মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে ধর্ষণ সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি ছিল। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মহিলারা ধর্ষণ করতে পারেন না। তবে ধর্ষণে প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে তাঁদের অভিযুক্ত করা যেতেই পারে। একটি মামলায় এমনটাই মন্তব্য করল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এক মহিলা। তাঁর বিরুদ্ধে যে ধারা আনা হয়েছে, সেগুলিও আদালত বদলে দিয়েছে। মহিলাকে ধর্ষণে প্ররোচনা এবং সহায়তায় অভিযুক্ত করেছে আদালত।
২০২২ সালের ২১ অগস্টের মামলা। প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন তরুণী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছিল পুলিশ। তরুণী জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু অভিযুক্ত তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিক বার জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। কখনও এই ঘটনা ঘটেছে অভিযুক্তের বাড়িতে, কখনও আবার হোটেলে। এই কাজে অভিযুক্তের মা এবং ভাই তাঁকে সহায়তা করেছেন বলে পুলিশকে জানান তরুণী।
মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের জবলপুর শাখায় এই মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি প্রমোদকুমার আগরওয়ালের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মহিলারা ধর্ষণ করতে পারেন না। তবে এটা স্পষ্ট যে, তাঁরা ধর্ষণে প্ররোচনা দেওয়ার দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১০৯ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত হতে পারেন। প্ররোচনা ধর্ষণের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক এবং স্বতন্ত্র একটি অপরাধ। যদি প্ররোচনার কারণে ওই কাজ সংঘটিত হয়ে থাকে, তবে মহিলা, পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও ব্যক্তিকে এর জন্য দায়ী করা যেতে পারে এবং শাস্তি দেওয়া যেতে পারে।’’
কী ভাবে ধর্ষণে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল?
সরকার পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য, অভিযুক্তের মা এবং ভাই তাঁর সঙ্গে জোর করে তরুণীকে একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ঘরটি বন্ধ করে দিতেন। তাঁরা বলতেন, বিয়ের আগে প্রেমিকের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এখন স্বাভাবিক বিষয়। অভিযুক্তের আচরণকেও তাঁরা সমর্থন করতেন। তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হত তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিক, তাঁর মা এবং ভাই— তিন জনের বিরুদ্ধেই ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) সংশ্লিষ্ট ধারায় (ধর্ষণ, একই মহিলাকে বার বার ধর্ষণ, খুন বা গুরুতর আঘাতের হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো ইত্যাদি) মামলা রুজু করা হয়।
নিম্ন আদালত ধর্ষণ-সহ সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ধারাতেই তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছিল। তা চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্তেরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্তের সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অর্থাৎ, তাঁদের সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে। অভিযুক্ত হিসাবে যুবকের মা এবং ভাইয়ের নাম পরে যোগ করা হয় বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু বিচারপতি এই দাবি নস্যাৎ করেছেন। ধর্ষণে অভিযুক্তের মা এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে প্রযুক্ত ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ) সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণে প্ররোচনার ধারা বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ধারাগুলিতে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।