জনাদেশ ’১৪

ভাগের রাজ্য চন্দ্রদের ভাগে, কংগ্রেসের হাতে পেনসিল

অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে ভাগ করল তারা। কিন্তু তার লাভ তুলতে পারল না ভোটের ময়দানে। কী লোকসভা, কী বিধানসভা দুই নির্বাচনেই অন্ধ্রপ্রদেশে ভরাডুবি হল কংগ্রেসের। অখণ্ড অন্ধ্রে লোকসভা আসন ৪২টি। সেখান থেকে কংগ্রেসের ঝুলিতে আসছে মাত্র ২টি আসন। গত লোকসভায় যেখানে সংখ্যাটা ছিল ৩৩। আগামী ২ জুন থেকে এই রাজ্য ভেঙে গঠিত হবে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য ও নতুন অন্ধ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে ভাগ করল তারা। কিন্তু তার লাভ তুলতে পারল না ভোটের ময়দানে। কী লোকসভা, কী বিধানসভা দুই নির্বাচনেই অন্ধ্রপ্রদেশে ভরাডুবি হল কংগ্রেসের।

Advertisement

অখণ্ড অন্ধ্রে লোকসভা আসন ৪২টি। সেখান থেকে কংগ্রেসের ঝুলিতে আসছে মাত্র ২টি আসন। গত লোকসভায় যেখানে সংখ্যাটা ছিল ৩৩। আগামী ২ জুন থেকে এই রাজ্য ভেঙে গঠিত হবে পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য ও নতুন অন্ধ্র। এর মধ্যে তেলঙ্গানায় নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়তে চলেছেন কে চন্দ্রশেখর রাও। বাকি অন্ধ্রে চন্দ্রবাবু নায়ডু। দ্বিতীয় জন ভোটের আগেই গাঁটছড়া বেঁধেছেন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। আর প্রথম জন কংগ্রেসে মিশে যাব বলেও এখন মোদীর সহযোগিতা চাইছেন প্রকাশ্যেই।

অন্ধ্র বিধানসভা রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার পরেও দলের ভিতরে-বাইরে বহু বিরোধিতা সামলে তেলঙ্গানা ভাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সে সময় তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস)-র নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও আশ্বাস দিয়েছিলেন পৃথক রাজ্য হলে তাঁর দল কংগ্রেসে মিশে যাবে। কিন্তু আলাদা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ার পরে কংগ্রেসে মেশা তো দূর, তাদের সঙ্গে ভোটের গাঁটছড়া বাঁধতেও রাজি হননি তিনি। এ-হেন টিআরএস তেলঙ্গানা অংশের ১৭টি লোকসভা আসনের ১১টি দখল করেছে। কংগ্রেস জোটাতে পেরেছে ২টি।

Advertisement

এখনও ভাগ না হওয়া অন্ধ্র বিধানসভায় আসন মোট ২৯৪টি। তার মধ্যে তেলঙ্গানা অংশে রয়েছে ১১৯টি কেন্দ্র। টিআরএস একাই দখল করেছে তার ৬২টি। অর্থাৎ নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়েই নতুন তেলঙ্গানা রাজ্যের প্রথম সরকার গড়তে চলেছেন চন্দ্রশেখর রাও। কাল তাঁদের বিধায়করা বৈঠকে বসছেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে রাওকে পরিষদীয় নেতা তথা মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য নির্বাচিত করতে। তেলঙ্গানা বিধানসভায় কংগ্রেসের বিধায়ক থাকছেন ২১ জন। মুসলিম সংগঠন এমআইএম পেয়েছে ৬টি। সরকারে আসার পথ খুলতেই রাও তড়িঘড়ি আজ জানিয়ে দেন রাজ্যের উন্নতির জন্য তিনি নরেন্দ্র মোদীর সহযোগিতা চান। অন্য দিকে তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু বাকি অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন মোদী হাওয়ায় ভর করেই। টিডিপি জিতছে ১৬টি লোকসভা আসনে। বাকি অন্ধ্রের ১৭৫টি বিধানসভা আসনের মধ্যে জেতা ও গণনায় এগিয়ে থাকার হিসেব ধরে টিডিপি-র দখলে আসছে ১১৫টি আসন। বিজেপি-ও জিততে চলেছে ১২টিতে।

ফলে তেলঙ্গানা ও বাকি অন্ধ্র দুই রাজ্যেই কংগ্রেসের অস্তিত্ব কার্যত মুছে যাওয়ার জোগাড়। কিন্তু এমনটা কেন হল? কংগ্রেসের নেতারাই মানছেন তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এসেছে টিআরএস। রাজ্যের এই অংশে কংগ্রেসের মুখ হয়ে উঠতে পারেন, তেমন কোনও নেতাই নেই। তার উপরে নিজের ভাইপো টি হরিশ রাওয়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আগ্রহী চন্দ্রশেখরকে পাশে না পাওয়াতেও তেলঙ্গানায় হতাশ হতে হয়েছে কংগ্রেসকে।

বাকি অন্ধ্রকে নিয়ে অবশ্য আদৌ কোনও আশা ছিল না কংগ্রেসের। কারণ রাজ্য ভাগের রোষ যে তাদের বিরুদ্ধে যাবে সেটা স্পষ্টই জানা ছিল। শেষ মুহূর্তে কিরণকুমার রেড্ডিকে দিয়ে বিদ্রোহ করিয়ে কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ভোটারদের টানার একটা কৌশল ভাবা হয়েছিল। সেটা হলে পরে আবার ‘বিদ্রোহী’ কিরণকে কংগ্রেস ফিরিয়ে নিয়ে ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা হত। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আসা জগন্মোহন রেড্ডির দলের উপরেও ভরসা রাখেননি সীমান্ধ্রের মানুষ।

তাঁর বাবা কংগ্রেসের প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস আর রেড্ডির সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব থাকায় জগন কিছু আসন পেলেও, সীমান্ধ্রের মানুষ পুরো আস্থা রাখতে পারেননি তাঁর উপরে। দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর যোগ ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা না থাকার কারণেও এটা ঘটেছে।

সে তুলনায় চন্দ্রবাবু নায়ডুর যথেষ্ট প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। চন্দ্রবাবুর উন্নয়নের ছোঁয়ায় হায়দরাবাদ হয়ে উঠেছিল সাইবারাবাদ। আর মোদীর প্রচারের মন্ত্রও ছিল উন্নয়ন। ফলে মোদী-চন্দ্রবাবুর জুটিতে আস্থা রেখেছে বাকি অন্ধ্র। এখানেও কংগ্রেসের কার্যত কিছু করার ছিল না।

ফলে অনেক ঝঞ্ঝাট সামলেও রাজ্য ভেঙে দু’ভাগ করার রাজনৈতিক সুফল তাদের ঝুলিতে এল না কোনও দিক থেকেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement