এক জন বলছেন, হিটলারের মতো আচরণ। অন্য জন বলছেন, আপনি বুলডোজার চালাচ্ছেন। বিমায় বিদেশি লগ্নি আটকাতে বিজেপির বিরুদ্ধে এ ভাবেই একজোট হয়ে লড়ছে সিপিএম ও তৃণমূল।
বিমা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দিতে চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই বিল পাশ করাতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার বদ্ধপরিকর। লোকসভায় বিল পাশ হলেও রাজ্যসভায় বাধা পেয়ে সেই বিল এখন সিলেক্ট কমিটিতে। কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপির চন্দন মিত্র চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট জমা দিতে, যাতে তার পর কেন্দ্রের হাতে যথেষ্ট সময় থাকে। তাই সোমবারের মধ্যেই রিপোর্ট চূড়ান্ত করে ফেলতে চাইছেন চন্দন। কিন্তু তা করতে গিয়েই তাঁকে তৃণমূল ও সিপিএমের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। দু’দলেরই ওই ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোয় আপত্তি রয়েছে। সিপিএমের পি রাজীবের অভিযোগ, চেয়ারম্যান হিটলারের মতো আচরণ করছেন। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য, চেয়ারম্যান বুলডোজার চালিয়ে রিপোর্ট পাশ করাতে চাইছেন। গত কাল সিলেক্ট কমিটির বৈঠকে এমন হট্টগোল হয় যে, সংসদের আধিকারিকরা ছুটে আসেন।
কী হয়েছিল বৈঠকে? বুধবার সিলেক্ট কমিটিতে আলোচনার পরে চন্দন জানান, শুক্রবার রিপোর্টের খসড়া সদস্যদের মধ্যে বিলি করা হবে। সোমবার চূড়ান্ত বৈঠক হবে। অনেকেই আপত্তি তোলেন, শুক্রবার খসড়া রিপোর্ট পাওয়ার পরে তা পড়তে সময় লাগবে। কাজেই সোমবারের বদলে মঙ্গলবার বৈঠক হোক। কিন্তু চন্দন তা মানতে না চাওয়ায় সিপিএম ও তৃণমূলের সদস্যরা তাঁকে আক্রমণ করেন। মুখ খোলে বিজেপি-ও।
সিলেক্ট কমিটির ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জনই বিমা ক্ষেত্রে ৪৯% পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়ার পক্ষে। বিজেপির তিন জন ছাড়া বাকিরা হলেন কংগ্রেসের তিন জন, শিরোমণি অকালি দলের এক জন এবং এক জন নির্দল। তার পরেও বিজু জনতা দল ও এডিএমকে-র দু’জন বিলের পক্ষেই মত দেবেন বলে ইঙ্গিত। কংগ্রেসের বক্তব্য ছিল বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ছাড়পত্র দেওয়া হোক। কিন্তু বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলিকে লগ্নির অনুমোদন দেওয়া যাবে না। কারণ, ওই সংস্থাগুলি লাভ করেই টাকা তুলে নেবে। দীর্ঘমেয়াদে লগ্নি করবে না। সিলেক্ট কমিটি কংগ্রেসের এই বক্তব্য মেনে নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পরের ধাপে মোদী সরকারও কংগ্রেসের আপত্তি মেনে নিলে বিমা বিল সমর্থন করতে তাদের আপত্তি থাকবে না।
সিপিএম ও তৃণমূলের প্রশ্ন, সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পাওয়ার পরেও সিলেক্ট কমিটিতে কেন অন্যদের মতামত ধামাচাপা দিয়ে রিপোর্ট পাশ করানোর চেষ্টা হচ্ছে? দু’দলের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা রিপোর্টে নিজেদের আপত্তি জানিয়ে পৃথক মতামত দেবেন। কী ভাবে সিলেক্ট কমিটিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না মেনে রিপোর্ট পাশ করানো হয়েছে, তা নিয়ে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছেও অভিযোগ জানাবেন।
বিরোধীদের বক্তব্য, সিলেক্ট কমিটি বিমা ক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই মত শুনেছে। এর মধ্যে সরকারি বিমা সংস্থার কর্তারাও রয়েছেন। অথচ অনেকে বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে মত দেওয়া সত্ত্বেও কমিটির রিপোর্টে সেগুলি ইচ্ছাকৃত ভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে। সিপিএম মতাদর্শগত ভাবেই বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে। তৃণমূলের যুক্তি, কেন্দ্র আশা করছে বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দিলে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা আসবে। অথচ ১৪ বছর আগে ২৬% বিদেশি লগ্নির অনুমোদন দেওয়া হলেও এ-পর্যন্ত ৭৮১৮ কোটির বিদেশি লগ্নি এসেছে। এলআইসি গত ৮ বছরে সরকারকে ১৪০০ কোটির ডিভিডেন্ড দিয়েছে। বিদেশি লগ্নি এলেও বিমা সংস্থা প্রত্যন্ত এলাকায় পৌঁছতে ব্যর্থ বলে তৃণমূলের অভিযোগ। জট তাই রয়েই যাচ্ছে।