সিকিমে ধস, ঝড়ে ক্ষতি সমতলে

কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি চলায় ধস নেমে পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু থেকে গ্যাংটকের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল রবিবার বিকেলে। সন্ধ্যা থেকে ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায়। ঝড়ের সময়ে গাছ পড়ে, উড়ে আসা চালের ধাক্কায় এক এসএসবির জওয়ান সহ দু’জন জখম হয়েছেন। ঘুর্ণাবর্তের প্রভাবে কয়েক দিন ধরেই সিকিম জুড়ে বৃষ্টি চলছিল। সিকিম থেকে ওড়িশা পর্যন্ত বিস্তৃত ওই ঘুর্ণাবর্ত রবিবার সকাল থেকে জাকিয়ে বসে। তার জেরে বিকেল থেকেই ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি শুরু হয় ছাঙ্গু এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০৩:২৬
Share:

কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি চলায় ধস নেমে পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু থেকে গ্যাংটকের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল রবিবার বিকেলে। সন্ধ্যা থেকে ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হল উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায়। ঝড়ের সময়ে গাছ পড়ে, উড়ে আসা চালের ধাক্কায় এক এসএসবির জওয়ান সহ দু’জন জখম হয়েছেন।

Advertisement

ঘুর্ণাবর্তের প্রভাবে কয়েক দিন ধরেই সিকিম জুড়ে বৃষ্টি চলছিল। সিকিম থেকে ওড়িশা পর্যন্ত বিস্তৃত ওই ঘুর্ণাবর্ত রবিবার সকাল থেকে জাকিয়ে বসে। তার জেরে বিকেল থেকেই ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি শুরু হয় ছাঙ্গু এলাকায়। টানা বৃষ্টিতে ধস নেমে বন্ধ হয়ে যায় ছাঙ্গুর রাস্তাও। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ধস পড়ে পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু থেকে গ্যাংটক ফেরার পথে আটকে পড়লেন কয়েকশ পর্যটক। শতাধিক গাড়িকে উদ্ধার করার কাজে নেমেছে সিকিম পর্যটন দফতর, সেনাবাহিনী ও পুলিশ কর্মীরা। রবিবার বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গ্যাংটক থেকে ছাঙ্গুগামী জহরলাল নেহেরু মার্গের পাঁচ মাইল এলাকায়। রাত অবধি অবশ্য অধিকাংশ পর্যটককে সেনা বাহিনীর জওয়ানেরা উদ্ধার করেন। তাঁদের ধসের এলাকায় পার করিয়ে গাড়িতে করে গ্যাংটক নিয়ে আসা হয়।

সিকিম প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন সকালের পর থেকেই সিকিমের আবহওয়া খারাপ হওয়া শুরু করে। দুপুর আড়াইটার মধ্যে পর্যটকদের ছাঙ্গু ছেড়ে আসার নিয়ম থাকলেও অনেক সময় তা পর্যটকেরা করেন না বলে অভিযোগ। এদিনও কিছু পর্যটক দেরি করেন বলে অভিযোগ। এদিন লাইন ধরে গাড়িগুলি গ্যাংটক ফিরছিল। ৫ মাইলে ধস নেমে একটি গাড়ি আটকে যায়। কেউ জখম না হলেও বিপত্তি দেখা দেয়। গাড়ির লম্বা লাইন হয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। আটকে পড়ে প্রায় তিনশো গাড়ি। উদ্ধার কাজ শুরু হয়। পূর্ব সিকিমের জেলাশাসক আঞ্জনেয় কুমার সিংহ বলেন, “বিকেল নাগাদ ধস নামে। সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে রাস্তা অনেকটাই পরিস্কার করা গিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে। রাত অবধি সবাইকে নিরাপদে গ্যাংটকে নিয়ে আসা হবে।” প্রশাসনিক সূত্রের খবর, দীর্ঘ চার বছর ধরে গ্যাংটক থেকে ছাঙ্গুগামী ওই রাস্তাটির চওড়া করে সংস্কারের কাজ চলছে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম পর্যটন ব্যবসায়ী সম্রাট সান্যাল বলেন, “ওই রাস্তায় আগে ছাঙ্গু দেড় ঘন্টার মধ্যে পৌঁছানো যেত। এখন আড়াই ঘন্টা মত সময় লাগে। রাস্তাটির দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। তা না হওয়ায় ধস, রাস্তা বন্ধের মত ঘটনা ঘটছে।”

Advertisement

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সাধারণত এ সময়ে তুষারপাত না হলেও, সিকিমের তুলনামুলক উঁচু এলাকাগুলিতে শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে। ঘুর্ণাবর্তের জেরে গ্যাংটক সহ অনান্য এলাকায় বৃষ্টিও হতে থাকে গত কয়েকদিন ধরে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “ছাঙ্গু এলাকায় ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি হয়েছে। সিকিমের অনান্য এলাকাতেও বৃষ্টি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টা এই পরিস্থিতি চলতে পারে।” ঘুর্ণাবর্তের টানে ঝড়, শিলাবৃষ্টি হয়েছে উত্তরবঙ্গের সমতল এলাকায়। আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার সহ ডুয়ার্সের বানারহাটেও রবিবার বিকেল থেকে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের দাপটে আলিপুরদুয়ার শহরসহ নানা এলাকায় বিদ্যুত্‌ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দমনপুরের কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়।

এ দিন বিকেলে ঝড় আছড়ে পড়ে ভারত-ভুটান সীমান্তের কয়েকটি গ্রামেও। ঝড়ে অন্তত প্রায় দু’শটি বাড়ির চাল উড়ে যায়। ঝড়ের দাপটে চারটি চা বাগান সহ গ্রামের শতাধিক গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। ভুটানের শুল্ক দফতরের টিনের চাল উড়ে এসে ভারত সীমান্তের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সশস্ত্র সীমা বলের এক জওয়ান জখম হয়েছেন। মাথায় সুপরি গাছ ভেঙে জখম হয়েছেন এক গাড়ি চালক। তবে তাদের দুজনকে প্রাথমিক চিকিত্‌সার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। চামুর্চি ও বীরপাড়ার মাকরাপাড়া এলাকায় ঝড়ের বেশি প্রভাব পড়েছে। ওই এলাকার চারটি চা বাগানের শতাধিক শ্রমিক আবাস ভেঙে পড়েছে। জল ও বিদ্যুত্‌ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জলপাইগুড়ির মহকুমা শাসক সীমা হালদার বলেছেন, “ঘটনার পরিদর্শনে ধূপগুড়ির বিডিওকে পাঠানো হয়।”

ঝড়ে ক্ষতি হয়েছে কোচবিহার জেলার বাণেশ্বর, আমবাড়ি, তুফানগঞ্জ, খোলতা, টললিগুড়ি এলাকাতেও। ওই এলাকায় বিদ্যুত্‌ পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দিন কোচবিহার শহরেও ঝড়ে বিদ্যুত্‌ সংযোগ বিপর্যস্ত হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement