কংগ্রেসের পাশে নেই বাম-মমতা

খুব বেশি পুরনো দিনের কথা নয়। বছর দশেক আগেও মূল শত্রু বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দিল্লি বিধানসভার ভোটের আগে প্রকাশ কারাটরা আর কংগ্রেসের দিকে তাকাতেই নারাজ! বরং ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে ঠেকাতে তাঁদের সমর্থন অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টির (আপ) দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪১
Share:

খুব বেশি পুরনো দিনের কথা নয়। বছর দশেক আগেও মূল শত্রু বিজেপিকে ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দিল্লি বিধানসভার ভোটের আগে প্রকাশ কারাটরা আর কংগ্রেসের দিকে তাকাতেই নারাজ! বরং ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে ঠেকাতে তাঁদের সমর্থন অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টির (আপ) দিকে।

Advertisement

রাজ্য নেতাদের বহু অনুনয়-বিনয়, তর্জন-গর্জনকে উপেক্ষা করেই কপিল সিব্বলের মাধ্যমে তিনি সমঝোতার একটা বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে মনে করেন কংগ্রেসেরই অনেকে। কিন্তু সনিয়া গাঁধীর সেই ‘বার্তা’য় আর সাড়াই দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! বিজেপিকে ঠেকাতে তিনিও ঝুঁকলেন আপের দিকেই! রাজধানীর ভোটে সনিয়া গাঁধীর কংগ্রেস যেন অচ্ছুৎ!

অথচ গত কালই রাজ্যের তৃণমূল সরকারের হয়ে মামলা লড়তে সুপ্রিম কোর্টে হাজির থেকেছেন প্রাক্তন কংগ্রেস মন্ত্রী কপিল সিব্বল। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের করা জনস্বার্থ মামলায় যখন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা বিপাকে, তাঁদের দল সামান্য হলেও অক্সিজেন পাচ্ছে, তখন সিব্বল তৃণমূলের পক্ষ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হন রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা। সনিয়ার কাছেও ক্ষোভ জানান তাঁরা। এ সবে অবশ্য সিব্বলের সিদ্ধান্ত বদলায়নি। কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রের খবর, সনিয়ার সম্মতি না থাকলে এমন একটি মামলা হাতে নিতেন না সিব্বল। এবং সিব্বলকে অনুমতি দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে আগামী দিনে জোটের একটা ইঙ্গিত দিতে চেয়েছিলেন সনিয়া। যদিও সুপ্রিম কোর্টে সারদা মামলা খারিজ হওয়ায় সনিয়ার জোট-ইঙ্গিতে জল ঢেলে মমতা জানিয়েছেন তাঁর সমর্থন আপের দিকে! রাজনৈতিক সূত্রের মতে, দিল্লির ভোট যুদ্ধে কংগ্রেসকে না ছোঁয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে তৃণমূল এবং সিপিএম উভয় পক্ষেরই। মোদী তথা বিজেপি-র সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার গলিঘুঁজিতে পৌঁছে গিয়েছে। সারদা সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসা এবং বিজেপিকে আটকানো দু’টি বিষয়ই এখন তৃণমূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লি নির্বাচনে কেজরীবাল নিঃসন্দেহে বিজেপি-বিরোধী শক্তি হিসেবে কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে রয়েছেন। প্রাক্-নির্বাচনী সমীক্ষাগুলিতে আপের পক্ষেই জোরালো হাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, দিল্লিতে কংগ্রেসের পক্ষে মোদীর বিজয় রথের চাকা বসিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আর ঠিক এই কারণেই বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে এক নম্বর ঘোড়ার উপরেই বাজি রাখতে চাইলেন মমতা। গত বছর লোকসভা ভোটেই আপের সঙ্গে টক্কর নিতে দিল্লিতে একাধিক কেন্দ্রে প্রার্থী দিয়েছিলেন মমতা। ফলাফল বড় লজ্জায় ফেলে দেয় তাঁকে। সেই ভুলের আর পুনরাবৃত্তি করতে চাননি মমতা।

Advertisement

একদা প্রতিদ্বন্দ্বী আপ সম্পর্কে যে মনোভাব বদলেছে, তা স্পষ্ট করে দলের মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “আট মাস কেজরীবালের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। অকংগ্রেস ও অবিজেপি যে রাজনৈতিক অসাম্প্রদায়িক মঞ্চটি নেত্রী মমতা তৈরি করতে চাইছেন, এটা সেই উদ্যোগেরই অঙ্গ।”

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের কথায়, “আমাদের প্রধান নিশানা সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি এবং আরএসএসকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা। তার মানে এই নয় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হবে।” তাঁর ব্যাখ্যা, “কংগ্রেসের ভুলের জন্য আজ সাম্প্রদায়িক শক্তির বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। ফলে দিল্লির ক্ষেত্রে যেখানে আমাদের প্রার্থী নেই, সেখানে আমরা সমর্থকদের বলেছি, আপকে ভোট দিতে।”

ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারাও স্বীকার করছেন, তৃণমূল, বাম দলগুলি বা নীতীশ কুমারের দল সঙ্গত কারণে আপকে সমর্থন জানিয়েছে। সকলেরই রাজনৈতিক শত্রু এখন এক বিজেপি। আর দিল্লিতে বিজেপিকে ঠেকাতে আপ যে রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে, তা পারেনি কংগ্রেস। সেই কারণে সংখ্যালঘু ভোটেরও বড় অংশ দিল্লি ভোটে আপের দিকেই ঝুঁকছে।

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির এক সদস্যের মতে, দিল্লি কংগ্রেসের সমস্যা এখন পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেসের মতো! পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এখন এতই দুর্বল যে তৃণমূলের বিকল্প হিসেবে আর তাদের পাত্তা দেন না মানুষ। বরং বিজেপিকে বিকল্প হিসেবে দেখছেন অনেকে। তাই কংগ্রেস, এমনকী সিপিএমের নিচুতলার সমর্থকেরা বিজেপিতে সামিল হচ্ছেন। সে ভাবেই দিল্লিতে অনেকে আপকে প্রকৃত বিকল্প ভাবছেন। অবশ্য দিল্লির ভারপ্রাপ্ত নেতা পি সি চাকো বলেন, “দিল্লিতে কংগ্রেস একাই লড়ছে। যে রাজনৈতিক দলগুলি আপকে সমর্থনের কথা বলছে তাদের দিল্লিতে গণভিত্তি নেই। তাই কংগ্রেস এ ব্যাপারে বিচলিত নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement