বলিউড চুপ, প্রীতিও চান না কারও সহানুভূতি

‘দিল সে’ থেকে ‘সংঘর্ষ’। প্রীতি জিন্টার সঙ্গে শিল্পপতি নেস ওয়াদিয়ার সম্পর্কের গতিপথ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফিরে আসছে প্রীতিরই দুই সুপারহিট ছবির শিরোনাম। শ্লীলতাহানি, হেনস্থা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে এফআইআর করেছেন প্রীতি। পাঁচ বছরের সম্পর্ক ভাঙার পর মাঝখানে রয়ে গিয়েছিল শুধু কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাব।

Advertisement

প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৪ ০৩:৩৪
Share:

তখন যুগলে। নেস-প্রীতি। —ফাইল চিত্র

‘দিল সে’ থেকে ‘সংঘর্ষ’।

Advertisement

প্রীতি জিন্টার সঙ্গে শিল্পপতি নেস ওয়াদিয়ার সম্পর্কের গতিপথ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফিরে আসছে প্রীতিরই দুই সুপারহিট ছবির শিরোনাম।

শ্লীলতাহানি, হেনস্থা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে প্রাক্তন প্রেমিকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার রাতে এফআইআর করেছেন প্রীতি। পাঁচ বছরের সম্পর্ক ভাঙার পর মাঝখানে রয়ে গিয়েছিল শুধু কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাব। ইদানীং দু’জনের জীবনেই অন্য মানুষের আগমনের কথা শোনা যাচ্ছিল। আপাতত সবই ঢাকা পড়েছে দেশ জোড়া তোলপাড়ে। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ টুঁ শব্দটি করছেন না। কথায় কথায় টুইটার ও ফেসবুকে আপডেট দিয়ে চলা বলিউড থেকে আইপিএলের তাবড় তারকা সবার মুখে কুলুপ।

Advertisement

মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভ থানায় জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে প্রীতি দাবি করেছেন, গত ৩০ মে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তাঁর শ্লীলতাহানি করেন নেস। সে দিন ছিল চেন্নাই-পঞ্জাব ম্যাচ (এবং নেস-এর জন্মদিন)। প্রীতি জানিয়েছেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর কাজের কথা ছাড়া নেস-এর সঙ্গে তাঁর বাক্যালাপ হতো না। কাজ নিয়েই দু’এক বার কথা কাটাকাটি হয়েছে। এবং নেস সেই সময়েই পরিবার ও বন্ধুদের সামনেই আপত্তিকর ভাষায় তাঁকে আক্রমণ করেছেন। নিজের রাজনৈতিক যোগাযোগের কথা বলে ভয়ও দেখিয়েছেন। প্রীতির কথায়, “গত ৩০ মে ওয়াংখেড়েতে ম্যাচ চলাকালীন নেস আমাকে বেপাত্তা করে দেবে বলে ভয় দেখায়। ওই ঘটনার পর আমি প্রাণহানির আশঙ্কা করছি।”

মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়া জানিয়েছেন, তাঁরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে নেস এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, তিনি ‘স্তম্ভিত’। সমস্ত অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে তাঁর দাবি।

প্রীতি আপাতত বিদেশে রয়েছেন বলে তাঁর মুখপাত্র জানিয়েছেন। তবে বিবৃতি দিয়ে এবং ফেসবুকে প্রীতি আর্জি জানিয়েছেন, যেন এই ঘটনাকে টিভি সোপ-এর পর্যায়ে নামিয়ে আনা না হয়। যা ঘটেছে, শুধু তাতেই যেন বিষয়টি সীমাবদ্ধ থাকে।

কারও কারও মতে, তরুণ তেজপাল কাণ্ডের পর সেলেব্রিটি মহলে এত বড় কেলেঙ্কারি আর ঘটেনি (অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত তেজপাল আপাতত দিল্লিতে)। যদিও সম্প্রতি ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হন বলিউডের উঠতি গায়ক অঙ্কিত তিওয়ারি। তারও আগে পরিচালক মধুর ভান্ডারকরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন আর এক প্রীতি অভিনেত্রী প্রীতি জৈন। পরিচালক মহেশ ভট্ট, অশোক পণ্ডিতদের মতো প্রীতিও সেই হাতে গোনা কয়েক জনের অন্যতম, যাঁরা বিষয়টা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলছেন।

মধুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা সুপ্রিম কোর্টে ওঠার পর অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন প্রীতি জৈন। সেই প্রসঙ্গে বলেছেন, “৮ বছর ধরে লড়েছিলাম। কিন্তু আমার হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হল, বিয়ে আর মামলার মধ্যে একটাকে বেছে নিতে। আমি সমঝোতা করলাম। আশা করি সেটা প্রীতিকে করতে হবে না।”

পুরুষশাসিত সমাজে নির্যাতিতার কোনও সম্মান নেই আক্ষেপ করেছেন প্রীতি জৈন। প্রসঙ্গত, প্রীতির ‘দিল চাহতা হ্যায়’ ছবির পরিচালক ফারহান আখতার সম্প্রতি ‘মদর্’ (মেন এগেনস্ট রেপ অ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন) নামে একটি প্রচার চালাচ্ছিলেন। আপাতত তাঁর মুখে ফুটবল ছাড়া আর কিছু নেই। প্রীতির প্রথম ছবির নায়ক শাহরুখ খানের টুইটারেও শুধুই বিশ্বকাপ। কর্ণ জোহর ব্যস্ত নতুন ছবির প্রচারে। প্রীতি নিয়ে সবাই চুপ। যদিও বলিউডে গুঞ্জন চলেছে অহোরাত্র। যেমন, সে দিন নাকি নেস-এর মায়ের গ্যালারিতে আসন পেতে দেরি হওয়া নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। দু’জনের প্রেমপর্বে মায়ের গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল বলে শোনা যায়। ঝগড়ার সময়ে নেস নাকি প্রীতির হাত ধরে এমন টেনেছিলেন যে, প্রীতির ভালই চোট লাগে। প্রীতি নাকি কিঙ্গস ইলেভেনের মনোবল অটুট রাখতেই টুর্নামেন্ট চলাকালীন মুখ খোলেননি।

অনেকে এমনও বলছেন, কিঙ্গস ইলেভেনে নিজের শেয়ার বাড়ানোর জন্যই নাকি নেস-কে ব্ল্যাকমেল করছেন প্রীতি! এমনকী অতীতে তিনি কী কী আইনি ঝঞ্ঝাটে জড়িয়েছেন, উঠে আসছে সেই সব প্রসঙ্গও। কখনও পরিচালক আব্বাস টায়ারওয়ালা-কে প্রীতির দেওয়া চেক বাউন্স করার অভিযোগে মামলা, কখনও পরিচালক কমল আমরোহি-র পরিবারকে দু’কোটি টাকা ধার দেওয়া নিয়ে মামলা, কখনও আবার প্রযোজক ভরত শাহের সঙ্গে ছোটা শাকিলের যোগ নিয়ে সেই বিখ্যাত মামলা। আদালতে একমাত্র প্রীতিই নিজের বক্তব্য থেকে সরে আসেননি। তৎকালীন এসিপি বলেছিলেন, “পুরুষ বলতে যদি কেউ থাকে, সেটা প্রীতিই।”

কেন চুপ বলিউড? আব্বাস টায়ারওয়ালা যেমন এসএমএসে লিখলেন, “বিচারাধীন বিষয়। কিছু বললেই লোকে বলবে প্রচার চাইছি।” মহেশ ভট্টের কথায়, “দু’জনেই খুব উঁচু মহলের মানুষ। তাই কেউ কিছু বলছে না। তবে এই সংযমটা তদন্তের পক্ষে ভাল। আমি চাই প্রীতি সুবিচার পান। তবে এটাও চাই না, তড়িঘড়ি নেস-কে গ্রেফতার করা হোক। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মনে হয়, একটা রূপকথার প্রেম বদলে গেল ঘেন্নায়।” অশোক পণ্ডিতের মতে, অনেকের স্বার্থ জড়িত বলেই ইন্ডাস্ট্রি চুপ। তবে কাল যদি প্রীতি মামলা তুলে নিতে চান, তখন কোর্ট কী বলবে প্রশ্ন তাঁর।

ফেসবুকে অবশ্য প্রীতি বলেছেন “আমাকে অনেক পরিশ্রম করে নিজের এই জায়গাটা তৈরি করতে হয়েছে। অতীতে যখন প্রকাশ্যে অপমানিত হয়েছি, কেউ কিছু বলেনি। কারও সহানুভূতি আমি চাই না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement