গত বারের চেয়ে আসন বেড়েছে দ্বিগুণ। এই দুর্দিনের বাজারে ফল পশ্চিমবঙ্গের চেয়েও ভাল। তবু স্বস্তিতে নেই কেরল সিপিএম। দু’বছর পরের বিধানসভা ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করার আগে দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং সাংগঠনিক ব্যর্থতা চিন্তায় রাখছে তাদের।
কেরলে ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে এ বার ৮টি জিতেছে বাম জোট এলডিএফ। পাঁচ বছর আগে সিপিএম একাই চারটি আসনে জয় পেয়েছিল। এ বার সিপিএম একক ভাবে পেয়েছে পাঁচটি আসন। একটি পেয়েছে সিপিআই এবং বাকি দু’টি বাম সমর্থিত নির্দল। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম যেমন একক ভাবে ২২.৩% ভোট পেয়ে দু’টি আসন পেয়েছে, কেরলে তারা অবশ্য ২১.৬% ভোট পেয়েও পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছে। বাংলায় বাম ভোটের হার ২৯.৫%। কেরলে এলডিএফের সামগ্রিক ভোট প্রায় ৩০%। আসনের বিচারে বঙ্গ ব্রিগেডকে টেক্কা দিতে পারলেও কেরলে তাঁদের ফল ‘সন্তোষজনক’ নয় বলেই পলিটব্যুরোকে রিপোর্ট দিয়েছেন পিনারাই বিজয়নেরা।
বিজয়নদের অস্বস্তির সব চেয়ে বড় কারণ প্রাক্তন বাম শরিক আরএসপি-র কাছে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবির পরাজয়। অনেক চিন্তাভাবনা করে লোকসভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার দায়িত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে বেবিকে লোকসভায় দাঁড় করিয়েছিল সিপিএম। কিন্তু তাঁর কোল্লম আসনটি নিয়ে বিবাদের জেরেই ভোটের আগে এলডিএফ ছেড়ে কংগ্রেসের জোটে যোগ দিয়েছিল আরএসপি। শেষ পর্যন্ত রাজ্য মন্ত্রিসভায় বেবির প্রাক্তন সহকর্মী, আরএসপি-র এন কে প্রেমচন্দ্রন ৩৭ হাজার ৬৪৯ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থীকে। পুরনো বাম শরিকের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার অস্বস্তি এমনিতেই আছে। তার উপরে প্রাথমিক পর্যালোচনায় বিজয়নদের সন্দেহ, সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের একাংশই তলে তলে আরএসপি-কে মদত দিয়েছেন। না হলে এমন ব্যবধান হয় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে দলীয় তদন্তের কথা ভাবছেন বিজয়নেরা।
আগামী মঙ্গলবার তিরুঅনন্তপুরমে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এবং পরের দু’দিন রাজ্য কমিটির বৈঠকেই এই ব্যাপারে সবিস্তার আলোচনা হবে। তার আগে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে বিজয়ন এখন এতটাই উত্তেজিত যে, প্রেমচন্দ্রন সম্পর্কে ‘স্কাউন্ড্রেল’ বিশেষণ ব্যবহার করে ফের বিতর্ক বাধিয়েছেন! কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্য, “ভোটে যিনিই জিতবেন, তিনিই দারুণ যোগ্য ব্যক্তি, এমন মনে করার কী কারণ আছে?”
পশ্চিমবঙ্গে যেমন বিজেপি, কেরলে তেমনই বামেদের পথের কাঁটা হয়ে দেখা গিয়েছে আপ। আম আদমি পার্টি ভোট কেটে নেওয়ার সৌজন্যেই ভাডাকারা আসনে মাত্র তিন হাজার আসনে হারতে হয়েছে সিপিএমকে। আবার এর্নাকুলামে আপ প্রার্থী অনিতা প্রতাপ প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়েছেন। বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজকে। দলের জেলা কমিটির আপত্তি উপেক্ষা করেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের প্রাক্তন সচিব ক্রিস্টিকে টিকিট দিয়েছিলেন বিজয়ন। এ বার জেলা কমিটি বিষয়টি নিয়ে ফের সরব হয়েছে। অন্য দুই নির্দল প্রার্থী ইনোসেন্ট এবং জয়েস জর্জ অবশ্য মান বাঁচিয়েছেন। আবার কাসারগোড় আসনে অভিজ্ঞ সাংসদ পি করুণাকরনের জয়ের ব্যবধান এক ধাক্কায় প্রায় ৬০ হাজার কমে যাওয়া উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিজয়নদের।
সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, “আগের বারের চেয়ে বামেদের আসন কেরলে দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু এ বার আমরা কেরল থেকে আরও বেশি আসন আশা করেছিলাম।” পলিটব্যুরোয় পেশ করা বিজয়নের রিপোর্ট রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বাংলায় বিজেপি-র অনুপ্রবেশ তত্ত্বের জেরে সংখ্যালঘু ভোট যেমন বেশির ভাগ শাসক দলের দিকে গিয়েছে, কেরলেও তেমনই নরেন্দ্র মোদী আতঙ্কে সংখ্যালঘুদের অনেকে কংগ্রেসের উপরে ভরসা করেছেন। তাতে ক্ষতি হয়েছে বামেদের। বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এখন থেকেই সে সব ফাঁকফোকর বোজাতে চাইছেন দক্ষিণী নেতারা।