ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে তাইওয়ান। তাদের আশা, নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলে গুজরাতে পস্কো-র মতো বড় মাপের একটি ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠবে। দ্রুত শুরু করা যাবে উৎপাদন।
নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশে হিসেবনিকেশ চলছে। তিনি শীর্ষপদে বসলে সরকারের কূটনীতি কী হবে, সেই বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলে গিয়ে ভোট প্রচারে মোদী অরুণাচল প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ভারত থেকে এক ইঞ্চি জমিও কেউ কাড়তে পারবে না। তবে চিনের ‘আগ্রাসী নীতির’ কড়া সমালোচনা করলেও, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় করার পথেই চলেছেন মোদী। গুজরাতে চিনের বিনিয়োগও রয়েছে যথেষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের সঙ্গে নতুন সরকারের বড় মাপের ইস্পাত-সংযোগ গড়ে তোলার বিষয়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তাইওয়ান এবং চিনের মধ্যে দীর্ঘদিনের যুদ্ধংদেহী সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্ক এখনও সহজ হয়নি, কিন্তু আপাতত নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য সংযোগের বিষয়টিকে মান্যতা দিয়েছে দু’টি দেশই। তাই ক্ষমতায় এলে চিন এবং তাইওয়ানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার কাজটি মোদীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
চিনের পাশাপাশি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাইওয়ানের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নতির জন্য নীরবে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন মোদী। অতীতে বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দু’বার তাইওয়ান গিয়েছেন। ২০১১ সালে তাইওয়ানের বৃহত্তম বাণিজ্য প্রতিনিধি দলকে নিয়ে গুজরাতে একটি বাণিজ্য সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তিনি। ২০১২ সালে তাইওয়ানের সব চেয়ে বড় ইস্পাত প্রস্তুতকারী সংস্থা (চায়না স্টিল কর্পোরেশন বা সিএসসি) গুজরাত সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করে। ৬ হাজার কোটি টাকার এই ইস্পাত প্রকল্পটির জন্য সে রাজ্যে ১৪৫ একর জমিও ধার্য হয়। কথা ছিল ২০১৩ সালেই উৎপাদন শুরু হবে। চুক্তি করার সময়ই কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক দৌত্য শুরু করেছিল তাইপেই, যাতে দু’দেশের মধ্যে মুক্তি বাণিজ্য চুক্তিটিও পাশাপাশি হয়ে যায়। তাইওয়ানের বক্তব্য, ওই চুক্তি না থাকায় ইস্পাত কারখানার জন্য বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির শুল্ক এতটাই চড়া হয়ে যাবে, যে উৎপাদনের খরচ পোষানো সম্ভব হবে না। ফলে খাতায় কলমে চুক্তি হলেও, কাজের কাজ কিছু এগোয়নি।
দিল্লিতে নিযুক্ত তাইওয়ানের রাষ্ট্রদূত চাং কুয়াঙ্গ তেইন-এর বক্তব্য, এক বছর ধরে নয়াদিল্লি ও তাইপেই দু’দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি সার্থকতা নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু তার পর আর কিছু হয়নি। তাইওয়ান আশা করছে, মোদী কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিটি করে ফেলা অনেক সহজ হবে। শুরু করা যাবে ইস্পাত কারখানার উৎপাদন। চাং কুয়াঙ্গ-এর কথায়, “চুক্তিটি হলে ভারতে তাইওয়ানের যে বিনিয়োগ বাড়বে। তাইওয়ানের মাধ্যমে ভারত অন্য কোনও দেশেও পণ্য রফতানি করতে পারবে।” প্রস্তাবিত কারখানাটি হবে ওড়িশার পস্কোর (দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগে তৈরি) মাপেই। কার্যকর হলে এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ায় তাইওয়ানের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ। বিজেপি সূত্রের খবর, মোদী নিজেও বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। আমদাবাদের কাছে একটি বিশেষ তাইওয়ান শিল্প পার্ক গড়ার ব্যাপারে তিনি কথা বলেছেন সে দেশের সঙ্গে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাইওয়ানের বিনিয়োগ টানতে সর্বদাই সক্রিয় থেকেছে তাঁর গুজরাত সরকার। কেন্দ্রে ক্ষমতায় মোদী এলে সেই পথেই চলবেন, আশা করছে তাইওয়ান।