বিকল্প নেই সংগঠনের, মত মানিকের কলমে

লোকসভা ভোটে বেনজির বিপর্যয়ে সারা দেশেই অনেকটা কোণঠাসা হয়েছে বামেরা। পশ্চিমবঙ্গের মতো বহু দিনের বাম ঘাঁটিতে গত কয়েক বছরে সব নির্বাচনেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক ত্রুটি সারিয়ে তোলার পক্ষেই জোরদার সওয়াল করলেন দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৪
Share:

লোকসভা ভোটে বেনজির বিপর্যয়ে সারা দেশেই অনেকটা কোণঠাসা হয়েছে বামেরা। পশ্চিমবঙ্গের মতো বহু দিনের বাম ঘাঁটিতে গত কয়েক বছরে সব নির্বাচনেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত। এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সাংগঠনিক ত্রুটি সারিয়ে তোলার পক্ষেই জোরদার সওয়াল করলেন দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবুর মতে, দলের রাজনৈতিক লাইন সময়োপযোগী করে এবং সংগঠনকে সুবিন্যস্ত করেই সর্বভারতীয় রাজনীতিতে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখা সম্ভব। বঙ্গ সিপিএমের অন্যতম একটি মুখপত্রের পুজোসংখ্যায় বামেদের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এমন দাওয়াইয়ের কথাই বলেছেন তিনি।

Advertisement

আগামী অক্টোবর থেকেই শুরু হচ্ছে সিপিএমের সম্মেলন-পর্ব। স্থানীয় ও জেলা স্তরের সম্মেলন সেরে আগামী এপ্রিলে বিশাখাপত্তনমে বসবে পার্টি কংগ্রেস। তার আগে এ বারের পুজো মরসুমে দলের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার শারদীয়া সংখ্যাকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক রূপরেখা ঝালাইয়ের কাজেই ব্যবহার করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। নির্বাচনী বিপর্যয়ের প্রসঙ্গ টেনে পথ খোঁজার খোলামেলা চেষ্টা করেছেন মানিকবাবুও। লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে আসনসংখ্যা দিয়েই শুধু বামপন্থীদের প্রাসঙ্গকিতা নির্ধারিত হয় না বলে মত তাঁর। একই সঙ্গে লিখেছেন, ‘ধারাবাহিক ভাবে পরপর লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীদের ফল কেন ক্রমশ খারাপ হচ্ছে, তা কিন্তু আত্মসমীক্ষার দৃষ্টি নিয়ে বামপন্থীদেরই অনুসন্ধান করতে হবে। অনুসন্ধান করতে হবে কেন তরুণ ও যুব সমাজকে বামপন্থীরা তেমন ভাবে আকৃষ্ট করতে পারছে না। পারছে না বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্তদের কাছে টানতে’।

তরুণ ও যুবদের সঙ্গে বামেদের যোগ কমে আসা নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি সাংগঠনিক তৎপরতাকেই সঙ্কট কাটানোর অন্যতম পথ বলে মনে করছেন মানিকবাবু। ‘বামপন্থী শক্তিই ভবিষ্যৎ এবং এটাই সত্য’ শীর্ষক ওই নিবন্ধে তাঁর বক্তব্য, ‘রাজনৈতিক লাইনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে সংগঠন। সঠিক রাজনৈতিক লাইন ও স্লোগান নির্ধারণই শেষ কথা নয়। একে বাস্তবায়নের জন্য, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য, জনগণকে সাথে নিয়েই তা রূপায়ণের জন্য মজবুত ও সচল সংগঠনের কোনও বিকল্প নেই’। মানিকবাবু মেনে নিয়েছেন, এমন সংগঠন দেশের সর্বত্র গড়ে তোলার জায়গায় বামপন্থীরা নেই। কিন্তু যেখানে সম্ভাবনা আছে, সেখানে সংগঠনকে সাজানোর কথাই বলেছেন তিনি।

Advertisement

নির্বাচনী বিপর্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই সিপিএমকে এখন ধারাবাহিক ভাবে ভুগিয়ে চলেছে কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তার সমস্যা। খাতায়-কলমে দলের সদস্য অথচ কাজের সময়ে তাঁদের পাওয়া যাচ্ছে না, এমন লোকজনকে অনেক টালবাহানার পরে এ বারের সম্মেলনে একেবারেই ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্মেলন-পর্ব শুরুর মুখে সংগঠনের ‘দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা’র দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, দলে নতুন সদস্য নেওয়ার সময় সতর্ক থাকা এবং একেবারে নিচু তলায় শাখা কমিটির কাজের দিকে নজর রাখা জরুরি। সিপিএমে আসার পরে প্রথমে প্রার্থী সদস্য হয়ে সকলকেই যখন অন্তত এক বছর কাটাতে হয়, সেই সময়টায় নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সততা, সময়ানুবর্তিতা, পার্টির সিদ্ধান্ত পালনে তৎপরতা এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার দিকে নজর রাখার কথা বলেছেন বলেছেন তিনি। পাশাপাশিই সম্মেলন প্রক্রিয়ার প্রাক্কালে শ্রীদীপবাবুর প্রবন্ধে আহ্বান, ‘বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম এবং সমগ্র বামপন্থী আন্দোলনকে যে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তার জন্য প্রয়োজন আরও উন্নততর ও শক্তিশালী পার্টি সংগঠন। সেই লক্ষ্যে অগ্রসর হতে হলে চাই বেশি বেশি সক্ষম এবং যোগ্য শাখা সম্পাদক’।

মতাদর্শ, রাজনীতি, সংগ্রাম এবং অবশ্যই সংগঠন এই চার হাতিয়ারে সঙ্কট মোকাবিলার কথা উঠে এসেছে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের লেখনীতেও। আর দু’টি মুখপত্রের দুই পুজোসংখ্যায় জ্যোতি বসু ও হরেকৃষ্ণ কোঙারের শতবর্ষে তাঁদের জীবন থেকেই শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement