আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। ৭৩ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দিল্লির লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে জানেন কি, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর পূর্বসূরিরা লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসে কত বার তেরঙ্গা উড়িয়েছেন? তা দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত নিজের পদে আসীন ছিলেন। ওই পদে মোট ১৮ বছর ছিলেন তিনি। ’৬৪-তে ৭৪ বছর বয়সে তাঁর মুত্যুর আগে পর্যন্ত মোট ১৭ বার লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নেহরু।
১৯৬৬-র লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভাবে জিতে ক্ষমতায় আসেন জওহরলাল নেহরুর কন্যা ইন্দিরা গাঁধী। প্রথম দফায় ’৭৭ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিলেন তিনি। ’৮০ ফের প্রধানমন্ত্রী হন। ’৮৪-র অক্টোবর তাঁর হত্যার আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন ইন্দিরা। নিজের কার্যকালে মোট ১৬ বার লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন তিনি।
জওহরলাল নেহরুর পর মনমোহন সিংহই হলেন সেই রাজনীতিক, যিনি দ্বিতীয় বারের জন্য লোকসভা নির্বাচনে জিতে তাঁর পাঁচ বছরের কার্যকাল পূর্ণ করেন। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন তিনি। ৮৬ বছরের মনমোহন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোট ১০ বার লালকেল্লা থেকে তেরঙ্গা উত্তোলন করেছেন।
১৯৯৬-এ মাত্র ১৩ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। এর পর ’৯৮-এ ফের ক্ষমতায় আসেন তিনি। সে বার ১৩ মাস প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বাজপেয়ী। এর পর ’৯৯-এ ফের প্রধানমন্ত্রী হন। এ বার অবশ্য ২০০৪ সাল পর্যন্ত নিজের পদে পুরো পাঁচ বছর কাটান। লালকেল্লা থেকে মোট ছ’বার তেরঙ্গা উত্তোলন করেছেন বাজপেয়ী।
১৯৮৪-তে ইন্দিরা গাঁধীর হত্যার পর নির্বাচনে বিপুল ভাবে জেতে কংগ্রেস। মাত্র ৪০ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন ইন্দিরার ছেলে রাজীব গাঁধী। ’৮৯ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন ছিলেন তিনি। ’৯১-এ আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লালকেল্লা থেকে মোট পাঁচ বার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন রাজীব।
দেশের নবম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১৯৯১-এ ক্ষমতায় আসেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা পি ভি নরসিংহ রাও। ’৯৬ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মোট পাঁচ বার লালকেল্লা থেকে তেরঙ্গা উড়িয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর আগামিকাল লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন নরেন্দ্র মোদী। আগামিকাল নিয়ে মোট ছ’বার তেরঙ্গা ওড়াবেন মোদী। ফলে আগামিকালের পর, লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের তালিকায় তিনি অটলবিহারী বাজপেয়ীর পাশেই থাকবেন। পেরিয়ে যাবেন রাজীব গাঁধী ও নরসিংহ রাওকে।
জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১৯৬৪-তে কার্যভার সামলান লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। তবে ৬১ বছর বয়সে তাসখন্দে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হয়। স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের এই প্রবীণ নেতা লালকেল্লা থেকে মাত্র ২ বার জাতীয় উত্তোলন করেছিলেন।
১৯৭৭ থেকে ’৭৯ পর্যন্ত, মাত্র দু’বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন ছিলেন মোরারজি দেশাই। স্বাভাবিক ভাবে দেশের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী নিজের কার্যকালে লালকেল্লা থেকে ২ বার তেরঙ্গা উত্তোলন করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চৌধরি চরণ সিংহ, ভি পি সিংহ, এইচ ডি দেবগৌড়া এবং ইন্দ্রকুমার গুজরাল— প্রত্যেকেই নিজের পদে অতি স্বল্প সময়ের জন্য ছিলেন। এঁরা প্রত্যেকেই মাত্র ১ বার করে লালকেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
স্বল্প কালের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় এই তালিকায় স্থান পাননি গুরজারিলাল নন্দ ও চন্দ্রশেখর। ’৬৪ ও ’৬৬-তে যথাক্রমে জওহরলাল নেহরু ও লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর অস্থায়ী ভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যভার সামলেছিলেন গুরজারিলাল। অন্য দিকে, চন্দ্রশেখর তাঁর পদে ছিলেন ১৯৯০-এর নভেম্বর থেকে ’৯১-এর জুন পর্যন্ত।