নাগা-বিরোধী বিল পাশ করার প্রতিবাদে পার্বত্য মণিপুরে কংগ্রেস দলকে বয়কট করার কথা ঘোষণা করল ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল।
ভারত-নাগা শান্তি চুক্তি ও বৃহত্তর নাগালিমের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে নাগা কাউন্সিল ঘোষণা করেছে, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার নাগা-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। তাই পার্বত্য মণিপুরে কংগ্রেস দল, তাদের সব কর্মী, কর্মসূচিকে বয়কট করবে মণিপুরি নাগারা। পাশাপাশি, আগামী ১৫ দিন নাগা অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে সব ধরণের জাতীয় প্রকল্পের কাজও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সম্প্রতি মণিপুর বিধানসভায় ভূমিপুত্রদের সুরক্ষা এবং ভূমি আইন সংক্রান্ত সংশোধনী পাশ করা হয়েছে। প্রোটেকশন অফ মণিপুর পিপল্স বিলে ভূমিপুত্রের সংজ্ঞা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছে ১৯৫১ সালকে। ফলে মণিপুরের পার্বত্য জেলাগুলিতে থাকা নাগাদের মণিপুরে থাকতে ইনার লাইন পারমিট লাগবে। মণিপুরের চারটি পার্বত্য জেলায় নাগারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৯৬০ সাল থেকে চলে আসা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আইনে উপজাতি এলাকায় জমির অধিকার একান্ত ভাবেই উপজাতিদের হাতে ছিল। সেখানে অ-উপজাতিদের জমি কেনার অধিকারও ছিল না। কিন্তু সংশোধনীতে জেলাশাসকের অনুমতিক্রমে অ-উপজাতিরাও জমি কেনার অধিকার পেয়েছেন।
চান্ডেল ও তামেংলং জেলায় নাগারা ৩৭১সি ধারার অধীনে স্বশাসিত পরিষদ দাবি করেছিলেন। তাও মানেনি মন্ত্রিসভা। বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে ভারত-নাগা শান্তি আলোচনায় বৃহত্তর নাগালিমের বিরোধিতা করে প্রস্তাবও গ্রহণ করেছে মণিপুর বিধানসভা। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধানের তৃতীয় ধারা অনুযায়ী রাজ্যের সীমানা সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যেন রাজ্য বিধানসভার মতামত গ্রহণ আবশ্যিক হয়। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই চার নাগা বিধায়ক বিধানসভার স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মণিপুরের সবচেয়ে শক্তিশালী নাগা সংগঠন ইউএনসি-র দাবি, মণিপুরে কংগ্রেস বরাবর নাগা বিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। সেই কারণে নাগা এলাকাগুলিতে কাজ করার কোনও অধিকারই তাদের নেই। কংগ্রেস ভারত-নাগা শান্তি চুক্তি সফল হতে দিচ্ছে না। নাগা অধ্যূষিত জেলাগুলিতে তাই কংগ্রেসের কোনও দফতরই খুলতে দেওয়া হবে না। নাগা-বিরোধী মন্তব্যের জন্য বিধায়ক কে রঞ্জিত সিংহকেও বয়কট করেছে কাউন্সিল।
বিল ও সংশোধনী অনুমোদনের পর চূড়াচাঁদপুরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউএনসি সরকারের নির্মম ভূমিকার সমালোচনা করেছে। তারা জানায়, আগামী ১৫ দিনের জন্য রাজ্যে যত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রকল্প চলছে, সেগুলিও চলতে দেওয়া হবে না। এর মধ্যে রয়েছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে ও পাওয়ার গ্রিডের কাজ।