মনোজের মৃত্যুর ন’মাস পরে মুখ খুলেছেন তার মা। ছবি: সংগৃহীত।
বছরখানেক হতে চলল মনোজ নেই। ১৬ বছরের তরতাজা কিশোর দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছে আচমকাই। সেই শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি মনোজের মা অনু। জানিয়েছেন, মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল মনোজ, “আচ্ছা, আমি মরে গেলে কষ্ট পাবে?” ছেলের কথা শুনে সে সময় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন অনু। এর মাস কয়েক পরেই গত ২৬ জুলাই গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিল একাদশ শ্রেণির ছাত্র মনোজ সি মনু।
পুলিশের খাতায় মনোজের মামলা দায়ের করা রয়েছে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে। তবে অনুর দাবি, ‘ব্লু হোয়েল’-এর ফাঁদে পড়েই প্রাণ গিয়েছে তাঁর ছেলের। ছেলের মৃত্যুর প্রায় ন’মাস পরে মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের কাছে ‘মালায়ালা মনোরমা’র একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সেই দাবি করেছেন অনু। কেরলের তিরুঅনন্তপুরম শহরের পেরুকুলামের বাসিন্দা অনু জানিয়েছেন, গত নভেম্বর থেকেই মনোজের আচরণ বদলে যেতে থাকে। বন্ধুবান্ধব সকলের থেকে মেলামেশা কমিয়ে দেয়। একা একা থাকতে শুরু করে সে। মিথ্যে কথা বলে একাই সমুদ্রের ধারে ঘুরতে চলে যেত। সারা রাত জেগে থাকত। ভোর ৫টায় ঘুমাতে যেত। কখনও আবার নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ত। যদিও সাঁতার জানত না মনোজ। কবরখানায় ঘুরে বেড়াত। এমনকী, বন্ধুদের দিয়ে নিজের হাতে কম্পাস দিয়ে তিনটে অক্ষরও খোদাই করেছিল সে।
আরও পড়ুন
তিনতলার নীচে রাস্তায় পড়ে বিমানসেবিকার থেঁতলানো দেহ
গত জানুয়ারি থেকে আরও অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে মনোজ। হঠাৎই মার কাছে জানতে চায়, “আমি চলে গেলে তুমি সেই দুঃখ ভুলতে পারবে?” মনোজের কথায় একেবারে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন অনু। তাকে জানিয়েছিলেন, দুই ছেলেমেয়েই দু’চোখের মণির মতো প্রিয়। তবে মনোজ জানিয়েছিল, সে চলে গেলে তার বোনকে সমস্ত ভালবাসা দিতে। মনোজের কথা শুনে চোখের জল বাধ মানেনি অনুর। মেয়ের মতোই মনোজও যে খুব প্রিয় তাঁর! সে সময়ই মনোজের কাছে ‘ব্লু হোয়েল’ চ্যালেঞ্জের কথা প্রথম জানতে পারেন অনু। মনোজ জানিয়েছিল, ৫০টা লেভেল পেরিয়ে এ খেলার শেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় খেলোয়াড়কে। তার আগে নিজের উপর নানা ধরনের নির্যাতন থেকে শুরু করে খুন করার মতোও টাস্ক পেরতে হয়। ছেলের কাছে এ ধরনের খেলার কথা শুনে তা খেলতে বারণ করেছিল অনু। অনুর দাবি, ‘ব্লু হোয়েল’-এর জন্যই আত্মহত্যা করেছে মনোজ।
আরও পড়ুন
গলা জলে নেমে স্কুলে পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতা দিবসে ভাইরাল ছবি
অনুর মতো মনোজের কাকাও একই দাবি করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, শেষের দু’মাস একেবারেই বদলে গিয়েছিল মনোজ। এই মামলার তদন্তকারী আধিকারিক ভিলাপ্পিশালা এস আই জানিয়েছেন, এই দাবির পাশাপাশি মনোজের মোবাইল ফোনও পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন অনু।