ভোটের মুখে ভারত-চিন যুদ্ধের তদন্ত রিপোর্ট ফাঁস হয়ে যাওয়ার সুযোগে নিজেদের ঘাড় থেকে ‘দেশদ্রোহী’-র তকমা ঝেড়ে ফেলতে চাইছে সিপিএম। গত কালই নিজের ওয়েবসাইটে ১৯৬২-র যুদ্ধ নিয়ে গোপন ব্রুকস-ভগত রিপোর্টের একাংশ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল। সাতের দশকে তাঁর বইয়ে ম্যাক্সওয়েল যে তত্ত্ব দিয়েছিলেন, রিপোর্টটিতেও সেটাই বলা আছে। বলা হয়েছে, আগ্রাসী নীতি বা ‘ফরওয়ার্ড পলিসি’ নিতে গিয়েই চিনা আক্রমণ ডেকে এনেছিলেন নেহরু। সিপিএম নেতৃত্ব এখন বলছেন, এতে চিন-যুদ্ধ নিয়ে তাঁদের সাবেক অবস্থানই ঠিক বলে প্রমাণ হল। অথচ সে সময় ওই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ উঠেছিল। বহু নেতাকে কারাবাসও করতে হয়েছিল।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসু বলছেন, “আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতাদের বিরুদ্ধে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তোলা হয়। এই রিপোর্ট পুরোপুরি প্রকাশিত হলে ইতিহাস তাঁদের এই কুৎসা থেকে মুক্তি দেবে।” সুতরাং এই রিপোর্টকে কেন্দ্র করে ভোটের বাজারে বিজেপি-র পাশাপাশি সিপিএমও রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুযোগ পাচ্ছে।
ঘটনাচক্রে ভারত-চিন যুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক থেকেই কমিউনিস্ট পার্টিতে বিভাজনের সূত্রপাত হয়েছিল। জ্যোতি বসু, ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ, পি সুন্দরাইয়াদের বক্তব্য ছিল, চিন আগ্রাসী হতে পারে না। নেহরু সরকারই চিনকে যুদ্ধে উস্কানি দিয়েছে। দলের আর একটি অংশ অবশ্য এর সঙ্গে সহমত ছিলেন না। এই অন্তর্বিরোধের জেরেই ১৯৬৪ সালে নতুন দল সিপিআইএমের আবির্ভাব।
পরবর্তী কালে প্রকাশ কারাটের মতো নেতারাও বহু বার দাবি করেছেন, পার্টির অবস্থানে কোনও ভুল ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ‘চিনের দালালে’র তকমা পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে পারেনি সিপিএম। এ বার ১৯৬২ সালের যুদ্ধের তদন্ত-রিপোর্ট প্রকাশ হয়ে গেলে তা সহজ হবে বলেই সিপিএম নেতাদের মত। গত কাল বিজেপি পুরো রিপোর্টটি প্রকাশ করার দাবি তুলেছে। সিপিএমও সেই দাবিই তুলছে। তবে তাঁদের অভিযোগ, “এখন বিজেপি নেহরুর আগ্রাসী নীতির নিন্দা করছে ঠিকই।
কিন্তু ইতিহাস বলছে, সে সময় জনসঙ্ঘ সেই আগ্রাসী নীতিকেই সমর্থন করেছিল।”