মোদী সরকার স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে দিয়ে জেট এয়ারওয়েজের ভরাডুবি থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
এত দিন নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলিরা অভিযোগ তুলতেন, ইউপিএ সরকারের আমলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তাদের ফোন করে রুগ্ণ সংস্থাকেও ঋণ পাইয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হত।
এ বার লোকসভা ভোটের মুখে সেই একই পথে হেঁটে মোদী সরকার স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে দিয়ে জেট এয়ারওয়েজের ভরাডুবি থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে। এসবিআই এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কাছে জেট এয়ারওয়েজের দেনা প্রায় ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেই দেনার বিনিময়ে ব্যাঙ্কগুলি জেট এয়ারওয়েজের অংশীদার হতে পারে। কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, আমজনতার সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক কেন দেউলিয়া সংস্থার শেয়ার কিনবে?
এসবিআইয়ের চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার আজ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করেন। বৈঠকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নৃপেন্দ্র মিশ্র ও বিমানসচিব প্রদীপ সিংহ খারোলা। বৈঠকের পরে রজনীশ বলেন, ‘‘আমরা জেটকে আকাশে উড়িয়ে রাখতে আমরা সব রকম চেষ্টা করব। আমাদের বিশ্বাস, জেটকে উড়িয়ে রাখাটাই সকলের স্বার্থ।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আবু ধাবির উড়ান সংস্থা এতিহাদ জেট এয়ারওয়েজের ২৪ শতাংশ শেয়ারের মালিক। এতিহাদ সেই মালিকানা এসবিআইকে বেচে দিতে চাইছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রজনীশ বলেন, ‘‘এতিহাদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। এমন নয় যে ওরা শেয়ার বেচে বেরিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। তবে কিছু শর্ত রেখেছে। সেই শর্তের মূল কথা হল, উড়ান সংস্থাটির পরিচালনা যেন পেশাদারি ভাবে হয়। বাইরে থেকে যেন নাক গলানো না-হয়।’’
ত্রাতা সরকার
• ওএনজিসি-র তহবিল থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা
• এলআইসি-র তহবিল থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা
• সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা
• এ বার নজরে এসবিআইয়ের ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা
• গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে বাঁচাতে
• আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে উদ্ধার করতে খরচ হয়েছে
• আইএল অ্যান্ড এফএসকে বাঁচাতে
• লক্ষ্য, জেট এয়ারওয়েজকে উড়িয়ে রাখা
সূত্রের খবর, এতিহাদ চাইছে, ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নিয়ে বসে থাকা নরেশ গয়াল রাশ ছাড়ুন। সরকার যে জেটকে কোনও ভাবেই ডুবতে দিতে চাইছে না, তা বুঝিয়ে রজনীশের মন্তব্য, জেট এয়ারওয়েজকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বেচে দেওয়াটা শেষ বিকল্প।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, লোকসভা ভোটের আগে জেট এয়ারওয়েজ বন্ধ হয়ে গিয়ে, সংস্থার প্রায় ২৩ হাজার কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এতে জনমানসে ভুল বার্তা যাবে। মোদী সরকার সেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘মোদী সরকার চাষিদের ঋণ মকুব করতে নারাজ। কিন্তু বিদেশি মালিকানাধীন জেটের মতো দেউলিয়া সংস্থাকে আমজনতার অর্থ দিয়ে উদ্ধার করতে চাইছে! এটাই কি সরকারি তহবিল লুট করার মোদী মডেল?’’ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, জেট এয়ারওয়েজের আর্থিক নয়ছয় নিয়ে সরকারই তদন্ত করছে। তা সত্ত্বেও কোনও কিছু খতিয়ে না দেখে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে দেউলিয়া সংস্থায় টাকা ঢালতে বলা হচ্ছে।
বিজেপি এত দিন অভিযোগ তুলেছিল, ইউপিএ-সরকার ঠিক এই ভাবেই বিজয় মাল্যর কিংফিশার এয়ারলাইন্সকে সুরাহার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, নরেশ গয়াল ভাল ভাবেই জানেন, লোকসভা ভোটের আগে সরকার জেটকে মুখ থুবড়ে পড়তে দেবে না। একই ভাবে কিংফিশার এয়ারলাইন্সকেও ঋণ মেটাতে নতুন ঋণের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। কিংফিশার তাতে আরও বড় ঋণের বোঝার নীচে চাপা পড়েছিল।
কংগ্রেসের সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, মোদী সরকার এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ করতে চাইছে। অথচ জেট এয়ারওয়েজের জন্য ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঢালতে চাইছে কেন? তাঁর অভিযোগ, এর আগেও ওএনজিসি-র তহবিল থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা ঢেলে গুজরাত স্টেট পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে বাঁচানো হয়েছে। রুগ্ণ আইডিবিআই ব্যাঙ্ককে উদ্ধার করতে জীবন বিমা নিগম বা এলআইসি-র তহবিল থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আইএল অ্যান্ড এফএস মুখ থুবড়ে পড়াতেও সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ধাক্কা খাচ্ছে।