এক বছর আগে নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেলের পদে কাজ করার সময় বিপদে পড়েছিলেন তিনি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের বিপাকে পড়লেন দেবযানী খোবরাগাড়ে।
সেই খোবরাগাড়ে, নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল থাকাকালীন পরিচারিকার ভিসায় মঞ্জুরি সংক্রান্ত ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে যাঁকে রাস্তা দিয়ে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ বার অনুমতি ছাড়াই সেই বিষয়টি নিয়েই সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলায় তাঁকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। সেই সঙ্গে বিদেশ মন্ত্রককে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দুই সন্তানের মার্কিন পাসপোর্ট করানোর অভিযোগ উঠেছে দেবযানীর বিরুদ্ধে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই সব কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে তাঁর বিরুদ্ধে।
কূটনৈতিক রক্ষাকবচ থাকা সত্ত্বেও মার্কিন পুলিশ ভরা রাস্তায় হাতকড়া পরিয়ে খোবরাগাড়েকে গ্রেফতার করায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল তৎকালীন মনমোহন সরকার। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়। এই সব বিষয় নিয়েই সম্প্রতি একটি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেন দেবযানী। সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল হিসেবে তিনি কোনও অন্যায় কাজ করেননি। সেই সাক্ষাৎকার থেকেই জানা যায়, তাঁর দুই সন্তানের মার্কিন পাসপোর্ট আছে। তাঁর কথায়, “আমার সন্তানরা আমেরিকায় জন্মেছে। তাই তাদের মার্কিন নাগরিক হিসেবেই গণ্য করা উচিত।” এর পরেই অভিযোগ ওঠে বিদেশ মন্ত্রককে না জানিয়ে তাঁর দুই সন্তানের মার্কিন পাসপোর্ট করিয়ে কূটনীতিক হিসেবে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন খোবরাগাড়ে। সেই কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করা হবে বলেও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে খোবরাগাড়ে সাফ জানিয়েছেন, সংবাদমাধ্যমে কথা বলে তিনি কোনও অন্যায় কাজ করেননি। আর দুই সন্তানের মার্কিন পাসপোর্ট থাকা নিয়ে তাঁর যুক্তি, আমেরিকায় থাকাকালীন তাঁর দুই সন্তানকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। খোবরাগাড়ের কথায়, “সার্ভিস রুল অনুযায়ী নাবালকদের দু’টি পাসপোর্ট থাকতেই পারে। এর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই।” এ বার কি তিনি পদত্যাগের কথা ভাবছেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে খোবরাগাড়ে জানিয়ে দিয়েছেন, তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই।
নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল থাকাকালীন কী ঘটেছিল খোবরাগাড়ের সঙ্গে?
১৯৯৯ ব্যাচের আইএফএস অফিসার খোবরাগাড়ে ২০১২ সালে নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল পদে যোগ দেন। সেই বছরই সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয় পরিচারিকাকে নিয়ে যান তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, আমেরিকায় কর্মচারীদের যে ন্যূনতম মজুরি দেওয়ার কথা, সঙ্গীতার ভিসায় সেই অঙ্কেরই উল্লেখ করেছিলেন খোবরাগাড়ে। কিন্তু বাস্তবে সঙ্গীতার হাতে অনেক কম মজুরি দিতেন। এই অভিযোগে গত বছরের ডিসেম্বরে ভরা রাস্তায় খোবরাগাড়েকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পরে খোবরাগাড়েকে বিবস্ত্র করে তল্লাশি চালানোর অভিযোগ ওঠে মার্কিন পুলিশের বিরুদ্ধে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কূটনীতিকের লালারসের নমুনাও নেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, মাদকাসক্তের সঙ্গে একই কুঠুরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় খোবরাগাড়েকে। এই সব খবর প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক হইচই শুরু হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক টানাপড়েনও শুরু হয়েছিল। অবশেষে আদালতে দেড় কোটি টাকার বন্ডে ছাড়া পান খোবরাগাড়ে।
বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল তৎকালীন মনমোহন সরকার। এর পাল্টা হিসেবে দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের সামনে থেকে সমস্ত ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু এখন মোদী সরকারের এই পদক্ষেপের কারণ কী? বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে খবর, জানুয়ারিতে ভারতে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার আগে খোবরাগাড়ের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদী সরকার বুঝিয়ে দিল, মনমোহন জমানার কোনও তিক্ত অভিজ্ঞতার দায় নিতে তারা নারাজ। এই ঘটনায় মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন আইএএস অফিসার উত্তম খোবরাগাড়ে। একটি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সংবিধানই আমার মেয়েকে কথা বলার অধিকার দিয়েছে।”