মনমোহন সিংহের ভাড়া বাড়ি। দিসপুরে। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
এক ৭ নম্বরে দশ বছর কাটালেন তিনি। আর এক ৭ নম্বরে ২৩ বছরে ১০ মিনিটও থাকলেন না! দিল্লির ৭ নম্বর রেসকোর্সের মতো, দিসপুরে ৭ নম্বর নন্দন নগরের বাড়িটিও এ বার ছাড়তে চলেছেন মনমোহন সিংহ। দিসপুরে সরুমটরিয়ার ছোট্ট পাহাড়ি টিলার উপর, ওই বাড়িতে ‘ডঃ এম এম সিংহ’ লেখা ফলকটাও তাই উধাও!
ধারে-ভারে দু’টির তুলনা হয়তো হয় না। কিন্তু সংসদ-সদস্য হওয়ার জন্য ১৯৯১ থেকে ওই বাড়িই ছিল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ভরসা। ওই ঠিকানার ‘সৌজন্যে’ ২৩ বছর আগে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। কারণ, তখনকার নিয়মে রাজ্যসভায় যেতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বাসিন্দা হওয়াটা ছিল আবশ্যিক। এর পরে নিয়ম পাল্টেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। বাড়িটি ছাড়া হয়নি।
তবে এতগুলি বছরের মধ্যে মনমোহন সেখানে পা রেখেছেন বার দু’য়েক। তবু প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি বলে কথা! গর্ব করে দিসপুরবাসী বলতেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের পাড়ার লোক’।
মনমোহন ১৯৯১ সালে নরসিংহ রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হন। তখনও সাংসদ হননি। তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত হয়, অসম থেকে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্য করা হবে। কিন্তু তার জন্য তো অসমের বাসিন্দা হতে হবে। মুশকিল আসান করেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়া। তাঁর বাড়িতেই ভাড়াটে হিসেবে ঠাঁই হয় মনমোহনের। তৈরি হয় ভাড়ার রসিদ। অসমের রেশন কার্ডও হয় মনমোহন সিংহ ও তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌরের নামে।
সেই বাড়ির দোতলায় মনমোহনের ভাড়া নেওয়া ঘরের দরজায় এখন তালা। সামনে ‘ডঃ এম এম সিংহ’ লেখা নামফলক গত বর্ষায় ভেঙে পড়েছিল। তার হদিস কেউ জানেন না। ঘরে আসবাবপত্র বলতে কিছুই নেই। তবে রয়েছে একটি গ্রন্থসাহিব।
আগে এই বাড়িরই ঠিকানা ছিল, ‘হাউস নম্বর ৩৯৮৯, নন্দন নগর, সরুমটরিয়া, দিসপুর, গুয়াহাটি, জেলা কামরূপ, অসম’। নতুন নথিতে নম্বরটা কাকতালীয় ভাবে হয়ে গিয়েছে ৭।
অসম সচিবালয়ের উল্টো দিকে দিসপুর গুড হেল্থ হাসপাতাল থেকে এগোলে বাঁ দিকে ছোট্ট নালার ও-পারে সরু রাস্তা। ৫০ মিটার এগোলে রাস্তা যেখানে শেষ হচ্ছে, সেখানে আপাত ভাবে রাজ্যের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র দিসপুর সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। স্কুলের সমান্তরাল রাস্তা দিয়ে একটু এগিয়ে ছোট্ট টিলায় উঠলেই হিতেশ্বর শইকিয়ার বাড়ি। প্রধানমন্ত্রী যার ভাড়াটে।
গত ২০০৯ সালে প্রথম বার দিসপুর স্কুলে ভোট দিয়েছিলেন মনমোহন। তবে, ভাড়া বাড়িতে যাননি। প্রশাসনের সূত্রে পাওয়া খবর, এ বারেও সেই সম্ভাবনা নেই। রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪ এপ্রিল দুপুর ১টায় হেলিকপ্টারে খানাপাড়া ভেটেরিনারি ফিল্ডে পৌঁছবেন মনমোহন। তার পর গাড়িতে ৩ কিলোমিটার দূরের বুথে। এসএসপি আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি জানালেন, প্রধানমন্ত্রী ভোট দিতে যাওয়ার সময় ওই রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তবে ভোটারদের কোনও অসুবিধা হবে না।
দিসপুর হাইস্কুলে এসপিজি পৌঁছে গিয়েছে আজ। পুলিশের বড়কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে তাঁরা নজরদারি চালালেন। স্কুল চত্বরের বাঁ দিক ঘেঁষে এক তলা বাড়িতে ১৫৬ নম্বর ভোট কেন্দ্র। এখানেই ভোট দেবেন মনমোহন। সঙ্গে থাকতে পারেন তাঁর স্ত্রী।
খোদ প্রধানমন্ত্রী আসবেন ভোট দিতে, অপেক্ষায় আছেন প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা দাশগুপ্ত। তাঁকে বলতে চান স্কুলের ভগ্নদশার কথা। জানলার কাচ ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় খসে পড়ছে পলেস্তারাও। প্রধান শিক্ষিকার কথায়, “সুযোগ পেলে স্কুলে জলকষ্ট আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাব। ভাঙা জানলাগুলোর কথা অবশ্যই তুলব।” ভোটের পরে বাড়িই বদলে যাবে যাঁর, চুকেবুকে যাবে দিসপুরের ওই ঠিকানার যোগসূত্রটুকুও তিনি কি মনে রাখবেন জীর্ণ স্কুলবাড়িটির কথা? সন্ধ্যাদেবী কিন্তু আশাবাদী!