CJI DY Chandrachud

সম্ভল নিয়ে প্রশ্নে চন্দ্রচূড়ের ভূমিকা

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৫
Share:

ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। —ফাইল চিত্র।

উত্তরপ্রদেশের সম্ভলে শাহি জামা মসজিদে সমীক্ষা নিয়ে উত্তেজনার পরে বিরোধী শিবির সুপ্রিম কোর্টে হস্তক্ষেপ চাইল। কিন্তু একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠল, সুপ্রিম কোর্টে কি এই মন্দির-মসজিদ বিতর্কে সুরাহা মিলবে? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদেরই একটা বড় অংশের বক্তব্য, সদ্য-প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ই বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষায় বাধানা দিয়ে এই বিতর্কের রাস্তা খুলেদিয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

সম্প্রতি সম্ভলের স্থানীয় আদালতে এক পুরোহিত মামলা করেছিলেন, সেখানকার শাহি মসজিদ বাবরের আমলে হরিহর মন্দির ভেঙে তৈরি হয়েছিল। গত ১৯ নভেম্বর মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিম্ন আদালতের বিচারক আদিত্য গোস্বামী কমিশনার নিয়োগ করে মসজিদে সেই দিনই সমীক্ষার নির্দেশ দেন। কোর্টের নির্দেশে গত কাল রবিবার দ্বিতীয় বার সমীক্ষার সময়ে উত্তেজনা ছড়ায়। তাতে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ সমাজবাদী পার্টি এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে সুবিচার মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সমাজবাদী পার্টির স্থানীয় সাংসদ জ়িয়াউর রহমান বর্ক। যাঁর নামে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এই ঘটনায় উস্কানির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে।

এ দিকে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল (বিশেষ ব্যবস্থা) আইনে স্পষ্ট বলা হয়েছে কোনও মন্দির-মসজিদ বা গির্জার চরিত্র পাল্টানো যাবে না। ১৯৪৭-এ স্বাধীনতার সময় যেখানে যা ছিল, তেমনটাই রাখতে হবে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র বজায় রাখতে তৈরি আইনে শুধুমাত্র অযোধ্যার রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদকে এই আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কাশী-মথুরায় অযোধ্যা ঘটনার পুনরাবৃত্তির রাস্তা আইনত বন্ধ ছিল। অর্থাৎ, স্বাধীনতার আগে কোনও মন্দির ভেঙে মসজিদ হয়ে থাকলেও এখন যেখানে মসজিদ রয়েছে, সেখানে মসজিদই থাকবে। এই নীতি মেনে চললে, কোনও মসজিদ আগে মন্দির ছিল বলে দাবি উঠলেও সেখানে আর সমীক্ষার প্রশ্নই ওঠে না।

Advertisement

সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট অযোধ্যায় রামমন্দির তৈরির রায় দিলেও এই আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল। আইন পাশের সময় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চহ্বাণ লোকসভায় যে ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্বের কথা বলেছিলেন, তা-ও সেই রায়ে লেখা হয়েছিল। বিচারপতি চন্দ্রচূড় সেই বেঞ্চের অংশ ছিলেন। অথচ পরে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট জ্ঞানবাপী মসজিদে সমীক্ষার নির্দেশ দিলে প্রধান বিচারপতি হিসেবে চন্দ্রচূড় তাতে স্থগিতাদেশ দেননি। এমনকি জ্ঞানবাপী মসজিদের মধ্যে পুজোর নির্দেশেও তিনি ছাড়পত্র দিয়েছিলেন। সেখানেও তিনি মানুষের আস্থার যুক্তি দিয়েছিলেন।’’ আইনজীবী আশিস গয়াল এক্স হ্যান্ডলে সরাসরিই অভিযোগ তুলেছেন, ‘‘জ্ঞানবাপী নিয়ে ওঁর অবস্থানই সম্ভলে পাঁচ জনের প্রাণ নিল। এটা অন্য ভাবে আর দেখা যায় না। উনি জানতেন এটা হবে।’’

আজ সংসদে বিরোধীরা সম্ভলে হিংসা নিয়ে সরব হয়েছেন। পরে সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব বলেন, যোগী আদিত্যনাথের সরকার উপনির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটারদের যে ভাবে বাধা দিয়েছিল, তা ধামা চাপা দিতে এই হিংসার ঘটনা ঘটিয়েছে। কিছু বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শে ‘দ্য সবরমতী রিপোর্ট’ দেখার পরে উৎসাহ পেয়ে রাতারাতি বড় নেতা হতে চাইছেন। স্থানীয় এসপি সাংসদ জিয়াউর রহমান বর্কের বিরুদ্ধে পুলিশের এফআইআর নিয়ে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার সঙ্গেও দেখা করেন অখিলেশ। তাঁর দাবি, জিয়াউর সম্ভলে ছিলেন না। জিয়াউরও একই কথা জানিয়ে দাবি করেন, ‘‘আমাদের আশা সর্বোচ্চ আদালতে সুরাহা মিলবে। আমি স্থানীয় মানুষের কাছেও একই যুক্তিতে শান্তির আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু আদালতের নির্দেশে ১৯ নভেম্বর এক বার সমীক্ষার পরেও ফের কেন রবিবার সমীক্ষার প্রয়োজন পড়ল? ওখানে হিংসাকরানো হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement