প্রধানমন্ত্রী হয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়েছেন। রেস কোর্স রোডের বাড়িতে ঢোকার পরে বডোদরার জেতা আসনটিও ছেড়ে দিয়েছেন। তবু আমদাবাদের আমলা মহল বলছে গুজরাত সরকারে শেষ কথা এখনও নরেন্দ্র মোদীই, মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন পটেল নিছক নজরদার।
অনুগত আনন্দিবেনকে মুখ্যমন্ত্রী করার পর বকলমে মোদীই যে আমদাবাদে ছড়ি ঘোরাবেন, রাজনৈতিক মহলে এমন একটা ধারণা ছিলই। কিন্তু রাজ্য সরকারের সামান্য খুঁটিনাটি বিষয়ও যে ভাবে দিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন নরেন্দ্র মোদী, তাতে আমলা মহল অবাক। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আজ আনন্দিবেন এক মাস পূর্ণ করলেন। এই উপলক্ষে রাজ্যের জন্য তিনি যে সব কর্মসূচি নিয়েছেন, তা-ও মোদীকেই অনুসরণ করে করা। পূর্বসূরির কাজগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনিও ১০০ দিনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছেন, দিল্লিতে ঠিক যেমন ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
গুজরাত সরকারের এক শীর্ষ সূত্রের কথায়, মোদী যে তাঁর রাজ্যের রাশ এখনও হাতে রাখতে চান, তার সব থেকে বড় প্রমাণ নিজের ঘনিষ্ঠ আমলা কুনিইল কৈলাসনাথনকে দিল্লিতে না আনা। মোদী প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার আগে গাঁধীনগর থেকে দিল্লি সর্বত্রই জল্পনা ছিল, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হবেন কৈলাসনাথন, গুজরাতে সকলে যাঁকে ‘কে কে’ নামে জানেন। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মোদী তাঁকে দিল্লি আনেননি একটিই মাত্র কারণে। কে কে-র মাধ্যমে গুজরাত সরকারের যাবতীয় কাজ তিনি দিল্লি থেকে চালাতে পারবেন। হচ্ছেও সেটাই।”
মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় গুজরাতের সর্দার সরোবর বাঁধের উচ্চতা বাড়ানোর ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য মোদী বার বার মনমোহন সিংহ সরকারকে দুষেছেন। প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেই সেই সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তের জন্য মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সত্যিই ‘সুদিন’ এসে গিয়েছে। মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর গুজরাতের মন্ত্রীরাও একে একে দিল্লি এসে কেন্দ্রের মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করছেন। গত কালও রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ভূপেন্দ্রসিন চুড়াসমা দিল্লি এসে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু মন্ত্রীরা দিল্লিতে সেই বৈঠকের প্রচার করবেন কি না, তা-ও এখন স্থির হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয় থেকে। মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় গুজরাতে তাঁর সরকারে ছোট বড় যাবতীয় কৃতিত্ব যে ভাবে দিল্লি দরবারে নিয়ে আসা হতো, আনন্দিবেনের জমানায় তা-ও বন্ধ।
আমদাবাদের সচিবালয় সূত্রের মতে, গুজরাত সরকারে মোদী-ঘনিষ্ঠ আমলারা সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে। বিজেপির এক নেতার কথায়, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে যখন নিরন্তর সরাসরি যোগাযোগ চলছে, সেই সময় রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রীর শুধুমাত্র নজরদারি করা ছাড়া আর বিশেষ ভূমিকা নেই।” ক’দিন আগেই আনন্দিবেন দিল্লিতে মোদীর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন। আজ তিনি গুজরাতের জন্য যে ১০০ দিনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছেন, সেটিও প্রধানমন্ত্রী মোদীর আদলে। ১০০ দিনের কাজের নাম দিয়েছেন ‘গতিশীল গুজরাত’। সেখানে রাজ্যে অপুষ্টি দূর করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। গোটা রাজ্যে আরও ৫০ হাজার শৌচালয় তৈরির কথা বলা হয়েছে। ৭৫ হাজার যুবককে রোজগার দেওয়ার জন্য রাজ্যে ৩০০টি রোজগার মেলারও আয়োজন হচ্ছে। পুলিশে মহিলাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, মোদী অতীতে যা-যা ঘোষণা করেছিলেন, তার কিছুই পূরণ হয়নি। এখন আবার একই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। তবে রাজ্যের মন্ত্রী নিতিন পটেল বলছেন, “মোদী যে উন্নয়ন শুরু করেছিলেন, সেই কাজেই এ বার আরও গতি আনা হচ্ছে।”