প্রতীকী ছবি।
সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার তৈরি কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের নকল কলকাতা-সহ দেশের একাধিক শহরে বিক্রি হয়েছে বলে কেন্দ্রকে তথ্য দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। এক বিবৃতিতে হু জানিয়েছে, জুলাই-অগস্ট—এই দু’মাস ভারত ও আফ্রিকা থেকে ভুয়ো কোভিশিল্ডের ডোজ় বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সিরাম নিজেও পরীক্ষা করে জানিয়েছে, ওই ডোজ়গুলি নকল। যার গুরুতর প্রভাব জনস্বাস্থ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
ভারত-সহ গোটা বিশ্বে করোনার প্রতিষেধকের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে কোভিশিল্ডের নামে ভুয়ো প্রতিষেধক বাজারে ছাড়া হয়েছে বলে মনে করছে হু। ভুয়ো ও নিম্নমানের ওষুধ চিহ্নিত করতে বিশ্ব জুড়ে হু-এর যে নজরদারি দল রয়েছে তারাই প্রথম ওই নকল কোভিশিল্ড চিহ্নিত করে। কলকাতা ও শহরতলির জায়গায় জায়গায় জায়গায় জায়গায় ভুয়ো ভ্যাকসিন দেওয়ার অভিযোগের সূত্রেই সামনে আসে দেবাঞ্জন দেবের ঘটনা। নিজেকে আইএএস বলে পরিচয় দিয়ে ভুয়ো ভ্যাকসিন শিবির চালিয়ে ধরা পড়ে কলকাতার এই যুবক। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকেও আসতে থাকে নকল টিকা-দুর্নীতির খবর। যার জেরে গত জুনে রাজ্য সরকারের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় কেন্দ্র। এই ধরনের শিবির রুখতে নজরদারি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন। ভুয়ো টিকা কাণ্ডে মুম্বই, দিল্লি, কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয় অনেককে।
করোনা পরিস্থিতিতে কোভিশিল্ডের কয়েক কোটি ডোজ় এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় পাঠিয়েছে সিরাম। একটি সূত্রের খবর, ভারতে ভুয়ো ভ্যাকসিন উদ্ধারের পরে সন্দেহ নিরসনে যোগাযোগ করা হয়েছিল সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। তারা ব্যাচ নম্বর মিলিয়ে জানায় তাদের কোনও উৎপাদন কেন্দ্রে ওই প্রতিষেধক তৈরি হয়নি।
জানা গিয়েছে, ওই কোভিশিল্ড প্রতিষেধকের গায়ে অস্পষ্ট ভাবে ব্যাচ নম্বর লেখা ছিল। যাতে সেটি কোথায় তৈরি হয়েছে তা বোঝা সম্ভব না। প্রতিষেধক তৈরিতে কী ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তারও কোনও উল্লেখ করা হয়নি। সূত্রের মতে, যা দেখেই বোঝা সম্ভব হয় যে সেগুলি নকল।
মঙ্গলবার এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে ভারতকে ফের নজরদারি বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে হু। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া বলেছেন, ‘‘ভারতের বাজারে ভুয়ো কোভিশিল্ড ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে হু। ভারত সরকার অভিযোগ খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই কেন্দ্র তদন্ত শুরু করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেছেন, ‘‘এই ধরনের দুর্নীতি রোখার জন্য কড়া ব্যবস্থা থাকলেও এই মুহূর্তে আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে কোনও ভারতীয়ের শরীরেই যেন ভুয়ো ভ্যাকসিন প্রয়োগ না করা হয়।’’ আর এক স্বাস্থ্য কর্তা বলেছেন, ‘‘আমরা পশ্চিমবঙ্গকে আগেই সতর্ক করেছি। সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সঙ্গেও কথা হয়েছে। বিষয়টিতে নজর রাখা হচ্ছে।’’