Jammu and Kashmir Terror Attack

পহেলগাঁও: হিসাব কষেই কি অমরনাথযাত্রার আগে হামলা চালাল জঙ্গিরা? নিরাপত্তায় গাফিলতি ঠিক কোথায় ছিল

নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে বিস্তর ফাঁকফোকর রয়েছে, তা আগে থেকে আঁচ করেই অমরনাথযাত্রার ঠিক আগের সময়কে হামলা চালানোর জন্য জঙ্গিরা বেছে নিয়েছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:০৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে নিরাপত্তায় গাফিলতি যে ছিল, সর্বদল বৈঠকে তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যে বিস্তর ফাঁকফোকর রয়েছে, তা আগে থেকে আঁচ করেই অমরনাথযাত্রার ঠিক আগের সময়কে হামলা চালানোর জন্য জঙ্গিরা বেছে নিয়েছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দাদের একাংশ।

Advertisement

মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিদের গুলিতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তা নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এত বড় গাফিলতি কী ভাবে হল, সেই প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে লাগাতার বিঁধে চলেছে বিরোধীরা। পাল্টা কেন্দ্রের বক্তব্য, প্রশাসনকে না জানিয়েই ট্যুর গাইডেরা পর্যটকদের নিয়ে বৈসরনে চলে গিয়েছিলেন। সেই কারণে সেখানে সেনা মোতায়েন করা যায়নি। ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)-র ডিরেক্টর তপন ডেকারও বক্তব্য, গত ২০ এপ্রিল থেকে পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের যাতায়াতের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়নি।

২০১৯ সালে অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর অবলুপ্তির পর থেকে জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। গত অক্টোবরে নির্বাচনের পর সেখানে সরকার গঠন হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি এখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে। তবে পর্যটন সংক্রান্ত বিষয় দেখভাল করে জম্মু-কাশ্মীরের সরকার। সূত্রের খবর, জম্মু-কাশ্মীরের এক সরকারি আধিকারিকও স্বীকার করেছেন, পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকেরা যেতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে পুলিশ প্রশাসের অনুমতি নেওয়া হয়নি।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শীতকালে পর্যটকদের জন্য বন্ধই থাকে বৈসরন উপত্যকা। তা খোলা হয় মূলত অমরনাথযাত্রার ঠিক আগে। অমরনাথের তীর্থযাত্রীরা যে হেতু পহেলগাঁওয়ে থাকেন, তাই সেই সময় সেখানে নিয়ম মেনেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। কিন্তু এ বার ২০-২২ এপ্রিলের মধ্যে যে পহেলগাঁওয়ে এত পর্যটকের আসার কথা, তা প্রশাসনকে জানানো উচিত ছিল হোটেল মালিকদের।

গোয়েন্দাদের একাংশের মত, বৈসরন উপত্যকা বেশি উচ্চতায় অবস্থিত। সেখানে মূলত পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় করে যেতে হয়। যে হেতু অতীতে জঙ্গি উপদ্রবের ঘটনা সেখানে ঘটেনি, তাই সেই ভাবে সব সময় সেনা মোতায়েনও করা হয় না। হলেও তা মূলত অমরনাথযাত্রার সময়ে হয়ে থাকে। বৈসরনের যে সবুজ তৃণভূমিতে জঙ্গি হামলা হয়েছে, সেখান থেকে সব কাছের সেনাছাউনিও প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে। এই জায়গায় একটি বড় ফাঁক থেকে গিয়েছে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দাদের ওই অংশ। তাঁরা মনে করছেন, হামলাকারীরা দীর্ঘ দিন ধরে এই বিষয়টি নজর করেছে। প্রথমত, উপত্যকায় কোনও সেনা মোতায়েন ছিল না। দ্বিতীয়ত, হামলার পরেও সেখানে দ্রুত পৌঁছোনো সম্ভব নয় সেনার পক্ষে। হামলা চালিয়ে তারা যে অনায়াসেই সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারবে, তা বুঝে গিয়েছিল জঙ্গিরা।

ঘটেছেও তা-ই। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ বৈসরনের একটি রিসর্টের সামনে ঘোড়ায় চড়ছিলেন কয়েক জন পর্যটক। বাকিরা ইতিউতি ছড়িয়ে খাওয়াদাওয়া, গল্প করছিলেন। আচমকাই জংলা পোশাক পরা, মুখ ঢাকা কয়েক জন সশস্ত্র জঙ্গি পাইন বন থেকে বেরিয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সামনে যে পর্যটককেই তারা দেখেছে, নাম-ধর্মপরিচয় জিজ্ঞেস করে কপালে গুলি করেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘অন্তত জনা পাঁচেক জঙ্গি এসে, ধীরেসুস্থে খুনগুলো করে আবার পাহাড়ি ঢাল বেয়ে চলে যায়। দেখে মনে হয়েছে, যেন ওরা আগে থেকে জানত, কোথায় যেতে হবে, কী করতে হবে, কাকে কাকে মারতে হবে।’’

হামলার দায় নিয়েছে পাক জঙ্গি গোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজ়িস্ট্যান্স ফোর্স’ (টিআরএফ)। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, জম্মুর কিশতওয়ার এলাকা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ কাশ্মীরের কোকেরনাগ হয়ে বৈসরনে এসেছিল জঙ্গিরা। বস্তুত, জঙ্গিদের বিবৃতির সূত্র ধরেই গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট আক্রোশের বশেই এই হামলা চালানো হয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পরে উপত্যকার ব্যবসা-বাণিজ্যে বহিরাগতদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন স্তরে ক্ষোভ জমছিল। তার জেরে এই হামলা হয়ে থাকতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement