উত্তরাখণ্ডে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি নিয়ে নরেন্দ্র মোদীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে সংসদে গলা ফাটাচ্ছে কংগ্রেস-বাম। একেবারে চুপ তৃণমূল। আর তাতেই সংসদে আজ ফের উঠে এল ‘দিদি-মোদী’ আঁতাঁতের প্রসঙ্গ।
অধিবেশনের প্রথম থেকেই উত্তরাখণ্ড প্রসঙ্গে তেড়েফুঁড়ে নামার নির্দেশ দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সেই মোতাবেকই গোটা কংগ্রেস শিবির আজ প্রতিবাদ করে গিয়েছেন। প্রথমে দাঁড়িয়ে, পরে ক্লান্ত হয়ে ওয়েলে বসে পড়েও মল্লিকার্জুন খাড়্গে যার নেতৃত্ব দিয়ে গিয়েছেন লোকসভায়। রাজ্যসভায় সরকারকে চেপে ধরতে একযোগে সরব ছিলেন গুলাম নবি আজাদ এবং সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিরা। ভোটে ব্যস্ত থাকায় তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা ছিলেন না বটে, তবে দলের কোনও প্রতিনিধিই ছিলেন না, এমনটাও নয়। রাজ্যসভায় হাজির ছিলেন সুখেন্দুশেখর রায়। আগাগোড়া মুখে কুলুপ এঁটে।
বছরখানেক আগেও এই তৃণমূলই প্রায় নিয়মিত সংসদ চত্বরে ছাতা-চাদর-হাঁড়ি-ডায়েরি নিয়ে ধর্না দিয়েছে হরেক আঙ্গিকে। আর আজ যখন উত্তরাখণ্ডে ৩৫৬ ধারা জারি করা নিয়ে সংসদ তোলপাড়, দফায় দফায় মুলতবি হচ্ছে অধিবেশন— সেই সময় পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের এমন মৌনী নেওয়ার কারণটা কী?
তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোট-বাজারে এখন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চাইছে না দল।
কংগ্রেস ও বাম নেতারা রাজ্যে ভোট-পর্বের গোড়া থেকেই বলে আসছেন, তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। ক’দিন আগেই দিল্লিতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি পুরনো সাক্ষাৎকারের ভিডিও-ও দেখানো হয় আঁতাঁতের ছবিটি তুলে ধরতে। মমতা সেখানে বলেছেন, বিজেপি তাঁদের সহজাত বন্ধু।
সংসদে আজ তৃণমূলের নীরব থাকার পিছনেও বিজেপির সঙ্গে তাদের সমঝোতাকেই কারণ হিসেবে দেখছেন কংগ্রেস ও বাম নেতারা। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের মতে, ওই সমঝোতার অঙ্গ হিসেবেই মোদী পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে গিয়ে দিদিকে বিঁধছেন, যাতে তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে কোনও ধন্দ না তৈরি হয়। সিপিএম শীর্ষ নেতা সীতারাম ইয়েচুরির মতে, পশ্চিমবঙ্গে এই দুই দলের ম্যাচ গড়াপেটা নতুন কিছু নয়।
তবে কোনও রাজ্যের নির্বাচিত সরকার ফেলে দেওয়া নিয়ে কংগ্রেস ও বামেরা যখন তীব্র আক্রমণাত্মক, সে সময় চুপ করে থাকাটা সঙ্গত মনে করছেন না তৃণমূলেরই একাংশ নেতা। দলের এক সাংসদের বক্তব্য, ‘‘উত্তরাখণ্ড নিয়ে কোনও অবস্থান না নেওয়াটা ঠিক কৌশল নয়। ভবিষ্যতে কেন্দ্র যদি পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে, তা কি মেনে নেওয়া হবে? এখন ভোটের মরসুম। ভোট শেষ হলে দলের নেতৃত্বকেও এ নিয়ে কোনও একটি অবস্থান নিতেই হবে।’’ রাজ্যে আরও দু’দফার ভোট বাকি। তত দিন অন্তত কেন্দ্র-বিরোধিতা শিকেয় তুলে রাখছে তৃণমূল।