বিজেপি-র পাল থেকে হাওয়া কাড়তেই কি নির্ধারিত সময়ের সাত মাস আগে অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করল সরকার? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে সে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে।
রাজ্য সরকারের যুক্তি, লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই বিধানসভার ভোট হলে, সরকারি কোষাগারের অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। তা মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে কেন্দ্রে পালাবদল হলে, বিধানসভা ভোটেও তার প্রতিফলন হওয়ার আশঙ্কা করছে শাসক দল। সে কারণেই তড়িঘড়ি বিধানসভা ভেঙে ভোটে যাওয়ার ছক কষা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে অরুণাচলের বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ রাজ্যপাল নির্ভয় শর্মার কাছে পাঠানো হয়। তা মেনে বিধানসভা ভেঙে দেন রাজ্যপাল। এরপরই, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনার এইচ এস ব্রহ্মর সঙ্গে দেখা করেছেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ভি এস সম্পতের সঙ্গেও তাঁর বৈঠকের কথা। রাজ্য সরকার সূত্রে খবর, ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই বিধানসভা ভোটের দিন চূড়ান্ত করা হতে পারে।
শাসক দল কংগ্রেসের অন্দরমহলে অন্য গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। দলীয় নেতাদের একাংশের দাবি, ঘরোয়া কোন্দলে নাজেহাল রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি। জানুয়ারি মাস থেকেই তিনি বিধানসভা ভোট এগিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন। ফেব্রুয়ারির শেষে দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমতি পেয়ে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে টুকি দেরি করেননি।
এ বছর অক্টোবরে অরুণাচলের বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু, বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
প্রদেশ কংগ্রেসের একাংশ নেতার মতে, আচমকা ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দীর্ঘ দিন পরিকল্পনার পরই তা করা হয়েছে। ৬০ সদস্যের বিধানসভায় কংগ্রেসের ৫৫ জন বিধায়ক রয়েছেন। লোকসভায় রাজ্যের দু’টি আসনও বর্তমানে কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু, লোকসভা ভোটে পরাজয়ের আশঙ্কা দানা বেঁধেছে দলের অন্দরমহলে। মুখ্যমন্ত্রী ও প্রদেশ কংগ্রেসের অনেক নেতাই মনে করছেন, লোকসভা ভোটে এনডিএ কেন্দ্রের ক্ষমতা দখল করলে, বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জয় কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। একে দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ, তার উপর দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার নেতিবাচক প্রভাবএ সবে বিরক্ত রাজ্যের মানুষ। দলের একাংশ নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কের ‘বিদ্রোহী’ মনোভাবও টুকিকে চিন্তায় ফেলেছে।
অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনে, রাজ্য মন্ত্রিসভায় ক্রমশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠা চাওনা মেইনকে দিন দশেক আগে সরিয়ে দেন টুকি। একই সঙ্গে সরানো হয় আটুম ওয়েলি ও জারকার গামলিনকেও। এই সিদ্ধান্তের পর মেইন প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে, এখনও কমপক্ষে ৩৮ জন বিধায়ক টুকির পক্ষেই রয়েছেন। সেই সঙ্গে সনিয়ার সমর্থনও পেয়েছেন তিনি। তাই, পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূল থাকতে থাকতেই বিধানসভার লড়াইতে নামতে চেয়েছিলেন টুকি।
রাজ্য সরকারের তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, অরুণাচলে লোকসভা ভোট করাতে খরচ হবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেলে অনেক সরকারি অর্থ বেঁচে যাবে। রাজ্যের মুখ্যসচিব রমেশ নেগির বক্তব্য, “রাজ্যবাসীর স্বার্থে এবং সরকারি টাকা বাঁচাতেই বিধানসভা ভেঙে ভোটের সুপারিশ করা হয়েছে। বছরে দু’বার ভোট হলে, প্রায় ছ’মাস ধরে নির্বাচন আচরণ-বিধি মানতে গিয়ে অনেক উন্নয়নমূলক কাজও থমকে যাবে।
বিরোধী বিজেপি ও পিপিএ বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে সমালোচনায় সরব হয়েছে। রাজ্য বিজেপির সভাপতি টাই টাগাকের মতে, “পাসিঘাটে নরেন্দ্র মোদীর সভায় জনসমাগম দেখে আতঙ্কিত টুকি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেও জেরবার রয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট না-করানোর আর্জি নিয়ে আমরা রাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন ও রাজ্যপালের কাছে যাব।”