একের পর এক সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতাদের মুখে হিন্দুত্বের চড়া সুর। আর তাতে ব্যাহত হচ্ছে সরকারের কাজ। সনিয়া গাঁধীর মতো কংগ্রেসের শীর্ষ নেত্রীও আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সংসদে বেনজির ভাবে স্লোগান দিচ্ছেন প্রতিবাদে। এই অবস্থায় এই নেতাদের সামাল দিতে সঙ্ঘকেই পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির কুকথা নিয়ে হইচইয়ে টানা এক সপ্তাহ রাজ্যসভার কাজ এগোয়নি। এর পর এলেন সাক্ষী মহারাজ- মহাত্মা গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে ‘দেশপ্রেমিক’ অ্যাখ্যা দিয়ে। রেশ কাটতে না কাটতেই সাংবিধানিক পদে বসে থাকা উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল রাম নাইক সংবাদমাধ্যমের সামনে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে সওয়াল করলেন। মোদী মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সদস্য বলেন, “সঙ্ঘ মনে করতে পারে, নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর দেশে হিন্দুত্বের প্রসারে তাঁদের সুবিধা হবে। কিন্তু সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ নেতারা একের পর এক লাগামছাড়া মন্তব্য করে সরকারের কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন।” তাঁর মতে, সংসদে এখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিল নিয়ে আসার ভাবনা রয়েছে, অথচ এমন সব মন্তব্যে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে যাচ্ছে। বিতর্ক সামলাতে প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। ফলে মন্ত্রীটির মন্তব্য, “এই সব নেতার মুখে কুলুপ আটতে সঙ্ঘকেই দায়িত্ব নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সেই বার্তাই দিয়েছেন।”
সরকার পক্ষের বক্তব্য, আর্থিক সংস্কারের বিলগুলি নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে সমঝোতা হচ্ছে। তাঁরা হাত মিলিয়ে সরকারের প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দিচ্ছেন। শেষ কবে সংসদে মুখ খুলেছিলেন সনিয়া গাঁধী তা হয়তো তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারাও মনে করতে পারবেন না। কিন্তু আজ, এই প্রথম সংসদে দাঁড়িয়ে সরকার বিরোধী স্লোগান তুললেন সনিয়া। ওয়েলে নামেননি ঠিকই, তবে নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৃশ্যত আক্রমণাত্মক কংগ্রেস সভানেত্রী দলের সাংসদদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এমনকি “গডসে সরকার হায় হায়” বলে স্লোগানও তোলেন তিনি।
এতে যদিও মায়ের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাহুল অনেকটাই ফিকে পড়ে যান। স্বয়ং সনিয়া বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়ায় কংগ্রেস সাংসদরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। তার জেরে লোকসভা মুলতবি হয়ে যায়। পরে অধিবেশন আবার শুরু হলে সাক্ষী মহারাজ ইনিয়ে বিনিয়ে তাঁর কুকথা ফেরত নেন। কিন্তু তাতেও সন্তুষ্ট করা যায়নি সনিয়াকে। আঙুল উঁচিয়ে তিনি বলেন, স্পষ্ট ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে বিজেপি সাংসদকে। শেষ পর্যন্ত স্পিকারের নির্দেশে মন্তব্য ‘ফেরত’ নেন সাক্ষী মহারাজ।
এর আগে যদিও সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু সাক্ষী মহারাজকে ডেকে বেজায় ধমকেছেন। তাঁকে দুঃখপ্রকাশ করতে বলা হয়। কিন্তু সরকারের এক মন্ত্রীর বক্তব্য, “এ ভাবে কতজনকে সামাল দেওয়া যাবে? আমরা একটি তালিকা তৈরি করে আরএসএসের হাতে দিচ্ছি। তালিকায় তাঁদেরই নাম থাকবে, যাঁদের মধ্যে এধরণের মন্তব্য করার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।” তাঁর মতে, এ সবের ধাক্কায় বিলগুলি যদি আটকে যায়, খেসারত সরকারকেই দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে লোকসভা বা রাজ্যসভায় পাশ না হলে যৌথ অধিবেশন ডাকতে হবে। সে দিকে সরকারকে ঠেলে দেওয়ার কোনও অর্থ নেই।
সন্দেহ নেই, সংসদে সরকারের কাজকর্ম রুখে দিয়ে অসুবিধা সৃষ্টি করতে কংগ্রেস এখন সুযোগ খুঁজছে। সিলেক্ট কমিটিতে বিমা বিলে সায় দিয়েছে কংগ্রেস। অথচ দলের নেতারা এখন ছুতো খুঁজছেন যাতে বিল নিয়ে আলোচনার দিন সভার কাজ পণ্ড করে দেওয়া যায়। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা আজ বলেন, “মুখে উন্নয়নের কথা বললেও, বিজেপি যে বিভাজনের রাজনীতির খেলা খেলছে তা সাক্ষী মহারাজ বা সাধ্বী নিরঞ্জনদের কথায় প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে।”