মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের নামে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করলেন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে বিজেপির নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা। আজ এক সাংবাদিক সম্মেলন করে হিমন্ত জানান, গগৈ গত কয়েকদিন ধরে নাগাড়ে তাঁর নামে অসত্য প্রচার চালাচ্ছেন। এমনটা চলতে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করছেন— আমার নামে একাধিক মামলা চলছে। আমি সারদা ও লুইস বার্জার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। অথচ এই সবই মিথ্যা অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রীর এই অসত্য ভাষণ আর মেনে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। তাই আজ গুয়াহাটির এক নম্বর সিভিল বিচারকের এজলাসে আমি গগৈয়ের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছি। মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করুন— দেশের কোথায় আমার নামে ফৌজদারি মামলা চলছে।’’ তিনি জানান, দু’দিনের মধ্যে গগৈয়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও ঠুকবেন তিনি।
পাশাপাশি, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোলা গগৈয়ের অভিযোগ নস্যাৎ করে হিমন্ত দাবি করেন, রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে এখনও ৯০ শতাংশ ও ১০ শতাংশের অনুপাতেই সাহায্য পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। ‘ইন্দিরা গাঁধী আবাস যোজনা’য় অসমকে বিজেপি-শাসিত গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলির চেয়েও বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে। ইউপিএ আমলে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে রাজ্য পেয়েছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে অসম পায় ৯০০ কোটি টাকা। সেই তুলনায় চলতি অর্থবর্ষের সেপ্টেম্বর অবধি রাজ্যকে ৮৭৮ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র— যা দেশের মধ্যে তৃতীয় সর্বাধিক। অথচ বিজেপির শাসনাধীন গুজরাত ৫২৪ কোটি টাকা ও মধ্যপ্রদেশ ৫৬৪ কোটি পেয়েছে। কিন্তু তার পরেও অসমে দুঃস্থরা বাড়ি করার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাচ্ছেন না। একই ভাবে, এমএনরেগা প্রকল্পেও ২০১১-১২ অর্থবর্ষে অসম পেয়েছিল ৪২৬ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে কেন্দ্র দিয়েছিল ৫৩৪ কোটি। গত অর্থবর্ষে তা ছিল ৫৭৩ কোটি টাকা। তুলনায়, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষের সেপ্টেম্বর অবধিই ৫০২ কোটি অসমকে দিয়েছে কেন্দ্র। হিমন্ত জানান, রাজ্যের হাতে খরচ না হওয়া টাকার পরিমাণ ১২৯৮ কোটি টাকা।
গগৈ অবশ্য দাবি করেন, কেন্দ্র রাজ্যকে অনেক কম টাকা পাঠাচ্ছে। বেশ কিছু প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করায় ১০০ শতাংশ খরচ রাজ্য সরকারের ঘাড়ে এসে পড়েছে। উত্তর-পূর্হ বিনিয়োগ নীতি স্থগিত করে ও বিশেষ সাহায্য বন্ধ করে শুধু অসম নয়, উত্তর-পূর্ব অন্য রাজ্যগুলিকেও সমস্যায় ফেলেছে এনডিএ।
অন্য দিকে, ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে কর্মচারীদের ক্ষোভে মলম লাগাবার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। আজ কর্মচারী পরিষদের দাবি মেনে নিয়ে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মাঘ বিহুর আগেই কর্মীদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়া হবে। পরিষদ মোট ২৭ মাসের বকেয়া দাবি করলেও গগৈ জানান, কত মাসের বকেয়া টাকা মিলবে— তা পরে জানানো হবে। পাশাপাশি, যে ‘ক্যাজুয়াল’ ও ‘ফিক্সড পে’ কর্মীরা ১৫ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করছেন, তাঁদের বেতন বাড়াতেও সম্মত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।