মামলা খারিজ হয়েও রেহাই মিলল না। এ বার জারি হল গ্রেফতারি পরোয়ানাও। ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর পরিচারিকার ভিসায় ভুল তথ্য দিয়েছেন, এই মামলা দু’দিন আগেই খারিজ করে দিয়েছিল আমেরিকার আদালত। নাকচ হয়ে গিয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও। ৪৮ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই নতুন করে মামলা দায়ের করেন মার্কিন অ্যাটর্নি প্রীত ভারারা। তার পরই খোবরাগাড়ের নামে জারি হল গ্রেফতারি পরোয়ানা। যদিও বিষয়টি নিয়ে ফের জলঘোলা শুরু হওয়ায় অসন্তুষ্ট ভারত। ওবামা প্রশাসনের এই পদক্ষেপ ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে বলে জানিয়েছে ভারতের বিদেশ মন্ত্রক।
পরিচারিকার ভিসায় ভুল তথ্য দেওয়া এবং কম পারিশ্রমিকে বেশি ক্ষণ কাজ করানোর অভিযোগে গত ১২ ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছিল নিউ ইয়র্কে ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেলকে। মামলাটি গত বুধবার খারিজ হয়ে গেলেও নতুন করে মামলা করার উপর কোনও বিধিনিষেধ ছিল না। তাই তড়িঘড়ি দেবযানীর বিরুদ্ধে ফের আদালতে গেলেন মার্কিন কৌঁসুলি। দেবযানী ভারতে ফিরে এলেও তাঁর স্বামী ও দুই সন্তান এখনও মার্কিন মুলুকে। কোনও প্রয়োজনে আবার আমেরিকায় যেতে হলে নয়া পরোয়ানার জোরে সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে পুলিশ।
ওবামা প্রশাসনের এই পদক্ষেপের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। এ দিন এক বিবৃতিতে মন্ত্রকের এক মুখপাত্র জানান, “এর কোনও দরকারই ছিল না। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে এর প্রভাব পড়বে।” দেবযানী আপাতত ভারতে। তাঁর উপর মার্কিন আইন না খাটায় তাঁদের এতে বিশেষ কিছু যাবে আসবে না বলেও মন্তব্য করেছেন ওই কর্তা।
পরিচারিকা সঙ্গীতা রিচার্ডের ভিসায় ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে, মেয়েকে স্কুলে দিতে যাওয়ার সময় প্রকাশ্য রাস্তায় হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল খোবরাগাড়েকে। এমনকী নগ্ন করে তল্লাশি করার পর তাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মাদকাসক্তদের সঙ্গে একই কুঠুরিতে। ডেপুটি কনসাল জেনারেলকে এ ভাবে হেনস্থা করায় ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে সে সময় বিস্তর অশান্তিও হয়েছিল। এর প্রতিবাদে ভারতে কর্মরত মার্কিন কূটনীতিকদের একাধিক সুযোগ সুবিধে হঠাৎই বন্ধ করে দেয় ভারত।
খোবরাগাড়ে যাতে পূর্ণ কূটনৈতিক রক্ষাকবচ পান, তাই তড়িঘড়ি তাঁকে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি পদে বদলি করা হয়। শেষ পর্যন্ত আড়াই লক্ষ ডলারের ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পেয়ে, সুরক্ষাকবচের জোরেই ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন উনচল্লিশ বছর বয়সি দেবযানী। প্রায় দু’মাস কেটে যাওয়ার পর নতুন করে মামলার চক্করে পড়ায় ফের চড়তে শুরু করেছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পারদ।
গত কাল আমেরিকার আদালতে ২১ পাতার অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলি প্রীত ভারারা। ভিসা জালিয়াতি ও প্রতারণার যে অভিযোগ ছিল খোবরাগাড়ের নামে, সেই একই অভিযোগ বহাল রয়েছে এ বারও। ভারারার অভিযোগ, পরিচারিকাকে কম মজুরি দেবেন বলে ইচ্ছাকৃত ভাবে সরকারের কাছে ভুল তথ্য জমা দিয়েছিলেন ওই ভারতীয় কূটনীতিক। কাজের চাপ নিয়ে একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও কাজ না হওয়ায় ২০১৩-এর জুনে দেবযানীদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যান পরিচারিকা রিচার্ড। স্ত্রীকে ফেরত পাঠানোর জন্য রিচার্ডের স্বামীকেও বহু বার দেবযানী চাপ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ।
আগেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন খোবরাগাড়ে। দু’দিন আগে মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল তাঁর পরিবারও। এ দিন অবশ্য নিজের হতাশা গোপন করেননি দেবযানীর বাবা উত্তম খোবরাগাড়ে। শনিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “একে আগ্রাসন ছাড়া আর কী-ই বা বলতে পারি। সার্বভৌম দেশ হিসেবে ভারতের উচিত, যত ক্ষণ না এই মামলার সমাধান হচ্ছে, তত ক্ষণ আমেরিকার সঙ্গে সমস্ত আলোচনা বন্ধ রাখা।”