ঘুরে দাঁড়াতে এফএমেও বিবিধ ভারতী

তখন শ্রীলঙ্কার ভারত-বিজয় রথ চলছে আসমুদ্রহিমাচলে। রথের সারথি এক মুম্বইকার। নাম আমিন সায়ানি। আর রথের নাম বিনাকা গীতমালা। আমিন সায়ানির মাদকতাময় গলার উপস্থাপনায় বলিউডের চলচ্চিত্র জগতের মাদকতাময় সুর তখন ‘রেডিও সিলোনের’ দৌলতে ভারতবাসীর মুখে মুখে। কোণঠাসা শক্তিমান ‘আকাশবাণী’। ভারতের সংস্কৃতিতে শ্রীলঙ্কার এই ‘অনুপ্রবেশ’ ঘিরে উত্তাল সংসদও। সাংসদ হারীন চট্টোপাধ্যায়ের আক্রমণের মুখে নেহরু মন্ত্রিসভার তৎকালীন তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বি ভি কেসকার অনমনীয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৪
Share:

তখন শ্রীলঙ্কার ভারত-বিজয় রথ চলছে আসমুদ্রহিমাচলে। রথের সারথি এক মুম্বইকার। নাম আমিন সায়ানি। আর রথের নাম বিনাকা গীতমালা। আমিন সায়ানির মাদকতাময় গলার উপস্থাপনায় বলিউডের চলচ্চিত্র জগতের মাদকতাময় সুর তখন ‘রেডিও সিলোনের’ দৌলতে ভারতবাসীর মুখে মুখে।

Advertisement

কোণঠাসা শক্তিমান ‘আকাশবাণী’। ভারতের সংস্কৃতিতে শ্রীলঙ্কার এই ‘অনুপ্রবেশ’ ঘিরে উত্তাল সংসদও। সাংসদ হারীন চট্টোপাধ্যায়ের আক্রমণের মুখে নেহরু মন্ত্রিসভার তৎকালীন তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী বি ভি কেসকার অনমনীয়। তীব্র উন্নাসিকতায় তিনি গীতা দত্ত, লতা মঙ্গশকার, মুকেশ, রফিদের ফেলে দিলেন ‘লারেলাপ্পার’ দলে। বাদানুবাদ চলতে থাকল। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৭-এ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আকাশবাণী চালু করল একটি নয়া কেন্দ্র বিবিধ ভারতী। প্রথমে মুম্বই, পরে তখনকার মাদ্রাজ থেকে চালু হল বিবিধ ভারতী। ১৯৬০-এ কলকাতাতেও শুরু হল বিবিধ ভারতীর সংসার। সেই সংসারে ফিরে এসেছেন ‘ফাদার অফ রেডিও জকি’ আমিন সায়ানি। কলকাতা বিবিধ ভারতীতে তখন রথের রশি হাতে ‘মাদার অফ রেডিও জকি’ শ্রাবন্তী মজুমদার ও তাঁর ‘বোরোলিনের সংসার’। ষাট-সত্তর-আশির দশক তখন কলকাতা বিবিধ ভারতীতে মিলেমিশে একাকার বলিউড-টলিউড। বাংলা-হিন্দি গানেও স্বর্ণযুগ। প্রসার ভারতীর বর্তমান চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) জহর সরকার রেডিও সিলোনকে খর্ব করে বিবিধ ভারতীর এই শুরুকে চিহ্নিত করলেন, ‘ভারতের প্রথম আবেগময় ঐক্য’ বলে।

নব্বইয়ের দশক থেকে রেডিওর প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে দেখা দিল টেলিভিশন। মানুষকে টেনে বসাল পর্দার সামনে। একবিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে মিডিয়াম ওয়েভের জায়গা নিতে শুরু করল ফ্রিকোয়েন্সি ওয়েভ বা এফএম। অনেক বেশি শক্তিশালী, অনেক বেশি স্পষ্ট, শ্রোতার সংখ্যাও অনেক বেশি। কারণ এফএম ধরতে প্রয়োজন নেই রেডিও, দরকার নেই ট্রানজিস্টরও। মুঠোবন্দি মোবাইলই যথেষ্ট। ঠিক এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই আজ কলকাতা বিবিধ ভারতীর ‘এফএম-করণ’ সম্পন্ন করলেন জহর সরকার। নতুন ১০ কিলোওয়াটের একটি এফএম ট্রান্সমিটার বসিয়ে চালু হল আকাশবাণীর নয়া প্রকল্প ‘এফএম-১০১.৮’। জহরবাবুর কথায়, দীর্ঘদিনের প্রাচীন মিডিয়াম ওয়েভ ট্রান্সমিটার দিয়ে আর চলছিল না। নয়া প্রজন্মের শ্রোতাদের আকর্ষণ করতে বিবিধ ভারতীর এফএম চ্যানেল শুরুটা জরুরিই ছিল। এর ফলে ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ‘বিবিধ ভারতী’ মুঠোবন্দি হল। মুঠোয় এল স্মৃতি মেদুরতাও। আর বেড়ে গেল পাঁচগুণ শ্রোতা। পরবর্তী ক্ষেত্রে ২০ কিলোওয়াটের ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে বিস্তৃত করা হবে এলাকা।

Advertisement

রেডিও সিলোন-এর সঙ্গে লড়াইয়ে যেমন আকাশবাণী হাতিয়ার করেছিল বিবিধ ভারতীকে, তেমনই বেসরকারি এফএম চ্যানেলগুলির সঙ্গে এ বার আকাশবাণীর এফএম-রেনবো ও এফএম-গোল্ডের পাশাপাশি ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবেই ‘এফএম-বিবিধ ভারতী’-কে চিহ্নিত করছেন জহরবাবুরা। দিল্লি, মুম্বই ও চেন্নাইয়েও বিবিধ ভারতীর এফএম চ্যানেল শুরু হবে। রাজস্বের দিক থেকেও প্রসার ভারতী অনেক লাভবান হবে বলে মনে করেন সিইও। কারণ, জহরবাবুর কথায়, “আমরা তো শুরুই করছি অনেক সুবিধাজনক জায়গা থেকে। আমাদের দূরদর্শনের টাওয়ারগুলিকে ব্যবহার করে, সেখানেই ট্রান্সমিটার বসিয়ে খরচ ও সময়, আমরা দুটোই বাঁচাচ্ছি।”

রেডিও-র পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়াটি নিয়ে প্রসার ভারতী যে ভাবছে, তার আর একটি নমুনা দেখা গেল আজ আকাশবাণী ভবনের কনফারেন্স রুমে। সিইও-র আমন্ত্রণে আজ কলকাতার বিভিন্ন ক্ষেত্রের বেশ কয়েক জন ব্যক্তিত্ব মিলিত হন। ছিলেন পবিত্র সরকার, শাঁওলি মিত্র, বিভাস চক্রবর্তী, মনোজ মিত্র, প্রমিতা মল্লিক, পূর্ণিমা সেন, বুদ্ধদেব গুহ, সরোদিয়া বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, স্বপন চক্রবর্তী, চিন্ময় গুহ, শর্বরী দত্ত প্রমুখ। নানা ধরনের পরামর্শ তাঁরা দিলেন, প্রসার ভারতী কর্তৃপক্ষ আগ্রহ ভরে তা শুনলেন। আশ্বাস দিলেন, সমস্ত পরামর্শই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement