ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ নিয়ে একই সুর তৃণমূল ও সিপিএমের। বিষয়টি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ রাষ্ট্রপতির কাছে ও সীতারাম ইয়েচুরি রাজ্যসভায় অভিযোগ জানান। উভয়েরই অভিযোগ, পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল করে কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে বলে দাবি করছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু বড় কিছু সংস্থার বিপুল ঋণ অনাদায়ী পড়ে রয়েছে। বিপুল ঋণ মুছেও ফেলা হচ্ছে ব্যাঙ্কের খাতা থেকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির অবশ্য দাবি, ওই ঋণ মোটেই মকুব হয়ে গেল বলে মনে করার কারণ নেই। ওই ঋণ পরে উসুল হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে প্রশ্ন তোলেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে নাকি অভিযান হচ্ছে, অথচ ব্যাঙ্ক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েও যাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবে শোধ করছেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার। মমতার বক্তব্য, মোদী সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা ফিরিয়ে এনে সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তার বদলে এখন পুরনো নোট বাতিলের গিমিক হচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের সমস্যা সমাধানে ঋণের টাকা উসুলের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। কোন ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ কত, তা বোঝাতে ১২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানও পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তথ্যের অধিকার আইনে এ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের যে সব তথ্য মিলেছে, তা-ও রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছেন তিনি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চলতি অর্থ বছরের শেষে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ব্যাঙ্কগুলির মোট ঋণের ৮.৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
মমতা যখন রাষ্ট্রপতির কাছে এ নিয়ে ক্ষোভ জানাচ্ছেন, সে সময় সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি রাজ্যসভায় অভিযোগ আনেন, স্টেট ব্যাঙ্ক ইন্ডিয়া শোধ না হওয়া ৭ হাজার কোটির বেশি ঋণ তাদের খাতা থেকে মুছে ফেলছে। ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে শোধ করেনি, এমন ৬৩টি সংস্থাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় সব থেকে উপরে বিজয় মাল্যর কিংফিশার এয়ারলাইন্স। যাদের অনাদায়ী ঋণ ১২০১.১৯ কোটি। ইয়েচুরির প্রশ্ন, এমন ঋণ উসুল করতে তৎপর হওয়ার বদলে স্টেট ব্যাঙ্ক কেন খাতা থেকে মুছে ফেলবে? কংগ্রেসের আনন্দ শর্মাও একই অভযোগ তোলেন।
জবাবে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, কোনও অনাদায়ী ঋণ খাতা থেকে মুছে ফেলা তথা ‘রাইট-অফ’ মানে ঋণ মাফ করে দেওয়া। নিয়ম অনুযায়ী ওই ঋণের অর্থ ‘অ্যাডভান্স আন্ডার কালেকশন অ্যাকাউন্টে’ রাখা হয়। যাতে ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতা পরিচ্ছন্ন থাকে। ওই ঋণও উসুলের ব্যবস্থা হবে। এ নিয়ে ইউপিএ জমানার দিকে পাল্টা আঙল তোলেন অর্থমন্ত্রী। মাল্যর নাম না করে মনে করান, এই সব ঋণ পুনর্গঠন (রিস্ট্রাকচারড) করা হয় আগের সরকারের আমলে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান অরুন্ধতী ভট্টাচার্যও জানান, ইচ্ছাকৃত ভাবে শোধ না করা ৬৩টি সংস্থার ঋণ অন্য খাতে তোলা হয়েছে। এবং আদায়ের চেষ্টা চলছে।