সাংসদের কাঁঠাল উধাও, হাতের ছাপ খুঁজছে পুলিশ

কথায় বলে, গানেও বলে কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না। এখানে অবশ্য প্রেমের কথা হচ্ছে না। কাঁঠাল নিয়েই যত গেরো। আর সেই কাঁঠাল যদি সাংসদের বাগানের হয়, তা হলে তো কথাই নেই। জেডিইউ সাংসদ মহেন্দ্র প্রসাদের দিল্লির বাড়ির বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করে এখন তার আঠার মহিমা হয়তো হাড়ে হাড়ে বুঝছে চোরেরা। পুলিশের দৌড়ঝাঁপের খবর কি আর তারা পায়নি?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০৩:১৮
Share:

কথায় বলে, গানেও বলে কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে ছাড়ে না। এখানে অবশ্য প্রেমের কথা হচ্ছে না। কাঁঠাল নিয়েই যত গেরো। আর সেই কাঁঠাল যদি সাংসদের বাগানের হয়, তা হলে তো কথাই নেই। জেডিইউ সাংসদ মহেন্দ্র প্রসাদের দিল্লির বাড়ির বাগান থেকে কাঁঠাল চুরি করে এখন তার আঠার মহিমা হয়তো হাড়ে হাড়ে বুঝছে চোরেরা। পুলিশের দৌড়ঝাঁপের খবর কি আর তারা পায়নি?

Advertisement

এঁচোড় থেকে নধর কাঁঠাল হয়ে ওঠা প্রতিদিন সকালে ৪ নম্বর তুঘলক রোডের বাগানে সরেজমিনে নিজেই জরিপ করতেন রাজ্যসভার সাংসদ মহেন্দ্র। কিন্তু কে জানত, ঠারেঠোরে সেই কাঁঠালের দিকে নজর রাখছিল চোরেরাও। পাক ধরতেই রাতের অন্ধকারে সাংসদের বাড়ির নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দু’খানি কাঁঠাল নিয়ে চম্পট দিয়েছে চোর। আজ সকালে উঠে গাছের দিকে তাকিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ মহেন্দ্রর। সঙ্গে সঙ্গে আপ্ত সহায়ককে ডেকে নির্দেশ দেন, ‘আভি বুলাও পুলিশকো।’

খবর পেয়ে দিল্লি পুলিশ হন্তদন্ত হয়ে সাংসদের বাড়িতে হাজির। মহেন্দ্র জানালেন, কাঁঠাল গাছে গত কালও ন’টি কাঁঠাল গুনে রেখেছিলেন। আজ দেখছেন, তার মধ্যে দু’টি নধর কাঁঠাল উধাও। পুলিশ আর কোনও ঝুঁকিই নেয়নি। প্রথমেই কাঁঠাল-চোর ধরতে বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি করে ফেলেছে। ওই দলেরই ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা কাঁঠাল গাছের আশপাশ থেকে হাত ও পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছেন। সেই নমুনা গিয়েছে পরীক্ষাগারে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে সাংসদের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজও। দিল্লি পুলিশের এক অফিসার বলেন, “পায়ের ছাপ ছ’ইঞ্চি লম্বা। দেখে মনে হচ্ছে পায়ের ছাপ কোনও বাচ্চা ছেলের। পাঁচিল টপকে এসে কাঁঠাল চুরি করে নিয়ে গিয়েছে।” এর পরেই ওই অফিসারের সংযোজন, চোর যে-ই হোক না কেন, এই চুরি কিন্তু সাংসদের বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে সাংসদের বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, পরিচারক ও গাড়িচালকদের জিজ্ঞাসাবাদের পর্বটা সেরে রাখতে চাইছে পুলিশ।

Advertisement

এ দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা নতুন নয়। এর আগে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী আজম খানের বাড়ি থেকে মোষ চুরি হয়েছিল। সেই মোষ উদ্ধারে পুলিশকে ব্যতিব্যস্ত করে ছেড়েছিলেন মন্ত্রীমশাই। অনেকটা কাঁঠাল-কাণ্ডের মতোই ঘটনা এক বার ঘটেছিল পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাসস্থান ‘ইন্দিরা ভবন’-এ। সে বার নাটকের কেন্দ্রে ছিল একটি পাকা পেঁপে।

জ্যোতিবাবুর স্ত্রী কমল বসু তখন জীবিত। তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল, ওই চত্বরেরই একটি গাছের একটি পাকা পেঁপে পেড়ে খাবেন। কিন্তু পেঁপে পাড়তে গিয়ে দেখেন, সেটি উধাও। কমলদেবীর সন্দেহ হয়, কর্তব্যরত পুলিশদের কেউই হয়তো ওই পেঁপে পেড়ে খেয়েছেন। জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার রচপাল সিংহকে বিষয়টি জানান তিনি। রচপাল সঙ্গে সঙ্গে এসে পুলিশদের বকাঝকা করেন। পরে জ্যোতিবাবু জানতে পারেন, একটি পাকা পেঁপেকে কেন্দ্র করে এমন কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পেঁপে গাছটাই কেটে ফেলার নির্দেশ দেন।

প্রাচীন বাংলায় ‘নষ্টচন্দ্র’ বলে একটি পরবও ছিল। ওই দিনটায় অভিজাত কিংবা জমিদার বাড়ির বাগান থেকে ফলপাকুড় চুরি করত গ্রামের ছেলে-ছোকরারা। ওই একটা দিনের চুরিকে খানিকটা প্রশ্রয়ের চোখেই দেখা হত। কেউই এ নিয়ে বিশেষ অভিযোগ করতেন না।

রাজধানী দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, নেতা-সাংসদেরা আছেন। মন্ত্রীদের নিরাপত্তায় প্রচুর সান্ত্রীও আছেন। কলিকালের রাজধানীতে তাই কোনও নষ্টচন্দ্রের স্থান নেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement