জি সি মূর্মু। কে কৈলাসনাথন। অম্রুতভাই পটেল। ভরত লাল। বিজয় নেহরা। দীনেশ বিস্ত।
আম জনতার কাছে সব ক’টিই অপরিচিত নাম। মিল একটাই। সকলেই ‘টিম মোদী’-র সদস্য। কেউ মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি। কেউ আবার শুধুই ব্যক্তিগত সহকারী। কেউ আবার শিল্পে চনমনে গুজরাত (ভাইব্র্যান্ট গুজরাত) গড়ার দায়িত্বে। কেউ বিজেপি এবং আরএসএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব সামলান। কেউ আবার গুজরাত তথা মোদীর হয়ে দিল্লিতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
গত এক দশক ধরে এঁরাই রয়েছেন মোদীর চারপাশে। আমলা-ব্যক্তিগত সহকারীদের একটাই দল কাজ করে চলেছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। মোদীও তাঁর এই নিজস্ব দলের উপর আস্থা রেখেছেন। তাঁরাও সেই আস্থার অমর্যাদা করেননি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এ বার সেই দলেরই একটা বড় অংশ উঠে আসবে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। এত দিন যাঁরা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন, তাঁদেরই এ বার রাইসিনা হিলসের সাউথ ব্লকে কিংবা সাত নম্বর রেস কোর্স রোডে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাবে।
তবে সকলে নয়। কারণ, মোদীর কাছে গুজরাতের গুরুত্বও কমছে না। তাই তাঁর বিশ্বাসভাজন কয়েক জন কাজ করতে থাকবেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেনের সঙ্গেই। প্রধানমন্ত্রী ও নতুন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে তাঁরাই যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবেন। মোদীর ঘনিষ্ঠ এক সহকারীর কথায়, “নরেন্দ্রভাই কাজের দক্ষতা, সততা ও নিরপেক্ষ মনোভাবকে মূল্য দেন। সেই কারণেই গত ১২ বছর ধরে একই অফিসারদের একটি দল আমদাবাদের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে কাজ করে চলেছে।”
বিজেপির নেতারা মনে করছেন, মোদী-জমানায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের চেহারাটাই পাল্টে যাবে। জাতীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাতে। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয় রাখার দায়িত্ব থাকবে নির্দিষ্ট কয়েক জন আধিকারিকের উপরে। কোনও রাজ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নিতে হলে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডাকা হবে সংশ্লিষ্ট মুখ্যমন্ত্রীকেও। তাই প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আমলাদের দায়িত্ব এ বার অনেকটাই বেড়ে যাবে।
মোদীর জমানায় প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি কে হবেন, তা নিয়ে এখনও জল্পনা চলছে। প্রাক্তন কৃষিসচিব পি কে মিশ্র দৌড়ে এগিয়ে। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মোদীর সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। নাম রয়েছে প্রাক্তন অর্থসচিব অশোক চাওলা, বাজপেয়ী জমানায় ক্যাবিনেট সচিব প্রভাত কুমারের নামও।
গুজরাতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের প্রধানসচিব ছিলেন জি সি মূর্মু। গোধরা-কাণ্ড থেকে শুরু করে মোদীর বিরুদ্ধে যে সব মামলা চলেছে, সে বিষয়ে আইনি রণকৌশল তৈরির কাজটি তিনিই দেখছেন। অতিরিক্ত প্রধানসচিব হিসেবে কে কৈলাসনাথন দক্ষিণ ভারতের নেতাদের সঙ্গে মোদীর যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজটি করে এসেছেন। সূত্রের খবর, কৈলাসনাথন আমদাবাদেই থেকে এখন থেকে মোদীর সঙ্গে আনন্দীবেনের যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব সামলাবেন। আর এক অতিরিক্ত সচিব এ কে শর্মা অবশ্য দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেই আসছেন বলে সূত্রের খবর। তিনি এত দিন ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ শিল্প সম্মেলনের দায়িত্বে ছিলেন। আমদাবাদে এটা এখন একটা প্রচলিত কথা যে, মোদীর মন সব থেকে ভাল পড়তে পারেন এই মানুষটি। ২০০১ থেকেই তিনি মোদীর সঙ্গে টানা কাজ করে চলেছেন। ২০১০ থেকে দিল্লিতে গুজরাতের রেসিডেন্ট কমিশনার হিসেবে কাজ করছেন ভরত লাল। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মোদীর যোগাযোগের মাধ্যমও তিনি। তিন বছর আগে মোদীর চিন সফর নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। তারও দায়িত্বে ছিলেন ভরত। তিনিও এ বার গুজরাত ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারেন।
নির্বাচনের আগে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসেবে তুলে ধরার জন্য প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। বছর পঁয়ত্রিশের এই যুবক রাষ্ট্রপুঞ্জের হয়ে আফ্রিকায় কাজ করতেন। দেশে ফিরে মোদীর প্রচারের দায়িত্ব নেন। তরুণ প্রজন্মের সামনে মোদীকে তুলে ধরার যাবতীয় পরিকল্পনা এই প্রশান্তরই মস্তিষ্কপ্রসূত। মোদীর ফেসবুক, টুইটার অ্যাকাউন্ট সামলাতেন হীরেন জোশী। তাঁরও প্রধানমন্ত্রীর জনসংযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে বলেই বিজেপি নেতারা মনে করছেন।