প্রশ্নের মুখে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়।
নাগপুরে আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায় ঠিক করেননি।প্রণবের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই টুইটারে সরব হয়েছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। এর পরেই কংগ্রেসের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, প্রণববাবুর ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় গোটা বিষয়টি নিয়ে নীরব কেন? এর পিছনে কি তা হলে অন্য কোনও গল্প রয়েছে?
প্রদেশ কংগ্রেসও অভিজিতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। অভিজিৎ বর্তমানে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের কংগ্রেস সাংসদ।শুধু ছেলে হিসাবে নয়, কংগ্রেসের সাংসদ হিসাবেও তো অভিজিতের মুখ খোলা উচিত! এমনটাই মনে করছেন এ রাজ্যের একাধিক কংগ্রেস নেতা। তাঁদেরদাবি, অভিজিৎ এ বিষয়ে কী ভাবছেন, তা এখনই প্রকাশ্যে আসা উচিত।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।তাঁর মতে, মেয়ে শর্মিষ্ঠার মতো একই রকম ভাবে প্রণববাবুর ছেলে অভিজিতেরও মুখ খোলা উচিত। প্রণব যে আরএসএস-এর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নাগপুর গিয়ে মোটেও ঠিক কাজ করেননি, তা অভিজিতের বোঝা উচিত। বাবার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এখনও কেন কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখ খোলেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি।
আরও পড়ুন: রাতেই গভর্নর কোঠিতে ভাগবত, কিন্তু প্রণবের মুখ দেখলেন না কোনও কংগ্রেস নেতা
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান যেমন বলছেন, ‘‘কে কোথায় যাবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি আরএসএস-এর সাম্প্রদায়িক মতাদর্শকে ব্যক্তিগত ভাবে ঘৃণা করি। তাই, তাদের অনুষ্ঠান নিয়ে আমার কোনও উৎসাহ নেই।’’ মান্নানও ঘনিষ্ঠ মহলে অভিজিতের নীরব থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলে জানা গিয়েছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলীয় নেতা থেকে কর্মী সকলেই প্রণববাবুর নাগপুর যাওয়া নিয়ে মনে মনে ক্ষুণ্ণ। এমনকি অভিজিৎ কেন গোটা ঘটনা নিয়ে চুপ, তা নিয়েও তাঁরা প্রকাশ্যে সরব। রাজ্যের কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র যেমন বলছেন,‘‘শর্মিষ্ঠা তো এ বিষয়ে যা বলার বলেছেন। এখন অভিজিতের মুখ খোলার সময়। তিনি কেন মুখ খুলছেন না?’’
অভিজিৎ নীরব থাকায়প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তবে কি তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন? এক কংগ্রেস নেতা সে সম্ভাবনা মেনে নিয়ে জানাচ্ছেন, অভিজিৎ বিজেপিতে যেতেই পারেন। কিন্তু, নিজের ক্যারিশ্মায় তো ভোটে জেতার ক্ষমতা তাঁর নেই। জনমানসে তাঁর ভাবমূর্তি খুব ভাল নয়। এমনকি, তাঁর কোনও জনসংযোগও নেই। প্রণববাবুর ছেলে বলেই দল ওঁর সঙ্গে ছিল। দলীয় ভাবমূর্তির জোরেই অভিজিৎ ভোটে জিতেছেন। ওই নেতার মতে, অভিজিতের মতো প্রার্থী যে কোনও দলের কাছেই বোঝা।
কংগ্রেসের একটা অংশের মত,প্রণববাবু কোনও দিনই এ বাংলায় জনপ্রিয় নেতা ছিলেন না। অভিজিৎ তো অনেক দূরের বিষয়। প্রণববাবুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা থাকতে পারে, তিনি পণ্ডিত মানুষ হতে পারেন, কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে তাঁর তেমন কোনও মূল্য নেই। বাবা প্রণব এবং দলের ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়েই সংসদে গিয়েছেন অভিজিৎ। কংগ্রেস কর্মীরাই প্রচুর পরিশ্রম করে তাঁকে ভোটে জিতিয়েছেন। অথচ, বিজেপি-র হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে যে ভাবে প্রণববাবু নাগপুরে আরএসএস-এর সভায় গিয়েছেন, আর তা নিয়ে অভিজিৎ চুপ করে বসে রয়েছেন,সেটা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না তাঁরা।
আরও পড়ুন: জলে টইটম্বুর প্রণবের মাঠ, খরার বিদর্ভ বলছে ‘আশীর্বাদ’
বুধবার প্রণব-কন্যা শর্মিষ্ঠা বাবাকে উদ্দেশ করে টুইটারে লিখেছিলেন, ‘‘নাগপুরে গিয়ে বিজেপি-আরএসএসকে মিথ্যা খবর, গুজব ছড়ানোর পুরো ছাড় দিলেন আপনি। আর এটি সূচনা মাত্র। আরএসএস-ও বিশ্বাস করে না, বক্তৃতায় আপনি তাদের মতকে সমর্থন করবেন। কিন্তু মানুষ বক্তৃতা ভুলে যাবে। থাকবে ছবি। ভুয়ো বিবৃতি দিয়ে সেগুলি প্রচার হবে। আপনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন, বিজেপির ‘ডার্টি ট্রিকস’ বিভাগ কাজ করে।’’
প্রদেশ কংগ্রেসের একটা বড় অংশ মনে করছে, এর পরেও অভিজিতের চুপ করে বসে থাকাটা মানায় না। তাঁরও গর্জে ওঠা উচিত। কারণ, গোটা বিষয়টিই দলের ভাবমূর্তিতে আঘাত করছে। এ রাজ্যে বিজেপি যখন মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে, কংগ্রেস তখন এই একটা ইস্যুতে অনেকটাই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে। তাঁদের মতে, এ রাজ্যে বিজেপিকে ঠেকাতেলড়াই করতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। সেই পরিস্থিতিতে দলেরই কেউ যদি বিজেপি-র হাতে এমন একটা ব্যাটন তুলে দেন, তার রাজনৈতিক ফল তো হাতেনাতেই মিলবে! অভিজিতের সেটা বোঝা উচিত বলেই মত ওই অংশের।