Wrestlers Protest

পরিকল্পনায় পদক নিলাম, আবার দিল্লি ঘেরার ডাক

ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে দীর্ঘ সময় ধরে সরব আন্তর্জাতিক পদকজয়ী কুস্তিগির বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ০৭:৫৯
Share:

ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা নরেশ টিকায়েত। ছবি: পিটিআই

কুস্তিগিরদের সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে ফের দিল্লি ঘিরে ফেলার ডাক দিল খাপ মহাপঞ্চায়েত। কার্যত রাজধানীতে তিন বছর আগের কৃষক আন্দোলনের ছবি ফিরে আসার আশঙ্কা উস্কে দিলেন তাঁরা। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে সমাধানসূত্র না বেরিয়ে এলে প্রয়োজনে বিদ্রোহী কুস্তিগিরদের আন্তর্জাতিক পদক নিলামে চড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে মহাপঞ্চায়েত। এ নিয়ে চূড়ান্ত রণকৌশল ঠিক করতে আগামিকাল ফের হরিয়ানাতে একটি মহাপঞ্চায়েত ডেকেছেন খাপ প্রধানেরা। এরই মধ্যে শাসক শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়ে কার্যত কুস্তিগিরদের সমর্থনে মুখ খুলেছেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি সাংসদ প্রীতম মুণ্ডে। তিনি বলেন, ‘‘মহিলারা যখন অভিযোগ তুলেছেন, তখন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।’’

Advertisement

ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনে তাঁর গ্রেফতারির দাবিতে দীর্ঘ সময় ধরে সরব আন্তর্জাতিক পদকজয়ী কুস্তিগির বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিকেরা। দেশ জুড়ে ব্রিজভূষণকে সরানোর দাবি উঠলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত পদক্ষেপ করতে রাজি নয় মোদী সরকার। উল্টে আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের জোর করে যন্তরমন্তর থেকে তুলে দিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। কুস্তিগিরদের ওই হেনস্থা দেখে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ।

সামনে গো-বলয়ের একাধিক রাজ্যে ভোট। তার পরেই লোকসভা নির্বাচন। এই মরসুমে কুস্তিগিরদের এই হেনস্থার ঘটনায় যে দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে, তা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন অধিকাংশ বিজেপি নেতাই। কিন্তু দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ব্রিজভূষণের পাশে থাকায় প্রকাশ্যে এ নিয়ে এখনও মন্তব্য করার সাহস দেখাতে পারেননি তাঁরা। সেই সাহস আজ দেখিয়েছেন মহারাষ্ট্রের বীড এলাকার সাংসদ প্রীতম মুণ্ডে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গোপীনাথ মুণ্ডের মেয়ে আজ বলেন, ‘‘যখন কোনও মহিলা এ ধরনের অভিযোগ করছেন, তখন তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত ছিল। তদন্তকারী সংস্থার উচিত গোটা বিষয়টির বিশদে তদন্ত করা। আমি মনে করি তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতেই কোনও পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু কোনও ভাবেই অভিযোগকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।’’ কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়ান এবং রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার খাপ প্রধানেরা। রণকৌশল ঠিক করতে আজ উত্তরপ্রদেশে মুজফফ্‌রপুরের সৌরামে বৈঠকে বসেন প্রায় ৫০টি খাপের নেতা। বৈঠকের শেষে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা নরেশ টিকায়েত সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, ‘‘আগামী পাঁচ দিন পরে যা খুশি তাই হতে পারে। সরকার যেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টির সমাধানে এগিয়ে আসে।’’

Advertisement

আজকের বৈঠকের পরে খাপ প্রধানেরা একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই কমিটির সদস্যরা বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করবেন। পাশাপাশি আজকের বৈঠকে প্রয়োজনে উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা লাগোয়া দিল্লি সীমান্ত ফের একবার বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিন বছর আগে বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে প্রায় এক বছর দিল্লির সীমান্ত কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী কৃষকেরা। সেই ছবির পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আজ সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছেন খাপ প্রধানেরা। পাশাপাশি পদকগুলি নিলাম করার সিদ্ধান্তও হয়েছে আজ। পুলিশের হাতে নিগ্রহের পরে সোমবার হরিদ্বারে হর কি পৌড়ি ঘাটে পদক বিসর্জন দিতে গিয়েছিলেন কুস্তিগিরেরা। সে সময়ে তা আটকান নরেশ টিকায়েত। আজ মহাপঞ্চায়েতের শেষে তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনে ওই পদকগুলি নিলাম করা হবে।’’ মূলত আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতেই নিলামের সিদ্ধান্তনিয়েছেন তাঁরা।

আজকের মহাপঞ্চায়েতে সরকারের বিভাজনের নীতির সমালোচনায় সরব হন খাপ প্রধানেরা। খাপ তথা কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েত বলেন, ‘‘এই সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হল বিভাজন সৃষ্টি করা। এরা বিহারে লালুপ্রসাদের পরিবারে, উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহের পরিবারে, হরিয়ানায় চৌটালা পরিবারে ভাঙন ধরিয়েছে। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে রাজস্থানে।’’ আগামিকাল হরিয়ানায় ফের একটি মহাপঞ্চায়েত ডাকা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন অন্য রাজ্যের প্রতিনিধিরাও। টিকায়েত জানিয়েছেন, আজকের সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে আগামিকালের বৈঠকে আলোচনা হবে। তার পরেই চূড়ান্ত রণকৌশল ঘোষণা করা হবে।

লোকসভা নির্বাচনের আগে যে ভাবে কৃষকেরা ফের পথে নামার হুমকি দিচ্ছেন, তাতে অস্বস্তিতে বিজেপি নেতৃত্ব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আজ ফের মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। তিনি বলেন, ‘‘কুস্তিগিরদের দাবির প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। তাঁরা তদন্তের দাবি করেছিলেন। তদন্ত করা হচ্ছে। তাই আমার আবেদন, যত দিন পুলিশ তদন্ত শেষ না করছে, তত দিন ধৈর্য্য ধরুন। তদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে সরকার।’’ কুস্তিগিরদের আন্দোলন সত্ত্বেও দল তাঁর পাশে রয়েছে বুঝে আজ ফের সরব হয়েছেন অভিযুক্ত ব্রিজভূষণও। কুস্তিগিরদের দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেছেন, ‘‘গোড়ায় কুস্তিগিরদের আন্দোলনের যে দাবি ছিল, তা থেকে সরে গিয়ে এখন তাঁরা অন্য দাবি তুলছেন। ওরা তদন্ত চেয়েছিল। তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের সেই চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।’’ ব্রিজভূষণ আজ ফের দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি ফাঁসিতে ঝুলতে রাজি আছেন।

এ দিকে কুস্তিগিরদের ন্যায়বিচারের দাবিতে কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে আজ ওয়াক আউট করলেন তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব এবং অসিত মাল। জানা গিয়েছে, খুব দ্রুত তৃণমূল সাংসদদের এক প্রতিনিধিদল কুস্তিগিরদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করবে। আজ স্থায়ী কমিটিতে তৃণমূলের দুই সাংসদ দাবি জানান যে, কুস্তিগিরদের আন্দোলনের বিষয়টিও আলোচনায় আনা হোক। কিন্তু এই দাবি মানেননি যুব ও ক্রীড়া দফতরের প্রধান এবং বিজেপি সাংসদ বিবেক ঠাকুর। সূত্রের খবর, তার পরই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সুস্মিতারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement