প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনেই অভিযোগ তুলেছিলেন, আদানি গোষ্ঠীকে বিমানবন্দর থেকে বন্দর চালানোর বরাত হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি ‘দখলের’ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই আদানিকে ঋণ দিয়েছে। মোদী সরকার বা বিজেপির কেউ জবাব দেওয়ার আগেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের চেয়ার থেকে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় আজ বললেন, ‘‘এ দেশের বরাত বিলির ব্যবস্থা যথেষ্ট মজবুত। তা নিয়ে এ ভাবে প্রশ্ন তোলা যায় না। কাউকে থালায় সাজিয়ে বরাত দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা যায় না।’’
কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ধনখড় কেন সরকারের হয়ে অভিযোগের জবাব দিচ্ছেন! তাতেও রাজ্যসভার চেয়ারম্যান নিরস্ত হননি। যত বারই খড়্গে মোদী জমানায় আদানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন, তত বারই তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দিতে হবে। তিনি বলেন, “খুবই উঁচু স্তর থেকে আমাকে বলা হয়েছে, আমাদের স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ, মজবুত বরাত বিলির ব্যবস্থাকে সংসদে খাটো করা যাবে না।’’ সংসদে যা বলার, সব দেশের স্বার্থে বলতে হবে বলেও ধনখড় মন্তব্য করেন। আদানির উত্তরোত্তর সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ধনখড় বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদের দিকে ঠেস দিচ্ছেন। খড়্গে হিন্ডেনবার্গ-রিপোর্টের কথা বলায় ধনখড় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যে কোনও দেশের যে কোনও রিপোর্ট নিয়ে আমাদের কেন মাথা ঘামাতে হবে?’’
লোকসভায় গত কাল রাহুল গান্ধী মোদী-গৌতম আদানির সম্পর্ক নিয়ে যে সব প্রশ্ন তুলেছিলেন, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা তা সংসদের নিম্নকক্ষের নথি থেকে মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ রাজ্যসভায় কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে আদানি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান আপত্তি তুলেছেন। বিরোধী শিবিরে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খোদ রাহুল আজ সংসদের বাইরে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তাঁর প্রশ্ন নথি থেকে মুছে দেওয়া হল? রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সচেতক জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী-আদানি মহাকেলেঙ্কারি নিয়ে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য মুছে দেওয়ায় লোকসভায় গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া হল। ওম শান্তি!’’
রাজ্যসভায় আজ খড়্গে প্রথমে বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য দেখেও মোদী কেন ‘মৌনীবাবা’ থাকেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ধনখড় প্রথমে তাতে আপত্তি তুলে বলেন, বিরোধী দলনেতার পদমর্যাদার সঙ্গে এ রকম ‘রসালো মন্তব্য’ মানায় না। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়ে বলেন, আদানির সম্পত্তি বৃদ্ধির কথা বলে প্রধানমন্ত্রীকে ঠেস দেওয়া হচ্ছে। এই বিবাদের মধ্যেই খড়্গে জানান, ধনখড় তাঁকে আলাদা ভাবে বলেছেন, আদালতে ওকালতির গোড়ায় তিনি হাতে টাকা গুনতেন। পরে তাঁকে টাকা গোনার জন্য যন্ত্র কিনতে হয়েছিল। ধনখড় হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘আমি এ সব বলিনি। আপনি তো আমার উপরেই যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত বসাবেন।’’ গোটা বিবাদে নীরব শ্রোতা মোদীও ধনখড়ের মন্তব্য শুনে হেসে ওঠেন।