কয়লা কাণ্ড

মনমোহনকে জেরা নয় কেন, প্রশ্ন আদালতের

সংসদের অধিবেশন চললে তিনি নিয়ম করেই রাজ্যসভায় হাজিরা দেন। আবার দিনের শেষে তিন নম্বর মতিলাল নেহরু মার্গের বাড়িতে ফিরে যান। দশ বছর প্রধানমন্ত্রীর গদিতে থাকতেই তাঁর বিরুদ্ধে মৌন থাকার অভিযোগ উঠেছিল। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় তিনি আরও মুখ বন্ধ রাখেন। রাজনীতির আসরে তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনাও কম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৩০
Share:

সংসদের অধিবেশন চললে তিনি নিয়ম করেই রাজ্যসভায় হাজিরা দেন। আবার দিনের শেষে তিন নম্বর মতিলাল নেহরু মার্গের বাড়িতে ফিরে যান। দশ বছর প্রধানমন্ত্রীর গদিতে থাকতেই তাঁর বিরুদ্ধে মৌন থাকার অভিযোগ উঠেছিল। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় তিনি আরও মুখ বন্ধ রাখেন। রাজনীতির আসরে তাই তাঁকে নিয়ে আলোচনাও কম।

Advertisement

আজ হঠাৎ মনমোহন সিংহের নাম আবার আলোচনায় উঠে এল। প্রসঙ্গ কয়লাখনি বণ্টনে দুর্নীতি। আজ দিল্লিতে বিশেষ আদালত সিবিআইকে প্রশ্ন করেছে, কেন কয়লাখনি দুর্নীতির তদন্তে মনমোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি? কারণ যে সময়ের দুর্নীতি, তখন মনমোহনই কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। আদালতে সিবিআই জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা মনমোহন সিংহকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। সিবিআইয়ের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতিও তাদের দেওয়া হয়নি। কংগ্রেস নেতৃত্ব বরাবরই মনমোহনকে ‘দুর্নীতিমুক্ত প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে তুলে ধরলেও কয়লা খনি বণ্টন কেলেঙ্কারিতে মনমোহন সিংহের নাম আগেও জড়িয়েছে। ২০০৫ সালে কুমারমঙ্গলম বিড়লার মালিকানাধীন হিন্ডালকো ইন্ডাস্ট্রিজকে ওড়িশার দু’টি কয়লাখনি বরাদ্দ করা হয়। সে সময় প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের হাতেই কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল। ওই খনি বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়েই আজ আদালতে শুনানি চলছিল। বিচারক ভরত পরাশর সিবিআইকে প্রশ্ন করেন, “আপনাদের কি মনে হয়নি, এ বিষয়ে কয়লামন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি? আপনাদের মনে হয়নি যে স্পষ্ট ছবিটা পেতে ওঁর বক্তব্যটাও দরকার?”

সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী দফতরের তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি টি কে এ নায়ার এবং জাভেদ উসমানিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কী ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়? সিবিআই জানায়, তাঁদের কাছে প্রশ্ন পাঠিয়ে জবাব চাওয়া হয়েছিল। তাঁদের বক্তব্য জানার পরেই মনমোহন সিংহকে আর জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন বলে মনে হয়নি। আদালত এই মামলার পুলিশ ফাইল এবং কেস ডায়েরি দেখতে চেয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি হবে। সিবিআই সূত্রের খবর, তৎকালীন কয়লামন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহকে জেরা করা হবে কি না, তা নিয়ে তদন্ত সংস্থার অন্দরমহলেই দ্বিমত ছিল। তদন্তকারীদের এক জনের ধারণা ছিল, মনমোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। কিন্তু সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিত সিন্হা মত দেন, মনমোহনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন নেই। গত বছর হিন্ডালকোকে কয়লাখনি বণ্টন দুর্নীতির তদন্তে কুমারমঙ্গলম বিড়লা, প্রাক্তন কয়লা সচিব পি সি পরাখের বিরুদ্ধে এফআইআর করে সিবিআই। সেই এফআইআর-এর খসড়াতেও প্রাথমিক ভাবে কয়লামন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহের নাম ছিল বলে সিবিআই সূত্রের খবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কয়লামন্ত্রীর প্রসঙ্গ বাদ দেওয়া হয়। এর পর সাত তাড়াতাড়ি হিন্ডালকোর বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল সিবিআই। সে কারণে আদালতে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সিবিআইকে।

Advertisement

আগামী বৃহস্পতিবার আদালতে এই মামলার জল কোন দিকে গড়ায়, সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সিবিআই কর্তারা। রাজনীতিকরা মনে করছেন, তিন নম্বর মতিলাল নেহরু মার্গের বাসিন্দারও নজর সে দিকেই থাকবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement