অভিযোগের নিশানা। রাহুল গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী অসমের নগাঁওয়ে। শনিবার। ছবি: উজ্জ্বল দেব
এক জন বলেন ‘জয় আই অসম’ তো অন্য জন বক্তব্য শুরু করেন ‘জয় শঙ্করদেব’ বলে। ইনি ওঁকে ‘বিভেদকামী’ বলেন তো উনি এঁকে ‘সাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দেন। এমনই দুই চরিত্র অসমের নগাঁওয়ে একই দিনে, এক ঘণ্টার ব্যবধানে মুখোমুখি না হলেও পিঠোপিঠি। এমন পরিস্থিতিতে তরজা তো প্রত্যাশিতই।
রাহুল গাঁধীর নগাঁও সভা শেষ হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই নগাঁওয়ের আকাশে চক্কর মারতে শুরু করল নরেন্দ্র মোদীর হেলিকপ্টার। মোদী তাঁর সভার শুরুতেই স্বভাবসিদ্ধ মেজাজে বললেন, ‘‘দু’মাস ধরে সংবাদমাধ্যম তো এটাই চাইছিল। কোথাও যেন এক সঙ্গে দুই সেনাপতি সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন। আজই সেই দিন।” মোদীর খোঁচা, “সমীক্ষা নিষ্প্রয়োজন। একই কেন্দ্রে, এক ঘণ্টার ব্যবধানে দু’জনের সভার জনসমাগমই বলে দিচ্ছে, মানুষ কার পক্ষে।” বস্তুত মাথা গুণতির নিরিখে ‘অ্যাডভান্টেজ’ মোদীই। তবে আজ রাহুলও ছিলেন যুদ্ধংদেহি মেজাজে। আদানিদের জলের দামে জমি দেওয়া, বিজেপি নেতাদের মহিলাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন, হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের কাঠগড়ায় মোদীকে সরাসরি দাঁড় করান তিনি। জবাবি হামলায় মোদী ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ব্যবহার করেছেন নির্ভয়া কাণ্ড, সঞ্জয় বারুর বই, মূল্যবৃদ্ধি, জাতিবিদ্বেষ, অনুপ্রবেশ, ডি (ডাউটফুল)-ভোটার আর অনুন্নয়ন।
বঙ্গাইগাঁও, মঙ্গলদৈ ও নগাঁওয়ে সভা করেন মোদী। বঙ্গাইগাঁওয়ে কোচ, রাজবংশীদের তুষ্ট করতে এক দিকে যেমন কোচরাজ নরনারায়ণ, বীর চিলারাইয়ের নামে জয়ধ্বনি দেন। কোচ, রাজবংশী-সহ ছ’টি জনগোষ্ঠীকে তফসিলভুক্ত উপজাতির মর্যাদা না দেওয়ার জন্য ইউপিএ সরকারের সমালোচনা করেন। নামনি অসমের আদিবাসীদের উদ্দেশে মোদীর আশ্বাস, “গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ় মিলিয়ে দেশের ৪০ শতাংশ আদিবাসীর কল্যাণ বিজেপির হাতে হয়েছে। আপনাদের কল্যাণও করবে বিজেপি-ই। তবে ভোটের সময় ছাড়া কখনও আদিবাসীদের কথা কংগ্রেসের মনে পড়ে না।” বঙ্গাইগাঁও, নগাঁও দুই এলাকাতেই অনুপ্রবেশ, ডি ভোটার বড় সমস্যা। মোদী আজ বলেন, “হিন্দু হওয়ার অপরাধে যাঁদের বাংলাদেশ থেকে তাড়ানো হয়েছে, তাঁরা ভারতমাতার আশ্রিত সন্তান। গোটা দেশকে ভাগাভাগি করে তাঁদের দায়িত্ব নিতে হবে।” মনমোহন সিংহকে ‘মৌনমোহন’ বলে ব্যঙ্গ করে সঞ্জয় বারুর বইটির প্রসঙ্গও তোলেন মোদী। বলেন, “দিল্লিতে মা-বেটা আর রাজ্যে বাপ-বেটা (তরুণ ও গৌরব গগৈ)-এর পরিবারতন্ত্রকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে।
অন্য দিকে, রাহুল দাবি করেন, “গুজরাতে আদানিদের এক টাকা মিটার হিসাবে ৪৫ হাজার একর জমি দেওয়া হয়েছে। সেখানে ক্ষুদ্র শিল্প বিকাশে মন দেওয়া হয়নি। অথচ কেউ কেউ আমুল-সহ সব শিল্পেরই কৃতিত্ব নিচ্ছেন।” যদিও মোদীর বক্তব্য, ‘‘উনি মিথ্যাবাদী। উনি নিজে কিছু জানেন না। ওঁর ভাষণ যিনি লিখে দেন, তিনিও অযোগ্য লোক। গুজরাতে ক্ষুদ্র শিল্পের ৮৫ শতাংশ বিকাশ হয়েছে। অথচ বঙ্গাইগাঁওতে একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া কাগজ কল এত বছরেও কংগ্রেস খোলাতে পারল না। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে কংগ্রেস বড়াই করছে। সেখানে ৫ কোটি মানুষ কাজ চেয়েছিলেন। কাজ পেয়েছেন মাত্র ৫০ লক্ষ।”
রাহুলের দাবি, “বিজেপির মহিলা কর্মীরা জানিয়েছেন, বিজেপির নেতারা মহিলাকর্মীদের সঙ্গে অভব্য ব্যবহার করেন। মধ্যপ্রদেশে ২০ হাজার মহিলা নিখোঁজ। দিল্লিতে ‘মহিলা শক্তি’র পোস্টার ছাপানো হয়েছে। তাতে কেবল এক জনের ছবি। কোনও নেত্রীর নয়।”
মোদীর পাল্টা প্রশ্ন, “মহিলা সুরক্ষায় কংগ্রেস এত আন্তরিক হলে কেন সনিয়ার নাকের ডগায়, দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ড হয়? কেন উত্তর-পূর্বের মেয়েরা সেখানে নাগাড়ে ধর্ষিতা হন? কেন নির্ভয়ার জন্য প্রতিবাদে সামিল যুবক-যুবতীর উপরে জল-কামান, লাঠি চালানো হয়? কেন ঘটা করে গড়া ‘নির্ভয়া ফান্ড’-এর একটা টাকাও গত এক বছরে খরচ হয় না?”
রাহুল বলেন, “মোদী ইংরেজদের মতোই সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের রাজনীতি করেন। আমরা মানুষকে জুড়ি। ওরা ভাঙেন-মারেন।” মোদীর অভিযোগ, “কংগ্রেস অন্ধ্রকে তেলেঙ্গানার সঙ্গে, অসমিয়াদের বড়োদের সঙ্গে লড়িয়ে দিচ্ছে। ভাঙনের রাজনীতি করে কংগ্রেস টিকে আছে।”