দিল্লিতে ধর্ম মিছিল, আমন্ত্রিত বিজেপির মন্ত্রী

এ বার ধর্ম-সঙ্কটের আঁচ খাস রাজধানীতে। বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ‘ঘর ওয়াপসি’ কর্মসূচি মেনে আগামী ২৫ ডিসেম্বর, দিল্লির রামলীলা ময়দানে মেরঠের ধর্মান্তরিতদের নিয়ে একটি মিছিলের আয়োজন হয়েছে। উপলক্ষ, আর্য সমাজের এক বিশিষ্ট নেতার মৃত্যুদিন। আয়োজকদের দাবি, ১৯২০ সালে ওই নেতাই প্রথম দেশে গণ ধর্মান্তরণ শুরু করেছিলেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৪২
Share:

এ বার ধর্ম-সঙ্কটের আঁচ খাস রাজধানীতে।

Advertisement

বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ‘ঘর ওয়াপসি’ কর্মসূচি মেনে আগামী ২৫ ডিসেম্বর, দিল্লির রামলীলা ময়দানে মেরঠের ধর্মান্তরিতদের নিয়ে একটি মিছিলের আয়োজন হয়েছে। উপলক্ষ, আর্য সমাজের এক বিশিষ্ট নেতার মৃত্যুদিন। আয়োজকদের দাবি, ১৯২০ সালে ওই নেতাই প্রথম দেশে গণ ধর্মান্তরণ শুরু করেছিলেন। তাৎপর্যপূর্ণ, এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন যোগগুরু রামদেব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, বিজেপি নেতা বিজয় গয়াল, সত্যপাল সিংহ, মীনাক্ষি লেখি, আরএসএসের শীর্ষ নেতা কৃষ্ণগোপাল। বিজয় গয়াল অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানালেও হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, হায়দরাবাদের একটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা থাকায় তিনি রামলীলা ময়দানে না-ও আসতে পারেন। আরএসএসের এক নেতার কথায়, “পুরনো দিল্লির নয়া বাজারে ২৩ ডিসেম্বর ওই নেতাকে খুন করা হয়েছিল। বড়দিনে সেই নয়া বাজার থেকে রামলীলা ময়দান পর্যন্ত একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে।” ওই মিছিলে হাজার পঁচিশেক মানুষের সমাগম হবে বলে দাবি আয়োজকদের।

আরএসএসের আর এক নেতা জানিয়েছেন, ওই ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদিন ২৩ তারিখ হলেও ছুটির দিন বলেই বড়দিনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা এই রীতি মেনে এসেছি। ছুটির দিনে ট্র্যাফিকের সমস্যা কম হবে বলেই এই আয়োজন।”

Advertisement

আগরা এবং কেরলে ধর্মান্তরণের ঘটনা সংসদে ও তার বাইরে অস্বস্তিতে ফেলেছে মোদী সরকারকে। নির্বাচনের প্রচারে প্রস্তাবিত মোদীর উন্নয়ন-রথকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গত কালই দিল্লিতে এক প্রস্ত আলোচনা করেছেন বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে ধর্মান্তরণের ঘটনায় লাগাম পরানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে যৌথ ভাবে। তার পরের দিনই এ ভাবে রাজধানীর রাজপথে ধর্মান্তরিতদের নিয়ে মিছিলের আয়োজনের কথা সামনে আসায় ফের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপি সরকারকে। বিজেপি এবং মোদী সরকার যতই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করুক না কেন, ধর্ম-সঙ্কট যে আদৌ পিছু ছাড়ছে না, তা এই মিছিলের আয়োজনেই স্পষ্ট। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এই মিছিলে যোগ দিয়ে সঙ্ঘের শতাধিক নেতা রাস্তা ঝাঁট দিয়ে মোদীর স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পের কথা মনে করিয়ে দেবেন। অর্থাৎ, আরএসএসের কর্মসূচিতে খানিকটা সচেতন ভাবেই টেনে আনা হচ্ছে মোদী সরকারের অনুষঙ্গ।

ধর্মান্তরণ-প্রসঙ্গে মোদীর জবাব চেয়ে, আজ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিনেও বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিরোধী দলগুলি। তবে নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে দেশের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা যে এই ধর্ম সঙ্কটে ধাক্কা খাচ্ছে তা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ এক নেতা জানিয়েছেন, ধর্মান্তরণ প্রশ্নে সঙ্ঘ পরিবারের তৎপরতায় অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী এই নিয়ে আরএসএসের সঙ্গে কথাও বলেছেন। দুই পক্ষের পৃথক মতামত হলেও প্রাথমিক ভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যেই যে জোর দেওয়া উচিত তা নিয়ে আর্জি-আলোচনাও হয়েছে। এই ঘরে ফেরানোর কর্মসূচি নিয়ে দ্বিমত তৈরি হয়েছে সঙ্ঘের অন্দরেও। মোদী-মডেলে বিশ্বাস রেখে এক দল উন্নয়নে জোর দিলেও আরএসএসের অন্য একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছে, বিজেপি সরকারের ক্ষমতায় আসার দীর্ঘ অপেক্ষা অবশেষে শেষ হয়েছে। তাই সঙ্ঘের নিজস্ব মতাদর্শ প্রচারে আপস করতে নারাজ তাঁরা। যদিও মোদীর খাসতালুক গুজরাতে ধর্মান্তরণের ঘটনায় সমস্যা বেড়েছে বিজেপি সরকারের। বলসাড়ের পর গুজরাতের সুন্দরনগরেও ধর্মান্তরণের আয়োজন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় প্রবীণ তোগাড়িয়ার মতো কট্টরপন্থী নেতাদের সামলে রাখলেও গুজরাতে ধর্মান্তরণের ঘটনা স্বভাবতই ব্যাকফুটে ফেলেছে মোদী সরকারকে।

বিজেপি সূত্রের খবর, গত কাল সঙ্ঘ-বিজেপি বৈঠকের পর রামলীলা ময়দানের এই মিছিল ‘জাঁকজমকহীন’ রাখার আবেদন করা হয়েছে। তবে, ধর্মান্তরিতদের নিয়ে মিছিল এবং সঙ্গে মোদীর স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সম্মিলিত আয়োজনে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ধর্ম-সঙ্কটে ঘৃতাহুতিতে মোদীর দেখানো ‘আচ্ছে দিনে’র আশায় নতুন করে আঘাত হানবে না তো!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement