লাল পার্টি! বিষ মাথায় উঠেছে

ভোলা শুধু মানুষের নয়, পাশাপাশি ষাঁড়েদেরও খুব প্রচলিত নাম। হয়তো শিবের বাহন বলে। ষাঁড়েরা বাজারে ঢুকে ডান দিকে বাঁ দিকে যা পায় মুখে তুলে নেয়। কাউকে বিশেষ গ্রাহ্য করে না। সিপিএম-এর পুরপিতা-নেতারাও তাই করতেন। তাঁদের পিছনে কাজের লোক থাকতেন হাতে বড় চটের থলে নিয়ে। নেতা-পুরপিতা ডান হাতে বাঁ হাতে যা তুলতেন সবই সেই থলেতে চালান হয়ে যেত। দাম চুকোনোর বালাই ছিল না। নব্বইয়ের দশক থেকেই সিপিএম-এর এই রকম ‘ভোলা’দের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ‘ভোলা’রাই লাল পার্টিকে ডোবাল। বিশ্লেষণে শর্মিষ্ঠা দত্ত ভট্টাচার্য। ভোলা শুধু মানুষের নয়, পাশাপাশি ষাঁড়েদেরও খুব প্রচলিত নাম। হয়তো শিবের বাহন বলে। ষাঁড়েরা বাজারে ঢুকে ডান দিকে বাঁ দিকে যা পায় মুখে তুলে নেয়। কাউকে বিশেষ গ্রাহ্য করে না। সিপিএম-এর পুরপিতা-নেতারাও তাই করতেন। তাঁদের পিছনে কাজের লোক থাকতেন হাতে বড় চটের থলে নিয়ে। নেতা-পুরপিতা ডান হাতে বাঁ হাতে যা তুলতেন সবই সেই থলেতে চালান হয়ে যেত। দাম চুকোনোর বালাই ছিল না। নব্বইয়ের দশক থেকেই সিপিএম-এর এই রকম ‘ভোলা’দের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ‘ভোলা’রাই লাল পার্টিকে ডোবাল। বিশ্লেষণে শর্মিষ্ঠা দত্ত ভট্টাচার্য।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০০:০৫
Share:

নব্বইয়ের দশকে উত্তর চব্বিশ পরগনার উত্তর দমদম পুরসভায় সিপিএম-এর এক পুরপিতা ছিলেন। যিনি বাজারে ঢুকলে ব্যবসায়ীরা চেঁচাত, ‘ওরে সাবধান, ভোলা এসেছে।’ ভোলা শুধু মানুষের নয়, পাশাপাশি ষাঁড়েদেরও খুব প্রচলিত নাম। হয়তো শিবের বাহন বলে। ষাঁড়েরা বাজারে ঢুকে ডান দিকে বাঁ দিকে যা পায় মুখে তুলে নেয়। কাউকে বিশেষ গ্রাহ্য করে না। তা সিপিএম-এর সেই পুরপিতাটিও তাই করতেন। তাঁর পিছনে কাজের লোক থাকতেন হাতে বড় চটের থলে নিয়ে। পুরপিতাটি ডান হাতে বাঁ হাতে যা তুলতেন সবই সেই থলেতে চালান হয়ে যেত। দাম চুকোনোর বালাই ছিল না। নব্বইয়ের দশক থেকেই জেলায় জেলায় সিপিএম-এর এই রকম ‘ভোলা’দের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

Advertisement

এই ‘ভোলা’দের কথা আলিমুদ্দিনের বিষ্ণু-ব্রহ্মাদের জানা ছিল না তা নয়। তাঁরা ভোটে জিততে চোখ বুজে ধ্যানস্থ হয়ে থাকতেন। যার ফল আজকে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। সেই সময় থেকেই প্রভাবশালী নেতার স্নেহচ্ছায়ায় থাকা কমরেডরা একই অসুখে আক্রান্ত। শিল্পাঞ্চলের যুবক দেখছে সারি সারি বন্ধ কারখানা। কোথাও কোথাও সেই কারখানায় প্রোমোটার বহুতল তুলছে, কোথাও আবার সেই জমিতে কমরেডদের দালালি, ঠিকাদারি, প্রোমোটারের ব্যবসা। সবই হয়েছে পার্টির প্রভাবে। বেকার সমস্যার অজুহাতে শহর-শহরতলিতে এল অটো। যার জন্মলগ্ন থেকেই আইন ভাঙাই কাজ।

পাশাপাশি শুরু হল বিল্ডিং মেটিরিয়াল সাপ্লাই করা, মোটা টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে ওঠানো-বসানো। শিক্ষকদের বেতন বেড়েছে। সেই সুযোগে গ্রামাঞ্চলে তৈরি হল এক নতুন তুলনায় বিত্তবান শ্রেণি। যারা মুখে মার্কসবাদের কথা বললেও সুদের ব্যবসা করতে হাত কাঁপত না। এই সব দেখেই বর্ষীয়ান ও আপাদমস্তক সৎ নেতা বিনয় চৌধুরী বলেছিলেন গাছ, মাছ আর ঠিকাদারেরা পার্টিটাকে খেয়ে নিচ্ছে। গাছ আর মাছ বলতে বিনয়বাবু টিম্বার মাফিয়া আর ভেড়ির কথা বলেছিলেন। বর্ধমানের এক দলীয় সভায় এ কথা বলার পর বিনয় চৌধুরী একঘরে হয়ে গিয়েছিলেন।

Advertisement

জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ‘পার্টির যদি এই অবস্থা হয় তা হলে উনি আছেন কেন?’ ১৯-২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর বঙ্গজ কমিউনিস্টদের এই উত্তরণ নতুন প্রজন্ম মুখ বুজে সহ্য করেননি। চট ঘেরা টেবিলটার উপর রাখা বাক্সে তার প্রতিফলন পড়েছিল। কিন্তু ভোট বিশেষজ্ঞ সিপিএম নানা অবৈধ পন্থায় প্রতিফলনটাকে বড় আকার নিতে দেয়নি। ১৯৯৭ সালে ‘শুদ্ধকরণ অভিযান’-এর ডাক দেওয়ার আগেই সিপিএম-কে বলতে হয়েছিল “গৌরবজনক সাফল্য সত্ত্বেও পার্টির মধ্যে শ্রমিকশ্রেণি বিরোধী দোষত্রুটি সংখ্যায় কম হলেও দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কাজ করার দায়িত্ব পেয়ে দুর্নীতি এবং ত্রুটি-বিচ্যুতির সুযোগ বেড়েছে। একটা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে, জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবসাধনের লক্ষ্যে কর্মোদ্যমে ব্রতী একটি বিপ্লবী পার্টির পক্ষে দু’একটি দুর্নীতি বা ক্রুটি বিচ্যুতির ঘটনাও আমরা কিছুতেই বরদাস্ত করতে পারি না।”

আর পার্টি ক্ষমতায় আসার ২১ বছর পরে বলতে হয়েছিল, “ঠিকাদার, প্রোমোটার, ভেড়ির মালিক ও অসামাজিক ব্যক্তিরা যাতে পার্টির চার পাশে ভিড় করতে না পারে এবং কোনও দায়িত্বশীল পার্টিকর্মী যাতে এদের প্রশ্রয় না দেয়, সে ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে।”

এত সতর্কতা কেন? আসলে বোতলের মুখ খুলে তখনই দৈত্য বেরিয়ে পড়েছিল। যাকে ফের বোতলে ফিরিয়ে আনা, রূপকথায় হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই এত বাণী বিফলেই গিয়েছে। বাস্তবে তার কোনও প্রভাব পড়েনি। ১৯৯৮ সালে প্রথম বড় ধরনের ধাক্কা লাগে সিপিএম-এর। তখন সবে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়েছে। আর সদ্যোজাত সেই দলের হাত ধরে এই রাজ্যে বিজেপি-র উত্থান। তখনই বোঝা গিয়েছিল গ্রামের লাল দুর্গ আর ততটা লাল বা দুর্ভেদ্য নয়। তখন থেকেই সিপিএম-এর সংকটের শুরু।

১৯৯৩ সালেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফল সিপিএম-এর উদ্বেগ বাড়িয়েছিল। সিপিএম-এর রাজ্য কমিটির হিসেবে ১৯৮৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের তুলনায় ১৯৯৩-এর নির্বাচনে ত্রিস্তরেই সব জেলাতে প্রাপ্ত আসনের হার কমেছে। ১৯৯৬ সালে জ্যোতিবাবুর সামনে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল। ১৯৯৮ সালে লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সেই জ্যোতি বসুর নির্বাচনী কেন্দ্র সাতগাছিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে ২ হাজার ১২৩ ভোটে পিছিয়ে পড়েছিলেন। মনে রাখতে হবে সে বার সাতগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৪২৭টি ভোট। ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে শহর, শিল্পাঞ্চল, উদ্বাস্তু-অধ্যুষিত মধ্যবিত্ত বহুল এলাকায় সিপিএম-এর আটটি আসন হাতছাড়া হয়েছিল।

পাশাপাশি একশোটিরও বেশি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটের অঙ্কে তৃণমূল-বিজেপি জোটের তুলনায় সিপিএম পিছিয়ে ছিল। উত্তর চব্বিশ পরগনার খড়দহ, পানিহাটি, দমদম, বরানগর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুর, যাদবপুর, বিষ্ণুপুর, মন্দিরবাজার, কলকাতার উদ্বাস্তু আর বস্তি অধ্যুষিত বালিগঞ্জ। এই সবকটি জায়গা সেই সময় কমিউনিস্টদের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। অথচ এই সবকটি জায়গাতেই সিপিএম ধরাশায়ী হয়েছিল। লাল দুর্গ দমদম বিধানসভা এলাকায় সিপিএম প্রার্থী ২৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন এবং যাদবপুরে সিপিএম প্রার্থী ১৫ হাজার ভোটে।

সিপিএমের আর একটি দুর্গ সোনারপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এগিয়েছিলেন ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটে। অর্থাৎ নব্বইয়ের দশকেই যে সিপিএম-এর জনবিচ্ছিন্ন হওয়া শুরু তা মোটামুটি পরিষ্কার। ভোটের দিন বিকেলে বিমান বসু বলেছিলেন, কম্পিউটারে খুঁজে খুঁজে তপন সিকদারের জন্য বিজেপি দমদম লোকসভা কেন্দ্র পেয়েছে। কিন্তু কম্পিউটার ওদের ভুল খবর দিয়েছে। আর ভোটের শেষে উত্তর চব্বিশ পরগনার নেতারা আলিমুদ্দিনে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, দমদম লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটে জিতবেন।

কিন্তু ফল বেরোতে দেখা গেল সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে তুলনায় মাটির কাছাকাছি থাকা বিমানবাবুর কাছেই ভুল খবর ছিল। দমদম লোকসভা কেন্দ্রে, অর্থাৎ ৫৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে জেতা কেন্দ্রে, ১ লক্ষ ৩৫ হাজার ভোটে সিপিএম প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। যে নেতারা জেতার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তাঁরা ‘অন্তর্ঘাতের কারণে পরাজয়’ বলে রিপোর্ট দিয়েছিলেন। আলিমুদ্দিনের নেতারাও মনের সুখে তা মেনে নিয়েছিলেন।

আসলে বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ খুঁজে অন্তর্ঘাতের তত্ত্বে গা ভাসানোটাই তাঁরা শ্রেয় মনে করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মহাকরণে প্রবেশ করেছিল বামফ্রন্ট। ১৯৭৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সাফল্য এল। সেই বছরেই বিধ্বংসী বন্যা পঞ্চায়েতের সামনে বিরাট সুযোগ এনেছিল। উদ্ধারকাজে ও ত্রাণ যোগানে আন্তরিকতা গ্রামবাংলার মানুষের হৃদয়ে সিপিএম-এর নাম লিখে দিল। পাশাপাশি, বন্যার ক্ষতি সরিয়ে এলাকা পুনর্গঠনের কাজে নতুন পঞ্চায়েত কর্তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দিল। রাজনীতির ক্ষমতায়নে পঞ্চায়েতে এমন লোক কর্তা হয়েছিলেন বাবুদের দাপটে এত দিন যার এলাকার ইতু পুজোর বাজার করারও অধিকার ছিল না। সেই তিনিই ভোটে জিতে পঞ্চায়েতের সদস্য হয়ে সরকারি টাকা খরচের অধিকারী হলেন।

দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এঁরাই গ্রামীণ সমাজের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে গেলেন। ধীরে ধীরে পঞ্চায়েত আর গ্রামীণ মানুষের সম্পর্কে গড়িয়ে ছিল দাতা ও গ্রহীতায়। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামে রাজনৈতিক আধিপত্য কায়েম কিন্তু শুরু হয়েছে দলের উপরতলা থেকেই। সেই সময়ে দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ সার্কুলারে নজর রাখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, “পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পঞ্চায়েত পরিচালনা করতে গেলে কেবল নির্বাচিত সদস্যদের উপর পঞ্চায়েতের ভার ছেড়ে দিলে চলবে না। পার্টির সব স্তরেই নিয়মিত পঞ্চায়েত নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করতে হবে। পঞ্চায়েত পরিচালনায় পার্টিকে রাজনৈতিক নেতৃত্বে উপস্থিত করতে হবে। কেবল তা হলেই পঞ্চায়েতগুলো বর্তমান দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠে জনমুখী পঞ্চায়েত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।”

অর্থাৎ রাম-রহিমের ভালমন্দ ভবিষ্যৎ সব কিছুই পার্টি ঠিক করে দেবে। এর ফলে পঞ্চায়েতের উন্নয়ন প্রকল্প রচনা ও রূপায়ণে গ্রামীণ মানুষের যুক্ত হওয়ার লক্ষ্য তখন থেকেই বায়বীয় আকার ধারণ করল। এই সব রোগের কথাই জানা ছিল পার্টির কর্তাদের। সেই সময়ে পার্টির চিঠিতে বলা হয়েছিল, “সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় এলাকার জনগণ তো দূরের কথা, পার্টির প্রতীকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করার ক্ষেত্রেও অনীহা রয়েছে। সিদ্ধান্তটি বড়জোর এদের ছুঁইয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কেনাকাটার জন্য বিরোধীদের নিয়ে পারচেজ কমিটি বা বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের জন্য বেনিফিসিয়ারি কমিটির মধ্যে সে কাজ না করা, নানা নামে ঠিকাদারি ব্যবস্থা প্রথা চালু রাখা, স্বচ্ছতার অভাব, এমনকী প্রাতিষ্ঠানিক বা দলবদ্ধ ভাবে দুর্নীতি করা বা চাপা দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও আছে।”

গ্রাম পঞ্চায়েতের নীচে গ্রাম সংসদে বুথের সব ভোটারদের নিয়ে সভা করার কথা থাকলেও তা প্রায় উঠিয়ে দেওয়া হল। বর্তমান বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বাম আমলে পঞ্চায়েত মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে জানেন অনেক জেলা কমিটি সম্পাদকের ছেলে অথবা মেয়ের বিয়েতে দামি উপহার দিতে পঞ্চায়েতের ঠিকাদারদের লাইন পড়ত। অনেক নেতাই দলের সর্বক্ষণের কর্মী হওয়া সত্ত্বেও ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। ১৯৭৭ সালে বিশাল জনাদেশ নিয়ে মহাকরণে অধিষ্ঠান এবং তার পরের বছরেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী সুলভ জয়। এই জোড়া ফলে শহর এবং গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষকে সদ্য ক্ষমতাসীন একটি দলের চারপাশে এনে দিল।

পার্টি তখন থেকেই বড় হতে শুরু করেছিল। তাই দলের সালকিয়া প্লেনামে গণবিপ্লবী পার্টি গড়ার ডাক বাস্তবে সিপিএম-কে গণপার্টিতে পরিণত করল। এর ফল যা হওয়ার তাই হল। না হয়ে উঠল বিপ্লবী পার্টি, না শেখা গেল সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি। তাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়ানো সরকার ও দল জনগণের ভোটে নয়, নানা অবৈধ কৌশল ও পেশীশক্তির জোরে ভোটে জিতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে লাগল।

বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয় ১৯৯৮ সালের বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের ফলের দিকে তাকালে। সে বার বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেস চারটিতে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। মনে রাখতে হবে নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছিল। অথচ বারাসত এমন একটি কেন্দ্র যেখানে গ্রাম আছে, শহর আছে, ভেড়ি আছে, প্রোমোটার আছে। উদ্বাস্তু অধ্যুষিত মহল্লা আছে আবার ৩০ শতাংশ মুসলমান রয়েছেন। অর্থাৎ বামপন্থীদের ভিতের সব রসদই সেখানে থাকা সত্ত্বেও এই ফলাফল। বিপদ যে তখনই ঘাড়ের কাছে বাসা বেঁধেছিল তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিপদের মোকাবিলা না করে ভোট কৌশলে টিঁকে থাকার চেষ্টাই আজ বঙ্গভূমিতে লালেদের অপাংক্তেয় করে তুলেছে।

বামেদের এমন দুরবস্থা সহজে কাটার নয়। বিষ যে মাথায় উঠেছে। বুদ্ধদেব-বিমান-সূর্যকান্ত-গৌতম-সুজন এটা ভাল মতোই বুঝছেন। বুঝছেন, রেজ্জাক মোল্লা-অনিল বসু-লক্ষণ শেঠদের দল থেকে তাড়ালেই বিষ মাথা থেকে নামবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement