বিহারের পর এ বার উত্তরপ্রদেশ। লোকসভা ভোট-ভরাডুবির দায় এড়াতে পারছেন না কোণঠাসা মুখ্যমন্ত্রীরা। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, দলের অন্দরে এ বার তোপের মুখে পড়েছেন উত্তরপ্রদেশের তরুণ মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ। বিষয়টি নিয়ে তাঁর বাবা তথা সপা নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের সঙ্গে কথা হয়েছে অখিলেশের। হতাশ অখিলেশ এ কথাও তাঁকে জানিয়েছেন, দলীয় স্বার্থে যদি মুখ্যমন্ত্রিত্বের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়, তবে সে জন্যও প্রস্তুত রয়েছেন তিনি।
মায়াবতীকে হটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরদিন থেকেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে একের পর এক গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ঘটনা। অনেক আশা জাগিয়ে ক্ষমতায় বসার পর হিন্দু এবং মুসলিম দু’তরফেরই অপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন অখিলেশ। তাই গত কয়েক মাসে মোদী যখন ক্রমশ প্রচারের স্বর চড়িয়েছেন, আসরে নামতে হয়েছিল মুলায়মকে। শুরু হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণের খেলা। সপা নেতৃত্ব শেষ মুহূর্তে গোষ্ঠী সংঘর্ষে পীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন রকম ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছিলেন। দুর্গত শিবিরগুলিতে ন্যূনতম খাদ্য ও অন্যান্য পরিষেবা পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছিলেন। পাশাপাশি, সপা নেতা আজম খানও মোদীর হিন্দুত্বকে আক্রমণ করে মেরুকরণের রাজনীতিকে উস্কে দিয়েছিলেন।
আজ যখন মুলায়মের দল কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে রাজ্যে, তখন এই আজম খানরাই অখিলেশের মুন্ডপাত করছেন। দলের বেশ কিছু বিধায়ক একযোগে বিজেপি-র দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন বলেই সপা নেতৃত্বের কাছে খবর। বিজেপিও পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সরকার ভাঙার চেষ্টা করবে, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না মুলায়ম শিবির।
পরাজয়ের পর মুলায়ম এবং অখিলেশ অবশ্য সংবাদমাধ্যম কেন, দলীয় কর্মীদের সামনেও আসছেন না। দু’জনেই লখনউয়ে বন্ধ দরজার ভিতরে বৈঠক করেছেন গোটা দিন। সপা অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে দেওয়া হয়েছে কারামন্ত্রী রাজেন্দ্র চৌধুরিকে। পাশাপাশি মুলায়মের ভাই তথা সেচমন্ত্রী শিবপাল যাদবও যতটা পারছেন ভোকাল টনিক দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছেন। বলছেন, “ আমরা ৯১ সালে ৪টি আসন পেয়েছিলাম, কিন্তু ৯৩ সালে সরকার গড়েছি। রাজনীতিতে এ সব লেগেই থাকে। এ বারের ফলাফলে আমরা নিরাশ তো বটেই, কিন্তু পুরোপুরি হতাশ নই।” তবে মোদীকে ঠেকানোর প্রশ্নে অখিলেশের দুর্বল নেতৃত্ব এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে এক ছাতার নীচে নিয়ে না-আসতে পারার জন্য দলের ভিতরে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘু ভোটারদের সামনে এ বার অনেকগুলি (কংগ্রেস, আপ, সপা, বিএসপি) বাছাই ছিল। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও বিশেষ ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের মন পেতে চেষ্টা করা হয়নি অখিলেশের তরফ থেকে। ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই পদত্যাগ নিয়ে কথা বলেছেন অখিলেশ তাঁর বাবার সঙ্গে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।