শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংসদে রাহুলের সদস্যপদ খারিজ হওয়ার পর কংগ্রেস সদর দফতরে বৈঠকে যোগ দিতে যান প্রিয়ঙ্কা। ফাইল চিত্র ।
বার বার ‘মিরজাফর’ বলে রাহুল গান্ধীকে এবং কংগ্রেস পরিবারকে অপমান করেছে বিজেপি। কিন্তু কোনও বিচারক তো তার জন্য ওই বিজেপি নেতাদের সাজা ঘোষণা করেননি। তাঁদের সদস্যপদও খারিজ করা হয়নি! তা হলে কেন রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করা হল? প্রশ্ন তুললেন রাহুলের সহোদরা তথা কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢ়রা। রাহুল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও তাঁর দাবি। প্রসঙ্গত, রাহুলের লন্ডনে করা মন্তব্য প্রসঙ্গে সম্প্রতি বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছিলেন, রাহুল বর্তমান ভারতীয় রাজনীতির ‘মিরজাফর’। সেই প্রসঙ্গই উঠে এল প্রিয়ঙ্কার কথায়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংসদে রাহুলের সদস্যপদ খারিজ হওয়ার পর কংগ্রেস সদর দফতরে একটি বৈঠকে যোগ দিতে যান প্রিয়ঙ্কা। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপির মুখপাত্র, মন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, আমার পরিবারের জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, রাহুলের সম্পর্কে লাগাতার সমালোচনা করে চলেছেন। অশালীন ভাষা ব্যবহার করছেন। তাঁদের সম্পর্কে কিছু না কিছু খারাপ কথা সব সময় বিজেপির অন্দর থেকে উঠে আসে। এটা প্রায় হয়। গোটা দেশ তার সাক্ষী। তা হলে কেন কোনও বিচারক ওই বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দু’বছরের সাজা ঘোষণা করেননি? কেন তাঁদের সদস্যপদ বাতিল করা হল বলে ঘোষণা করা হয়নি?’’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘আমার দাদা আদানিকাণ্ডের কথা তুলেছিল এবং তার জন্যই এ রকম করা হল। মানহানির মামলায় তো স্থগিতাদেশ ছিল। কেন হঠাৎ আমার দাদা সংসদে আদানি সম্পর্কে বক্তৃতা দেওয়ার পরই সেই মামলাটি নতুন করে উঠল।’’
প্রিয়ঙ্কা জানান, গান্ধী পরিবার ভারতের জনগণের হয়ে আওয়াজ তুলেছে। এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সত্যের জন্য লড়াই করে এসেছে। এ-ও বলেন, রাহুল মাথা নত করবেন না। কারণ, তিনি এমন একটি পরিবারের সদস্য, যাঁরা তাঁদের রক্ত দিয়ে গণতন্ত্রকে লালন করে এসেছেন।
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে রাহুল প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘সব চোরেদের পদবি ‘মোদী’ কেন?’’ আইপিএল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ললিত মোদী, ব্যাঙ্ক-ঋণ মামলায় ‘পলাতক’ নীরব মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তুলনা টেনেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় রাহুলের বিরুদ্ধে ‘পদবি অবমাননার’ অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ এবং ৫০০ ধারায় অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছিলেন গুজরাতের বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদী। সেই মামলাতেই বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত হন রাহুল। তাঁকে দু’বছরের করাদণ্ডের সাজা শোনান সুরত জেলা আদালতের বিচারক এইচএইচ বর্মা। তারই ভিত্তিতে ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-র ৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুক্রবার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা।
রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়ার পর থেকেই শুক্রবার নরেন্দ্র মোদী সরকারে বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের অভিযোগ তুলে অন্য বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাম, জেডি(ইউ), ডিএমকে, আম আদমি পার্টি (আপ)-ও। কংগ্রেসের কর্মীরা দেশ জুড়ে রাস্তায় নেমে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন।