প্রতীকী ছবি।
ঘুটঘুটে অন্ধকার গ্রাম্য রাস্তা। দু’পাশে জঙ্গল। রাত তখন আড়াইটে হবে। জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম্য রাস্তার বুক চিরে সশব্দে এগিয়ে চলেছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। ভিতরে কয়েক জন প্যারামেডিক কর্মী শশব্যস্ত এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে নিয়ে। হাতে বেশি সময় ছিল না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মহিলাকে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হবে!
কিন্তু, রোগীর বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার এগোতেই অ্যাম্বুল্যান্স থেমে গেল। বলা ভাল, চালককে অ্যাম্বুল্যান্সটি থামানোর নির্দেশ দিলেন ভিতরে থাকা প্যারামেডিক কর্মীরা। কারণ মহিলার প্রসব যন্ত্রণা বাড়তে বাড়তে তত ক্ষণে রক্তপাত শুরু হয়ে গিয়েছে। শিশুর মাথাটাও গর্ভ থেকে অর্ধেক বেরিয়ে এসেছে। প্যারামেডিক কর্মীরা গোটা ঘটনাটি জানিয়ে হাসপাতালের চিকিত্সকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সেই মুহূর্তে কী কী করণীয় গোটা বিষয়টিই ফোনের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে জানাচ্ছিলেন চিকিত্সক। তিনি প্রসব করানোর পরামর্শ দেন। এমনিতেই অ্যাম্বুল্যান্সের আয়তন ছোট। তার মধ্যে যুদ্ধকালীন তত্পরতায় কাজ শুরু হয়ে যায়। প্যারামেডিক কর্মীরা ওই মহিলার প্রসব করান।
যখন জঙ্গলের মধ্যে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে গোটা বিষয়টি সামলাচ্ছিলেন, তাঁরা টেরই পাননি তত ক্ষণে অ্যাম্বুল্যান্সের বাইরে হাজির হয়েছে এক দল অতিথি। মহিলার প্রসব করিয়ে প্যারামেডিক কর্মীরা অ্যাম্বুল্যান্সটিকে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চালককে বলেন। কিন্তু তিনি গাড়িটি এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহস পেলেন না।
আরও পড়ুন: সামান্য দামি হচ্ছে রেলের বাতানুকূল
কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি? না, তেমন কিছু নয়, জানিয়ে দেন চালক। তবে? ওই অতিথিদের এড়িয়ে গাড়ি এগনো কার্যত অসম্ভব।
অ্যাম্বুল্যান্স থেকে কর্মীরা বাইরে উঁকি মারতেই চমকে ওঠেন। একটা বা দুটো নয়, এক পাল সিংহ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে অ্যাম্বুল্যান্সের পথ আটকে দাঁড়িয়েছে! শুধু তাই নয়, ধীরে ধীরে গোটা অ্যাম্বুল্যান্সটাকে ঘিরে ধরে আরও ডজনখানেক সিংহ। অ্যাম্বুল্যান্স চালক অপেক্ষা করছেন সিংহগুলো রাস্তা ছেড়ে দিলেই সেখান থেকে সোজা বেরিয়ে যাবেন। তা কিন্তু হল না। সিংহগুলো ঠায় বসে রইল অ্যাম্বুল্যান্সটাকে ঘিরে।
শিশুটি জন্ম নেওয়ার কিছু ক্ষণ পরই সিংহের পাল আস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে যায়। যেন শিশুটির জন্মের জন্যই তারা অপেক্ষা করছিল! ২৯ জুন, বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে গুজরাতের আমরেলি জেলার লুনাসাপুর গ্রামে। এই গ্রামটি গির অরণ্য লাগোয়া।
সিংহের দল সরতেই চালক বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সোজা জাফরাবাদ সরকারি হাসপাতালে পৌঁছন। সদ্যোজাত ও তার মাকে ভর্তি করানো হয়। হাসাপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’জনেই ভাল রয়েছে।
শিশুটি জন্ম নেওয়ার কিছু ক্ষণ পরই সিংহের পাল আস্তে আস্তে সেখান থেকে সরে যায়। ছবি: সংগৃহীত।
সেই রাতের কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না লুনাসাপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর বত্রিশের মহিলা মঙ্গুবেন মাকওয়ানা। প্রসব যন্ত্রণা ওঠায় তাঁর বাড়ির লোক ১০৮ ইমারজেন্সি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবায় খবর দেন। যথা সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স মঙ্গুবেনের বাড়িতে পৌঁছে তাঁকে নিয়ে জাফরাবাদ শহরের সরকারি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু মাঝপথেই সেই রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় মঙ্গুবেনকে।
১০৮ পরিষেবার ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট একজিকিউটিভ চেতন গারহে বলেন, “যখন মাকওয়ানাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেয় অ্যাম্বুল্যান্সটি, ইমারজেন্সি ম্যানেজমেন্ট টেকনিশিয়ান (ইএমটি) অশোক মাকওয়ানা বুঝতে পারেন যে কোনও মুহূর্তে সন্তানের জন্ম দিতে পারেন মঙ্গুবেন। কারণ তত ক্ষণে গর্ভস্থ শিশুর মাথা অর্ধেকটা বেরিয়ে এসেছিল। তখনই চালক রাজুকে জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুল্যান্সটি থামিয়ে দিতে বলেন।” গারহে আরও জানিয়েছেন, মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে তখনই পাশের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে এক দল সিংহ।
তবে এই প্রথম নয়, ১০৮ পরিষেবা এর আগেও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। কর্মীরা এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে কাজ করবেন, তা নিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।