থানায় ধৃত চার লিঙ্কম্যান। (ইনসেটে) রাজেশ চক্রি এবং ধ্রুব রিয়াং। — নিজস্ব চিত্র
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘ইউনাইটেড ডেমক্রেটিক লিবারেশন ফ্রন্ট’ বা উদলার নাম বদলে দিয়েছে দলের নেতারা। সংগঠনের নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘ব্রু রেভলিউশনারি আর্মি অফ ইউনিয়ন’ সংক্ষেপে ‘ব্রু’। সংগঠনের পাঁচ লিঙ্কম্যানকে গ্রেফতার করে এই তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে সংগঠনের দুই মাথার ছবিও পুলিশের হাতে এসেছে।
প্রধানত মিজোরামে রিয়াংদের অধিকারের জন্য লড়াই শুরু করলেও বরাকের করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দির বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় উদলা জঙ্গিদের দৌরাত্ম রয়েছে। হত্যা, অপহরণ, তোলাবাজির মতো বিভিন্ন অপরাধে উদলার নাম জড়িয়েছে। এত দিন তারা ‘উদলা’ নামেই টাকা আদায় করত। পুলিশের খাতাতেও সেই নামই আছে। কিন্তু ধৃত লিঙ্কম্যানদের জেরা করে সংগঠনের নাম বদল-সহ অনেক অজানা তথ্য জানা গিয়েছে।
কাল করিমগঞ্জ পুলিশের ডিএসপি রণবীর শর্মা সংগঠনের এক লিঙ্কম্যান শাকালু বরকে আটক করেন। তাকে জেরা করে আজ আরও চার লিঙ্কম্যান পরশ রিয়াং, দেবো রিয়াং, জজি রিয়াং, চরণজয় রিয়াংকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালত সকলকে পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে। জানা গিয়েছে, বাজারিছড়ার ব্যবসায়ী আবদুল গনি লস্কর এবং মইনুল হককে অপহরণ করার ও লুকিয়ে রাখার পিছনে পরশ ও দেবোর হাত ছিল।
ধৃতেরা আরও জানায়, বর্তমানে ব্রু সংগঠনের সভাপতি রাজেশ চক্রি। সে উচ্চশিক্ষিত। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। সংগঠনের সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ধ্রুব রিয়াং। উগ্রপন্থী সংগঠনে নেতৃত্বের সংঘাত চলছিল। ফলে সংগঠনেও নামও বদলাতে থাকে। আপাতত ‘ব্রু’ নামেই চলছে কাজ। এত দিন পুলিশের কাছে রাজেশ বা ধ্রুবর কোনও ছবি ছিল না। লিঙ্কম্যানদের থেকে করিমগঞ্জ পুলিশ তাদের ছবি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
পুলিশ জানত, সংগঠনটির এরিয়া কামান্ডারের দায়িত্বে রয়েছে রবার্ট রিয়াং। হাইলাকান্দির প্রত্যন্ত এলাকা-সহ করিমগঞ্জের মেদলিছড়া এবং চেরাগি এলাকার প্রতিটি বাড়ি থেকে ৫০০ টাকা এবং পাঁচ কিলোগ্রাম চাল দেওয়ার জন্য ফতোয়া জারি করেছে রবার্ট। জঙ্গিদের নির্দেশে মেনে অনেকেই চাল এবং টাকা দেওয়া শুরু করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৬ জানুয়ারি রবার্টকে পাকড়াও করতে প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরার আশাপাড়াতে অভিযান চলে। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই রবার্ট পালায়।
আজকের অভিযানের নেতৃত্ব দেন পুলিশ সুপার প্রদীপরঞ্জন কর এবং এএসপি নবীন সিং। প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় জঙ্গি আনাগোনার খবর বিভিন্ন সময়ে পুলিশের কাছে আসছিল। জেলার চেরাগি এলাকাটি খুবই দুর্গম। রয়েছে টিলাও। ফলে পুলিশ গ্রামের ঢুকলেই উগ্রপন্থীরা কোনওভাবে তা জেনে যাচ্ছে। তবে গ্রামবাসীরা উগ্রপন্থীদের বিষয়ে অনেক তথ্য দিচ্ছেন। শীঘ্রই দলের মাথাদেরও ধরে ফেলা যাবে।’’