রুষ্ট রামদেব, গুরুজিদের তুষ্ট করাই চাপ বিজেপির

ঠেলার নাম বাবাজি! ভোট টানার জন্য সমর্থন নিয়ে বসে আছেন। এখন ধর্মগুরুদের আবদার মেটাতে নাজেহাল বিজেপি নেতারা। এমনিতেই দলের তাবড় নেতাদের টিকিট দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে ঝক্কির শেষ নেই। তার উপরে টিকিটের দাবি আসছে ধর্মীয় গুরু তথা বাবাজিদের অনুগামীদের থেকেও।

Advertisement

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০৫:৪৫
Share:

ঠেলার নাম বাবাজি!

Advertisement

ভোট টানার জন্য সমর্থন নিয়ে বসে আছেন। এখন ধর্মগুরুদের আবদার মেটাতে নাজেহাল বিজেপি নেতারা। এমনিতেই দলের তাবড় নেতাদের টিকিট দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে ঝক্কির শেষ নেই। তার উপরে টিকিটের দাবি আসছে ধর্মীয় গুরু তথা বাবাজিদের অনুগামীদের থেকেও।

টিকিট যাঁরা পাননি, দলবল নিয়ে তাঁরা হত্যে দিয়ে রোজ পড়ে থাকছেন বিজেপির সদর দফতরে। স্লোগান তুলছেন দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই। কর্নাটকের এক তরুণী তো দলের সদর দফতরের সামনে এসে বিষ খেয়ে বসে আছেন, তাঁর পছন্দের এক নেতা টিকিট না পাওয়ায়। তিনি এখন হাসপাতালে। এই সব সামাল দিতেই হিমশিম এখন বিজেপি। তার উপর অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছেন যোগগুরু রামদেব।

Advertisement

বিজেপি সূত্রের মতে, রামদেব চাইছিলেন বিহারের পাটলিপুত্র থেকে তাঁর অনুগামী নিশিকান্ত যাদবকে প্রার্থী করতে। লালুপ্রসাদ নিজের মেয়ে মিসা ভারতীকে সেখানে প্রার্থী করায় আরজেডি ছেড়ে বিজেপিতে এসেছেন রামকৃপাল যাদব। তাঁকে পাটলিপুত্রেই টিকিট দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তা নিয়ে গোসা হয়েছে রামদেবের। এখন আবার পঞ্জাবের গুরদাসপুর কেন্দ্রে অভিনেতা বিনোদ খন্নার বদলে নিজের আর এক অনুগামী সারণ সালারিয়াকে টিকিট দেওয়াতে চান তিনি। এক আবদার মানা যায়নি, দ্বিতীয় আর্জি মেটাতে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছেন রাজনাথ সিংহ। যার ফলে পঞ্জাবের সব আসনে প্রার্থী ঘোষণা হয়ে গেলও গুরদাসপুর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দল।

ধর্মগুরু রবিশঙ্করের অনুগামী মহেশ গিরিকে ইতিমধ্যেই টিকিট দেওয়া হয়েছে পূর্ব দিল্লি কেন্দ্র থেকে। রবিশঙ্করও প্রকাশ্যে মোদীকে সমর্থন করেছেন। সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টিকে। পরোক্ষে প্রশ্ন তুলেছেন, কংগ্রেস আসলে কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করে মানুষকে অন্ধকারে রেখেছে। আর আম আদমি পার্টির মতো দলের অনভিজ্ঞ কাউকে যে দেশ চালানোর ভার দেওয়া উচিত নয়, তা-ও বুঝিয়ে দেন রবিশঙ্কর। গত কাল তিনি দিল্লিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা অশোক সিঙ্ঘলের সঙ্গেও বৈঠক করে গিয়েছেন। যে সিঙ্ঘল গোড়া থেকেই মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছেন।

মহেশ গিরির দাবি, গুরু রবিশঙ্করের নির্দেশেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অতীতে অণ্ণা হজারের আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত থাকলেও এখন মহেশ মনে করেন, সেই আন্দোলন এখন পথভ্রষ্ট হয়েছে। সে কারণে রাজনীতিতে এসেই তিনি সমাজসেবার কাজ করতে চান। মোদীর অনুষঙ্গে থাকলে সেই কাজ তিনি করতে পারবেন।

ধর্মগুরু রবিশঙ্করের অনুগামী প্রার্থী হতে পারলেও নিজের এক জন ঘনিষ্ঠকে টিকিট দেওয়াতে না পেরে রুষ্ট রামদেব। এমন নয় যে, তিনি মোদীকে সমর্থন করছেন না। কিন্তু মোদীর উপর চাপ বাড়াতে প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনার পথেও হেঁটেছেন তিনি।

কিছু দিন আগে প্রকাশ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করে রামদেব বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য অহেতুক তাড়াহুড়ো করছেন।” পরে সঙ্ঘের হস্তক্ষেপে তিনি সুর বদলান।

এ নিয়ে বিজেপির এক নেতা বলেন, “মোদী নিজের ভোটপ্রচারে হিন্দুত্বকে সে ভাবে সামনে না রাখলেও এই গুরুদের সমর্থন প্রয়োজন দলের। কিন্তু সেই সমর্থনেরও কিছু মূল্য রয়েছে। সেটিও এখন দলকে সামাল দিতে হবে।” তবে গোটা বিষয়টি সুকৌশলেই সামলাতে হবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আগামিকাল দিল্লিতে আসছেন মোদী। যোগ দেবেন রামদেবের যোগ সম্মেলনে। তাঁকে বারাণসীতে গিয়ে প্রচারের জন্যও অনুরোধ জানাবেন মোদী। প্রশ্ন হল, অনুগামী টিকিট না পেলে যোগগুরু কি তাতে ভিজবেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement