প্রতীকী ছবি
প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই। নেই টাকার জোর। আছে প্রতিভা। তার জোরেই টিকটকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়ার মঞ্চ পেয়েছিল অজ ভারতের জনতা। টিকটক না থাকলে তাই এমন প্রতিভাদের পরিচিতি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। তবে সমাজমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত অনেকেরই ধারণা, নতুন মঞ্চও তাঁরা খুঁজে নেবেন।
টিকটকের মাধ্যমেই ‘বাবা জ্যাকসনের’ খোঁজ পেয়েছিল দেশ। এ বছরের গোড়াতেই মাইকেল জ্যাকসনের নাচের ঢংয়ে ওই তরুণের টিকটক ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। হৃতিক রোশন, অমিতাভ বচ্চনের মতো বলিউড তারকারা সেই নাচ দেখে মুগ্ধ হয়ে জানতে চান তাঁর পরিচয়। জানা যায়, রাজস্থানের বাসিন্দা, এক দিনমজুরের ছেলে যুবরাজ সিংহেরই রয়েছে এমন গুণ। মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম জামড়ে খবরে আসে সেখানকার এক দম্পতির বলিউডি গানের সঙ্গে নাচের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে। টিকটক না থাকলে কি এঁদের পরিচিতি মহল্লার গণ্ডি ছাড়াত, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
মঙ্গলবারই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে একই সুরে সওয়াল করেন টিকটকের কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট নিরালি শাহ। এমনই নানা অচেনা মানুষদের ভিডিয়ো শেয়ার করে তিনি লিখেছেন, ‘‘সবাইকে সুযোগ দেয় এমন একটা মঞ্চ বাতিল করে দিলে নেপোটিজম, বহিরাগতদের বাদ দেওয়া— এ সব নিয়ে কথা বলা চলে না।’’ তিনি শেয়ার করেছেন মেঘা নামের এক তরুণীর ভিডিয়ো, যাঁর দুটি হাতই নেই, কিন্তু তাও অভিনয় ক্ষমতার জোরে ভিডিয়ো বানিয়ে ২০ লক্ষ ফলোয়ার পেয়েছেন তিনি।
টিকটকে জনপ্রিয়তার জেরে রোজগারও হত অনেকের। খোদ কেন্দ্রীয় সরকার যুবসমাজের কাছে পৌঁছতে তাদের স্কিল ইন্ডিয়া প্রকল্প নিয়ে টিকটকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল। এখন টিকটক না থাকলে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সেই সুযোগ নিতে চাইবে বলে মনে করছেন অনেকেই। জামড়ের ওই দম্পতিও বলেছেন, তাঁরা এ বার ইউটিউবে ভিডিয়ো বানাবেন। বাংলার পরিচিত ইউটিউবার কিরণ দত্ত ওরফে ‘দ্য বং গাই’ বলছেন, ‘‘যাঁরা পরিচিতি পেয়েছেন, তাঁরা তো নিজেদের কাজ থামাবেন না। তাঁরা অন্য মঞ্চ খুঁজবেন। অনেকে তাঁদের ফলোয়ারদের ইনস্টাগ্রামে নিয়ে চলে গিয়েছেন। যে হেতু চাহিদা রয়েছে, তাই তথ্য সুরক্ষিত রেখে দেশেই এমন অ্যাপ বানানো উচিত। তা হলে দেশের প্রতিভাবানদের আর অন্য দেশের অ্যাপের উপর নির্ভর করতে হবে না।’’
চাহিদা থাকায় টিকটকের আদলে ‘মিত্রোঁ’, ‘চিঙ্গারি’-র মতোও দেশীয় অ্যাপও জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে টিকে থাকতে হলে অবশ্য ক্ষণিকের জনপ্রিয়তা নয়, নিজেদের সৃজনশীলতা বাড়াতে হবে বলেই মনে করছেন কিরণ। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালও বলছেন, ‘‘সিনেমার পর্দার দুনিয়ার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই। সেই দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ থেকে তাঁদের অনুকরণের ইচ্ছে আসে। তাতে পরিচিতিও মেলে। কিন্তু স্থায়ী পরিচিতি পেতে হলে নিজের সৃষ্টিশীলতার বিকাশই জরুরি।’’