সিকিমের ট্যাক্সি চালকের ধর্মঘটের জেরে মহাষষ্ঠীর সকাল থেকে চরম দুর্ভোগে পড়লেন নিত্যযাত্রী ও পর্যটকেরা। মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে সিকিমে ওই ট্যাক্সি ধমর্ঘট শুরু হয়। এতে রাজ্য তো বটেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুজোর ছুটিতে সিকিম ঘুরে আসা যাত্রী, পর্যটকেরা বিপাকে পড়ে যান। এনজেপি স্টেশন, জংশন বাস স্ট্যান্ডে সকাল থেকে যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ে। তবে মিনিবাস, সরকারি বাস এবং প্রাইভেট নম্বরের গাড়ি করে বাসিন্দারা সিকিমের উদ্দেশ্যে রওনাও হন। তবে সিকিমের সিংতাম ও রংপোতে চালকদের অবরোধ চলতে থাকায় সকাল ১১টা অবধি পরিস্থিতি পাল্টায়নি। পরে পুলিশ-প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
সিকিম পুলিশের পুলিশ সুপার (পূর্ব) ডিবি গিরি বলেন, “সকালের দিকে কিছু সমস্যা থাকলেও তা পরে স্বাভাবিক হয়েছে। কোথাও অবরোধ নেই। পর্যটকেরা তো বটেই বাসিন্দারা নির্ভয়ে সিকিমে আসতে পারেন। আর যে সমস্যা হয়েছে তা আলোচনায় মিটে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।”
তবে কেন এই ট্যাক্সি ধর্মঘট?
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সিকিমে ৫৮টি ট্যাক্সি স্ট্যান্ড রয়েছে। এগুলির মাধ্যমে সিকিম, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙে ২০ হাজারের বেশি ভাড়ার ট্যাক্সি প্রতিদিন চলাচল করে। প্রতি স্ট্যান্ডে টিকিট কাউন্টার চালকদের সংগঠনের হাতে রয়েছে। প্রতিটি টিকিট পিছু ১০ টাকা সংগঠনগুলির ‘কল্যাণ তহবিল’ জমা পড়ত। গত অগস্ট মাসে সিকিম সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, টিকিট কাউন্টারগুলি সমবায় সংস্থা গড়ে চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এতেই গোলমালের সূত্রপাত। ট্যাক্সি চালকদের সঙ্গে সরকারের তরফে গত দুই মাসে একাধিকবার বৈঠক হলেও কোনও সমাধান সূত্র বার হয়নি। এতেই মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে থেকে ট্যাক্সি ধমর্ঘটের ডাক দেয় চালকেরা।
সিকিম প্রশাসনের কয়েকজন আধিকারিক জানিয়েছেন, সমবায় পদ্ধতিতে কাউন্টার চললে একদিকে যেমন বেকারদের কর্মসংস্থান হবে, তেমনিই কাউন্টার পিছু সমস্ত তথ্য প্রশাসনের হাতে থাকবে। এতে চালকদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু চালক সংগঠনের দাবি, পার্কিং-সহ নানা সরকারি ফি দিয়ে কাউন্টারগুলি থেকে গাড়ি চালানো হয়। তার উপর কল্যাণ তহবিলের টাকা দিয়ে চালকদের বিপদে আপদে সব সময় পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হয়। কো-অপারেটিভ হলে তা আর হবে না।
সিকিমের ভিতরে কোথাও অবশ্য এদিন গাড়ি চলাচল বন্ধ ছিল না। তবে শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী রুটেই গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব ও উত্তর সিকিম, ছাঙু লেক-সহ সর্বত্র স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চলেছে। বেলা বাড়তেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। চালকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকেও বসেন ওই রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। দুপুর ১টার পর থেকে এ রাজ্যের তো বটেই সিকিমের ট্যাক্সি পারমিটেরও গাড়ি কিছু কিছু করে চলাচল শুরু করে। সিকিম ট্যাক্সি ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে ধমর্ঘট তোলার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পুলিশ-প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ, বুধবার থেকে কোথাও অবরোধ করা না হলেও সংগঠনটির তরফে সমস্ত চালকদের গাড়ি না চালানোর অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সিংতাম, রংপোতে ধর্নায় কর্মসূচিও নিয়েছে চালকদের সংগঠনটি।
এদিন সকাল থেকে পর্যটকদের সাহায্যের জন্য এনজেপি পর্যটন দফতরের হেল্প ডেক্সে ছিলেন ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, “বহু পর্যটক বাসে, ট্রেনে নেমে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। সকলকে বুঝিয়ে জংশনে বাসস্ট্যান্ডে পাঠানো হয়। বিকালের পর তা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।”
আজ, বুধবার থেকে সিকিমে পুরোপুরি পুজোর মরশুম চালু হয়ে যাচ্ছে। ষষ্ঠী থেকেই দলদলে পর্যটক সিকিমে আশা শুরু করেছেন। এরমধ্যে ট্যাক্সি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাত সকাল থেকেই দুর্ভোগ বাড়ে পর্যটকদের। সরকারি বাস ও মিনিবাস ভিড়ে ঠাসা থাকায় বেশ কিছু প্রাইভেট নম্বরের গাড়ি সিকিম যেতে ভাড়াও বেশি নেয় বলে অভিযোগ। এদিন সকালে বিহারের ঠাকুরগঞ্জ থেকে সপরিবারে শিলিগুড়ি এসে গাড়ি না পেয়ে সমস্যা পড়েন মনোজ পারিয়র। একই সমস্যায় সরিবারে পড়েন বসিরহাটের বাসিন্দা তীর্থ সরকার। দু’জনই কার্যত একই সুরে বলেন, “সকালে ট্রেন থেকে নেমে গাড়ি না পেয়ে সমস্যায় পরে। সিকিম পরিবহণ সংস্থার বাসে টিকিট কেটে কোনও রকমে গ্যাংটকে যাচ্ছি।”