কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। —ফাইল ছবি।
জেডিএস সাংসদ প্রজ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে শোরগোল কর্নাটকে। তার রেশ কাটার আগেই এক মহিলার রহস্যময় মৃত্যুতে ফের সরগরম দক্ষিণের এই রাজ্যের রাজনীতি।
গত ১৪ মার্চ সদাশিবনগর থানায় এক মহিলা অভিযোগ করেছিলেন, একটি কাজে বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পার বাড়িতে গিয়েছিল তাঁর ১৭ বছরের মেয়ে। সেই সময়ে ইয়েদুরাপ্পা ওই নাবালিকার যৌন হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। এর পরেই নরেন্দ্র মোদীর দলের ওই প্রবীণ নেতার বিরুদ্ধে পকসো আইনে অভিযোগ দায়ের হয়। সেই মামলার সুবাদেই কর্নাটক হাই কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী এস বালনের সঙ্গে আজ সাক্ষাতের কথা ছিল নির্যাতিতার মায়ের। দেখা করার ঠিক এক দিন আগে, রবিবার রহস্যময় মৃত্যু হয় ৫৩ বছরের ওই মহিলার। এই মৃত্যুর কারণ নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। এর পিছনে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ইয়েদুরাপ্পার হাত আছে কি না, প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
আইনজীবী ও সমাজকর্মী বালন এই ঘটনায় ময়নাতদন্তের দাবি করেছেন। বালন বলেন, “তাঁর আইনজীবী সাহায্য করছেন না বলে আমাকে জানিয়েছিলেন। তাই আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। যাতে আমি ওই নির্যাতনের মামলায় সাহায্য করতে পারি। সমস্ত নথিপত্র নিয়ে আজ বিকেল সাড়ে ৫টায় তাঁর দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরে তাঁর মৃত্যুর খবর শুনলাম।” এর পাশাপাশি ওই আইনজীবী জানান, নির্যাতিতার মায়ের দেহ হাসপাতালের পিছনের দরজা দিয়ে কার্যত গোপনেই বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। গোটা ঘটনায় রহস্যের ইঙ্গিত মিলেছে। সেই সুবাদেই বালন ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
মৃতাকে সাহায্য করেছিলেন, এমন এক সমাজকর্মী জানিয়েছেন, মেয়ের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিকারে অনড় ছিলেন। তাই ছেলে এবং পরিবারের বাকিদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়। কিন্তু মৃত্যু হতেই ছেলে এবং ওই মহিলার ভাই হাসপাতালে গিয়ে দেহ নিয়ে নেন। কোনও ময়নাতদন্ত হয়নি।
যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখানকার মেডিক্যাল ডিরেক্টর মোহন এমআর জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টের সমস্যাজনিত কারণে গতকাল মাকে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করে মেয়ে। পরে ওই মহিলার ছেলেও আসেন। ওই মহিলা গত আট বছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। গত দেড় বছর ধরে ফুসফুসের ক্যানসারেও আক্রান্ত হন। শ্বাসকষ্টের সমস্যাও ছিল। গতকাল রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সাড়ে ৯টা নাগাদ মৃত্যু হয় ওই মহিলার।
চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওই মহিলার পরিজনকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে ময়নাতদন্তও করা যেত। কিন্তু মৃতার পরিজন অভিযোগ না জানিয়ে দেহ নিয়ে চলে যান। সেই সময়ে হাসপাতালে পুলিশও উপস্থিত ছিল।
পুলিশ সূত্রেও জানানো হয়েছে, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তবে আইনজীবীর সঙ্গে হাইপ্রোফাইল মামলা সংক্রান্ত কথাবার্তার আগেই অতর্কিত মৃত্যু নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, স্বয়ং মোদী যখন ভোটের প্রচারে বার বার বিকশিত ভারত এবং মহিলাদের সুরক্ষা সংক্রাম্ত কথা তুলে আনছেন, সেখানে দক্ষিণ ভারতে তাঁর দলেরই গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইয়েদুরাপ্পা নাবালিকার যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত। এই অবস্থাতেও কী ভাবে ইয়েদুরাপ্পার ছেলেকে রাজ্য সভাপতি করল বিজেপি? অনেকে অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছেন শুধু ইয়েদুরাপ্পা নন, ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ থেকে চিন্ময়ানন্দ— বিজেপির বহু নেতার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।