এমন দিনে তারে বলা যায়

মান্না দে-লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘শ্রী ৪২০’ ছবির ‘প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া’, কিশোর কুমার-আলিশা চিনয়-এর ‘মিঃ ইন্ডিয়া’ ছবির ‘কাটে নহি’, ‘মোহরা’ ছবির অলকা ইয়াগনিক-উদিতনারায়ণের গাওয়া ‘টিপ টিপ বরষে পানি’, কিশোর কুমার-আশা ভোঁসলের কণ্ঠে ‘নকম হালাল’ ছবিতে প্রয়াতা স্মিতা পাতিল অভিনীত ‘আজ রপট যায়ে তো’। এ আর রহমানের সুরারোপিত শ্রেয়া ঘোষালের ‘বরষো রে মেঘা মেঘা’, ‘চলতি কা নাম গাড়ি’-তে কিশোরকুমারের ‘এক লড়কি ভিগি ভাগি সি’, ‘মঞ্জিল’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘রিমঝিম ঘিরে শাওন’, ১৯৪২-এ লাভ স্টোরি’তে রাহুল দেববর্মন-এর সুরারোপিত ‘রিমঝিম রিমঝিম রুমঝুম রুমঝুম’, ‘লগন’ ছবিতে উদিতনারায়ণের ‘ঘনন ঘনন ঘনা আয়ি বরখা’, বরষাত কি এক রাত’ ছবির ‘শাওন আয়ো রে’, ‘পরখ’ ছবির ‘ও সজনা বরখা বাহার আয়ি’ লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে, ‘গুড্ডি’ ছবিতে বাণী জয়রামের গাওয়া ‘বোলে রে পাপিহারা’। শ্রাবণ-বন্দনায় মধুছন্দা মিত্র ঘোষ।শ্রাবণের আমন্ত্রণে মুম্বইয়ের আকাশে ভরা বর্ষা এখন। মেঘদূত-এর মন্দ্রাকান্তা ছন্দে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিদের এজমালি থেকে মেঘ খসানো খেয়াপথে ভিজছি শ্রাবণধারায়। জল থই থই জমাটি হুল্লোরে ভিজি। কতই না বিচিত্র কলধ্বনি সে বৃষ্টির— প্রতিটি শব্দকেই আলাদা চিনে নিতে হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৪ ০০:০০
Share:

উল্টে দেখুন ছবিটা পুরো পাল্টে গিয়েছে।

“The hear leaves drinking rain\I hear rich leaves on top\ giving the poor beneth\drop after drop” —William henry device

Advertisement

শ্রাবণের আমন্ত্রণে মুম্বইয়ের আকাশে ভরা বর্ষা এখন। মেঘদূত-এর মন্দ্রাকান্তা ছন্দে বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টিদের এজমালি থেকে মেঘ খসানো খেয়াপথে ভিজছি শ্রাবণধারায়। জল থই থই জমাটি হুল্লোরে ভিজি। কতই না বিচিত্র কলধ্বনি সে বৃষ্টির— প্রতিটি শব্দকেই আলাদা চিনে নিতে হয়। নিঃসঙ্গ চাতকের মতো, কখনও বা স্বরচিত হয়ে যাই। একলা হয়ে যাই খুব। প্রশ্বাসে ভরে নিই এক বুক বৃষ্টিভেজা সোঁদা গন্ধ। একলা হতে হতে মন গেয়ে ওঠে,

“আজ যেমন করে গাইছে আকাশ

Advertisement

তেমনি করে গাও গো

আজ যেমন করে চাইছে আকাশ

তেমনি করে চাও গো—”

মুম্বইয়ের গোটা আকাশটাই এখন মৌসুমি বায়ুর দৌলতে বাদল মেঘের ঘনঘটা। অঝোর আকাশ। আরবসাগর ও পশ্চিমঘাট বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে নিরুচ্চার। বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি প্রতি পলে খোলতাই হচ্ছে প্রকৃতি রূপ। টাপুরটুপুর গড়িয়ে পড়া বৃষ্টি শুশ্রূষায় পশ্চিমঘাট ক্রমশ সবুজ থেকে সবুজতর। মুম্বইয়ে বর্ষা ভাগ্য বরাবরই বেশ ভাল। কিন্তু মুম্বইয়ে এ বার বর্ষা এলোই বেশ খানিকটা দেরি করে। শেষের দিকে তো মুম্বইবাসী প্রায় হা-পিত্যেশ করেই আক্ষেপ করছিলেন, ‘আল্লা মেঘ দে পানি দে’ বলে। মুম্বই ও নগরতলির কিছু অঞ্চলে যজ্ঞটজ্ঞ পুরোহিত পূজাআর্চা শুরুও হয়ে গেছিল বৃষ্টি আসার দেরি দেখে। অবশ্য এই মুহূর্তে বর্ষার সুনজরে আরবসাগর ও তার তটভূমি।

শ্রাবণ বরিষণে, বৃষ্টি ও উস্কানিমূলক ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা খেলতে শুরু করে ভ্রমণরসিক মনে। এমন বৃষ্টি দিনে, দিন কতক বাড়ির বাইরে ধুন্ধুমার আবেগে-উৎসাহে বেরিয়ে পড়ার কত ছলই না উঁকি দেয় মনে। প্রখর শ্রাবণ দিনে, মেঘ ভর্তি জলজ চাঁদোয়ায় ঢাকা থাকে তামাম মুম্বই ও কোঙ্কন উপকূল। পশ্চিমঘাট-সহ্যাদ্রী পর্বতমালাদের ঘেরাটোপে তখন শুধুই সবজে নেশার চমকদমক। ওই সব পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে সদ্য গজিয়ে ওঠা রূপোলি ফিতের মতো জলাধার। আর যে সব প্রপাতগুলো প্রকৃতির কোলে আগে থাকতেই মজুত ছিল, সেগুলি তখন আরও দুর্বিনীত সুখে।

শুনেছি, এককালে মোঘল বাদশাহরা নাকি বর্ষাযাপন করতে মাণ্ডু বেড়াতে যেতেন। আমাদের মুম্বই মহানগরেও তো ঘরের পাশে আরশি নগরের মতো কতো চেনা অচেনা অর্ধেক জানা অর্ধেক শোনা জলসাঘর রয়েছে।

নিজে যেহেতু নভি মুম্বইতে থাকি, তাই সুধী পাঠকবৃন্দের কাছে ‘Best monsoon gateway’ কিছু জায়গার গল্প করার লোভ সামলাতে পারছি না। কয়েক পশলা বৃষ্টি ঝরলো কি ঝরলো না, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দাক্ষিণ্যে উপেক্ষা না করেই নভি-মুম্বইয়ের ‘স্যাটলাইট সিটিতে’ হারিয়ে যাওয়া যায় কয়েক জায়গায়।

নভি মুম্বইকরদের কাছে খারঘর পাণ্ডবকারা জলপ্রপাত এই সময় যেন দারুণ সম্মোহনের ঠেক। সেন্ট্রাল পার্ক আর গলফ কোর্সের লাগোয়া প্রপাতটি বর্ষার জল পেয়েই উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। সুবজাভায় ছাওয়া ছোট এই টিলা বেয়ে জলধারা নেমে আসে, মেঘ চাদরে ঢাকা থাকে চরাচর। জায়গাটি ট্রেকিং বা স্পোর্টস বিলাসীদেরও খুব পছন্দের। উচ্চতা খুব একটা বেশি না হওয়াতে পাহাড়ের চারপাশটা দিব্যি বেরিয়ে নেওয়া যায়। পাণ্ডবকার পাহাড়ের এক প্রাচীন বৌদ্ধ গুহাও আছে। বর্ষার সময় দেখে নেওয়া সেটিও। স্থানীয় গ্রাম্যবাসীদের হোটেলে মালবনি খাবারও চেখে দেখা যেতে পারে। খারগর পাহাড়টিলায় ‘ফানসওয়ারি’ যেতে রাস্তার দু’ধারেই শক্ত পাথরের দেওয়ালের মতো পাহাড় বেশ কিছুটা সড়কপথ আগলে রয়েছে। ওই পাহাড় চূড়া থেকে সমতলে এলাকাটি চারপাশ দেখতে বেশ লাগে।

বর্ষার জলহাওয়ায় সবুজ শাড়িতে মেঘের আঁচল উড়িয়ে মায়াবিনী থাকে নিউ পানভেল-এর ‘গোদেশ্বর ড্যাম’। পানভেল থেকে ঘাট রোড ধরে আধঘণ্টা খানিকের পথ। এখান থেকে মাথেরন পাহাড়ের দৃশ্যও দেখা যায়। এই জলাধারটি বর্ষাজলপুষ্ট। ভরা শ্রাবণে বর্ষার বাড়তি জল, জলাধার উপচে গড়িয়ে আসে নীচে। অপূর্ব সে দৃশ্য। সিবিডি বেলাপুরস্থিত, ‘পারসিক হিল’ এও ভরা বর্ষায় দেখার একটা দারুণ এলাকা। সামান্য চড়াই পথটা সবুজ গাছগাছালিকে দুই পাশে নিয়ে এগিয়ে গেছে। বর্ষাস্নাত পিচ্ছিল পথ সাঁতরে পারসিক হিল পৌঁছে সেখান থেকে সূর্যের ডুবে যাওয়ার দৃশ্যটিও ভারি চমৎকার।

ময়দানে ফুটবল।--- ভবিষ্যতের মুলার-মেসি-নেমার!

শ্রাবণে— তাও আবার বর্ষায় প্রকৃতিকে বেশ কাছ থেকে নাগাল পেতে কাছেপিঠে আরও কত দ্রষ্টব্যই তো রয়েছে। বৃষ্টিস্নাত মায়াময় লোনাভালা। কিংবা বৃষ্টি অবকাশে আলিবাগ সৈকত অথবা মেঘ চাঁদোয়ায় ঢাকা পঞ্চগনি মহাবালেশ্বর। নয়তো ছুটির দিনে, ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি মৌতাতে বাড়িতেই একটু অন্য রকম আয়োজন হয়ে যাক ইলিশ-বিরিয়ানি। এক ঘেয়েমি হেঁসেল-টাকে বৃষ্টি মেদুরতায় সাদা ভাত আর ইলিশ বেগুন ঝোল কাঁচালঙ্কা কালোজিরে ফোড়ন দিয়ে। নয়তো ইলিশ ভাপা বা দই-ইলিশ। বষর্ণগীত মুখরিত মেঘমন্দ্রিত ছন্দে খিচুরি আর ইলিশ মাছ ভাজা আহা, জিভে জল।

শ্রাবণ নিয়ে লেখার মকসো করতে করতে অবধারিত ভাবে মনে পড়ল, অমরনাথ মন্দির যাত্রার কথাও। ‘শ্রাবণী মেলা’ উপলক্ষে বহু কাল ধরে অসংখ্য মানুষ যাত্রা করেন এই বিপদসঙ্কুল পাহাড়ি পথে। তবে, শুধুই কি আর তীর্থযাত্রা, প্রকৃতির নিরঙ্কুশ সৌন্দর্যের রসায়ন আস্বাদন করতেও তীর্থযাত্রী ছাড়াও বহু পর্যটক পাড়ি জমান অমরনাথ দর্শনে। কাশ্মীর লাগোয়া পীরপঞ্জাল পাহাড়শ্রেণি অধ্যুষিত রোমাঞ্চ রহস্য ও নিসর্গ নিয়ে ভারতের অন্যতম পবিত্র হিন্দু তীর্থ। হিন্দু পুরাণ মতে প্রাকৃতিক এই শিবলিঙ্গটি পাঁচ হাজারেরও অধিক পুরোনো।

অমরনাথ গুহা অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা এই শিবলিঙ্গটি আদতে ভূগোলের কারসাজি মাত্র। পাথরের ফাটল চুঁইয়ে জল জমে জমে স্ট্যালগমাইট প্রথায় প্রাকৃতিক ভাবেই লিঙ্গটি উৎপন্ন হয়। অমরনাথ যাত্রার উপযুক্ত সময় এই শ্রাবণে জুলাই থেকে মধ্য অগস্ট পর্যন্ত। কারণ, চাঁদের পরিক্রমা অনুযায়ী লিঙ্গের প্রাকৃতিক পরিকাঠামোটির সবচেয়ে বেশি উচ্চতা ও স্থায়িত্ব থাকে এই শ্রাবণ মাসেই।

এই বছর ২৮ জুন থেকে ১০ অগস্ট পর্যন্ত চালু থাকবে অমরনাথ যাত্রা। ১২,৭৬০ ফুট উচ্চতায় অমরনাথ গুহা— সেন্ট্রাল রিজার্ভ ফোর্স, ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইন্ডিয়ান প্যারা মিলিটারি ফোর্সের সক্রিয় সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে প্রতিবছরই অমরনাথ যাত্রার ব্যবস্থা করা হয়। সবথেকে বেশি সাহায্য পাওয়া যায় ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ থেকে। তবে ‘শ্রাবণী মেলা’ যাওয়ার অনুমতিপত্র, চিকিৎসকদের থেকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উপযুক্ত যাবতীয় তথ্য জমা দেওয়ার পরই— প্রতিটি নথিপত্র বিচারসাপেক্ষে অনুমোদন মেলে। যাত্রী পিছু রেজিস্ট্রেশন ফি ৫০ টাকা। হেলিকপ্টার যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন ফি আলাদা ভাবে আর লাগে না।

শুধুমাত্র বিশ্বাসের জোরে অগণিত ভক্ত এই দুর্গম অথচ লাবণ্যপূর্ণ পথের কঠিন যাত্রায় অবলীলায় শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে অমরনাথ পুণ্যদর্শণে আসেন। শ্রাবণ মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বাদ্বশী তিথিতে ‘ছড়ি’ মিছিলে ভক্ত সমাগম হয় আরও বেশি। এই ছাড়কে ‘যোগসিদ্ধ দণ্ড’ বলা হয়। ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে সবাই মিছিলে অংশ নেন। আশ্চর্য লক্ষণীয় ব্যাপার হল, অমরনাথ মন্দিরের পুজোর সামগ্রী বিক্রেতা, পিট্টুওলা, ডুলিওলা, তাঁবুওলা, মালবাহক, ঘোড়ার সহিস, ভাণ্ডারা কর্মচারী সবাই মুসলমান। তবু তারা কত নিষ্ঠাভরে সেবা ও সহযোগিতা করে চলেছেন অগণিত ওই হিন্দু তীর্থান্বেষী ভক্তদের।

শ্রাবণ মাসে আরও একটি বড় উৎসব হল সূর্যের দক্ষিণায়নের দিন ‘হিন্দোল’। চলতি নাম ‘ঝুলন যাত্রা’। প্রচলিত মধ্যে কৃষ্ণ অর্থাৎ বিষ্ণুর তিন ‘যাত্রা’। দোল, ঝুলন ও রাস। রাইকিশোরী ও কৃষ্ণের কুঞ্জবনে দোলনায় ‘দোলে দোদুল দোলে ঝুলনায়’ স্বর্গীয় প্রেমলীলার এক বর্ণময় সাক্ষর। কৃষ্ণ ও রাধারানির আমোদ আখ্যানের এক নিষ্কলুষ রূপ এই ঝুলন।

“ঝুলা ঝুলে রাধা দামোদরাবৃন্দাবন মেক্যায়সি ছায়ি হরিয়ালি অলি কুঞ্জ মে” শ্রাবণ মাসের একাদশী তিথিতে শুরু হয় ঝুলন উৎসব। শেষ হয় পাঁচ দিন পর শ্রাবণ পূর্ণিমায়। রাইকিশোরী ও গোপীবল্লভের প্রেমজ লীলার চিরকালীন প্রকাশ, আকাশকোণে শ্রাবণমেঘের চকিত আনাগোনার মাঝে ওই ঝুলন পর্ব।

বৃষ্টিভেজা উলুকঝুলুক মন তৈরি হয় আমাদের মনেও। এই বর্ষণ অথবা ভিজে ওঠা। আড়মোড়া ভেঙে একের পর এক পেরোতে থাকি বৃষ্টি আড়াল। ঘরের চার দেওয়াল তখন যেন সোঁদা গন্ধ মাখা বৃষ্টি আমেজ মাখামাখি। বৃষ্টির ছিটে ফোঁটা জল অথবা অথৈ শ্রাবণ, মনে পড়ায় কত সব পুরনো গানের স্মৃতিকথা।

বর্ষার গানগুলো মনে গুন গুন। এই প্রতিবেদনটি লিখতে লিখতেও আলটপকা মনে আসছে এমনই কিছু গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘এই মেঘলা দিনে একলা, ঘরে থাকে না তো মন’। একই সঙ্গে মনে এল, হেমন্ত-কন্যা রাণু মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘ঝির ঝির ঝিরঝির বর্ষায়, কিংবা ‘রিমঝিম এই শ্রাবণে’। আবার সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া ‘এল যে বরষা মনে তাই’—রিম ঝিম ঝিম, রিম ঝিম ঝিম, গান গেয়ে যাই। ও দিকে মান্নাদের গাওয়া ‘রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি’ এবং চলচ্চিত্রে নজরুলের সেই বেদনা মাখা গানটা ‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে।’

মুম্বই শিল্পী তালাত মাহমুদের গাওয়া বর্ষার গান ‘এই রিম ঝিম ঝিম বরষায়’ বা ‘মুখর বাদল দিনে’। সুধীন দাশগুপ্তের স্বরে ‘থই থই শ্রাবণ এলো ওই’, ‘আকাশ এত মেঘলা যেও না কো একলা’, ‘টাপুর টুপুর সারা দুপুর নূপুর বাজায় কে’, ‘শ্রাবণ চলো চলো’। হৈমন্তী শুক্লার গাওয়াও একটা ভারি মিষ্টি গান ‘বর্ষা তুমি চোখের পাতা ছুঁয়ো না’

লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বাংলা চলচ্চিত্রে অপর্ণা সেনের লিপে ‘বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি এ কোন অপরূপ সৃষ্টি’। আবার ‘বৃষ্টি তুমি ঝোরো না’কো ওমন করে’, ‘এই বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে চলো চলে যাই’। এখানকার আধুনিক বৃষ্টিগানগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে মনে আসছে শুভমিতার গাওয়া ‘বৃষ্টি পায়ে পায়ে’, মনোময়ের গাওয়া ‘চেয়ে দ্যাখো মেঘেরা’ রাঘব এর, ‘ওই মেঘে মেঘে’ শিলাজিতের ‘ঝিন্টি তুই বৃষ্টি হলে পারতিস’— এগুলো সবই ওই শিল্পীদের ব্যক্তিগত অ্যালবামে গাওয়া। শান-এর গাওয়া একটা গানও মনে পড়ল ‘রিমঝিম ধারাতে, চায় মন হারাতে’

ও দিকে হিন্দি চলচ্চিত্রের বর্ষা গানের সংগ্রহও দেখার মতো। কত জনপ্রিয় গান যে রয়েছে— প্রথমেই তো মান্না দে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘শ্রী ৪২০’ ছবির ‘প্যায়ার হুয়া ইকরার হুয়া’, কিশোর কুমার—আলিশা চিনয়-এর ‘মিঃ ইন্ডিয়া’ ছবির ‘কাটে নহি’, ‘মোহরা’ ছবির অলকা ইয়াগনিক উদিতনারায়ণের গাওয়া ‘টিপ টিপ বরষে পানি’, কিশোর কুমার-আশা ভোঁসলের কণ্ঠে ‘নকম হালাল’ ছবিতে প্রয়াতা স্মিতা পাতিল অভিনীত ‘আজ রপট যায়ে তো’। এ আর রহমানের সুরারোপিত শ্রেয়া ঘোষালের ‘বরষো রে মেঘা মেঘা’, ‘চলতি কা নাম গাড়ি’-তে কিশোরকুমারের ‘এক লড়কি ভিগি ভাগি সি’, ‘মঞ্জিল’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ‘রিমঝিম ঘিরে শাওন’, ১৯৪২-এ লভ স্টোরি’তে রাহুল দেববর্মন-এর সুরারোপিত ‘রিমঝিম রিমঝিম রুমঝুম রুমঝুম’, ‘লগন’ ছবিতে উদিতনারায়ণের ‘ঘনন ঘনন ঘনা আয়ি বরখা’, বরষাত কি এক রাত’ ছবির ‘শাওন আয়ো রে’, ‘পরখ’ ছবির ‘ও সজনা বরখা বাহার আয়ি’ লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে, ‘গুড্ডি’ ছবিতে বাণী জয়রামের গাওয়া ‘বোলে রে পাপিহারা’

মুশকিল হল প্রতিবেদনটি লিখতে লিখতে এই মুহূর্তে সব গানের কথা মনেও পড়ছে না। বাংলা ও হিন্দি সংগীত ভাণ্ডারে আরও কত যে বর্ষার উপযোগী গান আছে। এর মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রকৃতি পর্যায়ের বর্ষার গান বা রাগাশ্রয়ী গানও মনে পড়ছে— কিন্তু তালিকা বড় বেশি দীর্ঘ হয়ে পড়বে। বরং ‘ইজাজৎ’ ছবির গুলজারের লেখা সেই মরমী গানটির মতোই ‘ছোটি সি কাহানি সে, বারিষো কি পানি সে’ নিয়ে বর্ষার গানের প্রসঙ্গে আপাতত ইতি টানি।

শ্রাবণ নিয়ে লেখা তো যায় কত বিচিত্র আলোচনা। বিচিত্র কথার পরিসর বৃষ্টির সঙ্গে ভাব জমিয়ে প্রগলভ হয়ে পড়তে চায়। তবু শ্রাবণ আসলেই আপামর একটা দিন কিন্তু বিমর্ষ হয়ে থাকেন— বহু দশক পার করে আসা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণতিথি ২২শে শ্রাবণ।

শ্রাবণ দিনে ঝোড়ো বৃষ্টি হাওয়ায় মন ভেসে চলে। যে মায়াবী পথের শেষ আলকাপুরীর অলিন্দে-বাতায়নে ঝরোখায়। যে ভাবে ‘মেঘদূত’ হয়ে প্রবল এক প্রেমিকের জন্য মেঘ ভেসে এসেছিল তার প্রয়েসীর কাছে কুশলবার্তা পৌঁছে দিতে। মুগ্ধতা মাখা প্রিয় কথা, যা বলার ছিল লোকাচার ভুলে শ্রাবণ দিনেই তো ঝালিয়ে নেওয়া হৃদয়ের আনাচকানাচ। সে চাইবে বলেই তো এই সমর্পণ শাওনম ঘোর ঘনঘটার “এমন দিনে তারে বলা যায়—এমন ঘনঘোর বরিষায়...।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement