একে ওয়ার্কিং কমিটির প্রবীণ সদস্য। তার উপর দলের অন্দরে কিছু দিন আগে পর্যন্ত সনিয়া গাঁধীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। সুতরাং কথায় কথায় শীর্ষ নেতাদেরও শৃঙ্খলার পাঠ দিতে ছাড়তেন না! কিন্তু সেই জনার্দন দ্বিবেদীই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদীর জয়কে ‘ভারতীয়ত্বের জয়’ বলে মন্তব্য করে দলে শাস্তির মুখে পড়ে গেলেন!
গত কাল একটি বৈদ্যুতিন মাধ্যমে জনার্দন বলেছিলেন, “মোদী ভারতীয়দের বোঝাতে সফল হয়েছে যে তিনি তাঁদের সবথেকে আপন।” তাঁর ব্যাখ্যা, এটা ভারতীয়ত্বের জয়।
রাত পোহাতেই জনার্দনের এই মন্তব্যের জন্য কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কংগ্রেস। দলের বক্তব্য, জনার্দন শুধু কংগ্রেসের বিরুদ্ধমত প্রকাশ করেননি, দলের মতাদর্শকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন সাংবাদিকদের বলেন, “খুব শীঘ্রই জনার্দনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে দল।” মাকেনের কথায়, “নরেন্দ্র মোদী কখনও ভারতীয়ত্বের প্রতীক হতে পারেন না। দ্বিবেদীর মন্তব্যকে কংগ্রেস শুধু খারিজ করছে না নিন্দা করছে।”
দশ জনপথের ভিতরের বৃত্তের নেতা হিসেবে এক সময় দোর্দন্ডপ্রতাপে বিচরণ করতেন জনার্দন। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ক্রমশ ক্ষমতা কমেছে তাঁর। কংগ্রেস সূত্রের দাবি, জনার্দনকে দলের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যের পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন সনিয়া। এটুকু অন্তত নিশ্চিত করা হবে যে সাংগঠনিক কোনও দায়িত্ব যেন তাঁর হাতে না থাকে। মোদীর প্রশংসা করায় ক’দিন আগেই দলের মুখপাত্রের পদ থেকে শশী তারুরকে সরিয়ে দিয়েছেন সনিয়া-রাহুল।
কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, দ্বিবেদীর উদ্দেশ্য ছিল গাঁধী পরিবার বিশেষ করে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা। মোদীর প্রশংসা করে উনি রাহুলকে ছোট করতে চেয়েছেন। কারণ রাহুল কংগ্রেসের বৃদ্ধতন্ত্রের অবসান ঘটাতে সক্রিয় হয়েছেন। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “এমন নয় যে এই প্রথম বার জনার্দন দলকে বিপাকে ফেলতে চাইলেন। এর আগেও একাধিক বার এই কাজ তিনি করেছেন। এমনিতেই দলের প্রধান মুখপাত্র হিসাবে গত পাঁচ ধরে কংগ্রেসের সর্বনাশ করেছেন উনি।” ওই নেতার বক্তব্য, এ বারে ওঁকে ওয়ার্কিং কমিটি এবং সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরানোর সুযোগ পেয়ে গেলেন রাহুল।
জনার্দনও অবশ্য বসে নেই। মাকেনের সাংবাদিক বৈঠকের পরেই যথারীতি বলেছেন, “আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। আমি কখনওই মোদীকে ভারতীয়ত্বের প্রতীক বলিনি।” কংগ্রেসের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির প্রধান তথা কেরলের বর্ষীয়ান নেতা এ কে অ্যান্টনির সঙ্গে বিকেলে দেখা করেন জনার্দন। সেখানেও বিতর্কের জন্য সংবাদমাধ্যমের ঘাড়েই দোষ চাপান! পরে ঘরোয়া আলোচনায় দাবি করেন, অ্যান্টনি তাঁর কথা শুনে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। জনার্দন আবার সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলের অনুগামী। ফলে আহমেদও তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন বলে মনে করছেন অনেকে।
স্বাভাবিক ভাবেই জনার্দনের মন্তব্য ঘিরে কংগ্রেসের অস্বস্তিতে আহ্লাদিত বিজেপি। মোদী সরকারের মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, “মোদী ভারতীয়ত্বের প্রতীক বলেই নির্বাচনে তাঁর জয়লাভ হয়েছে।” প্রশ্ন ওঠে, জনার্দনের মন্তব্য কি সনিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশিনী অভিযোগকে খুঁচিয়ে তুলল? সীতারমন বলেন, “সেটা কংগ্রেসকেই আত্মসমীক্ষা করে বের করতে হবে।” কংগ্রেস থেকে অনেকেই এখন বিজেপিতে যেতে আগ্রহী। দ্বিবেদী সেই দলে আছেন কিনা জানতে চাইলে সীতারমনের তাৎপর্যপূর্ণ জবাব, “উনি বিজেপিতে আসতে চাইলে স্বাগত।”