকেই কুর্নিশ জানাতে চায় আমেরিকা, এ দিন এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন বিদেশ দফতর। এখনও বহু পথ হাঁটা বাকি, স্বীকার করেছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁরই মতো আরও হাজার হাজার মেয়ের পাশে দাঁড়ানোর সাহস, সমবেত কণ্ঠকে নিজের ভাষায় প্রকাশ করার স্পর্ধাই বা ক’জনেরই থাকে! ক’দিন বাদে ওয়াশিংটনে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার থেকে পুরস্কার নেবেন লক্ষ্মী।
গত বছর ভারত থেকে এই সম্মান পেয়েছিলেন নির্ভয়া। লড়াইটার শেষ অবশ্য দেখে যেতে পারেননি তিনি। কিন্তু লক্ষ্মী পারবেন।
ওবামা-প্রশাসনের পুরস্কারের পাশাপাশি তাঁর প্রাপ্তির ঝুলি ভরেছে এই ভরসাটুকুই।