Winter Session in Parliament

বিরোধীশূন্য সংসদের ভিতরে একের পর এক বিল পাশ করানোর ফাঁকে ফাঁকে মোদীস্তুতি, বিক্ষোভ বাইরে

সংসদ চত্বর থেকে বিজয় চক পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করলেন বিরোধী জোটগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা। বিরোধীশূন্য কক্ষে বিল পাশ করানোর বিষয়টিকে ‘ফিল্ডার ছাড়া ব্যাট করার’ সঙ্গে তুলনা বিরোধীদরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩০
Share:

সাসপেনশনের প্রতিবাদে মিছিল। সংসদ ভবন চত্বরে। ছবি: পিটিআই।

বিরোধীশূন্য লোকসভা। রাজ্যসভার অবস্থাও তথৈবচ। বিরোধী দলগুলির প্রায় সব সাংসদকেই সাসপেন্ড করে নজির গড়েছে সরকার পক্ষ। সেই বিরোধীরা এ দিন যখন দিনভর দফায় দফায় সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ করে সমালোচনায় মুখর, তখনই বিরোধীশূন্য সংসদের ভিতরে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করানোর ফাঁকে ফাঁকে চলল নিরন্তর মোদীস্তুতি।

Advertisement

এমন ছবি সম্ভবত আগে কখনও দেখেনি ভারতের সংসদ।

গত কাল পর্যন্ত সংসদের দু’কক্ষ থেকে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদের সংখ্যা ছিল ১৪৩। আজ লোকসভা থেকে আরও তিন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করে অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি করে দেওয়া হল লোকসভা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন। নির্দিষ্ট সমাপ্তির এক দিন আগেই। সেই সঙ্গে বিরোধীশূন্য লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেল দণ্ডসংহিতা, মুখ্য ও সহ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি।

Advertisement

সংসদ চত্বর থেকে বিজয় চক পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল করলেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী জোটগুলির মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র সাংসদেরা। বিরোধীশূন্য কক্ষে বিল পাশ করানোর বিষয়টিকে ‘ফিল্ডার ছাড়া ব্যাট করে যাওয়ার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বিজয় চকের সাংবাদিক সম্মেলনে নিশানা করেছেন মোদী সরকারকে। তাঁর কথায়, “ইচ্ছাকৃত ভাবে শাসক দল অধিবেশনে হাঙ্গামা করছে। সংসদে এমনটা প্রথম ঘটল, যেখানে একশো পঁচিশ-একশো ত্রিশ জন শাসক দলের সাংসদ দাঁড়িয়ে উঠে দশ জন বিরোধীর বিরুদ্ধে চিৎকার করছেন! আমরা আলোচনার দাবি জানালে এঁরা চিৎকার করে আমাদের স্বরকে চাপা দিছেন। এর থেকেই বোঝা যায়, বিজেপির গণতন্ত্রের উপরে কোনও আস্থা নেই।’’

আগামিকাল যন্তর মন্তরে সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ, নেতারা প্রতিবাদ-ধর্নায় বসছেন বলে আজ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া দেশ জুড়ে বিভিন্ন রাজ্য ও জেলায় বিরোধী দলগুলির সদর দফতরে সরকারের এই ‘বেআইনি’ ‘অনৈতিক’ কাজের প্রতিবাদে আন্দোলন হবে বলেও জানান খড়্গে।

তৃণমূলের পক্ষ থেকে রাজ্যসভায় সাসপেন্ড না-হওয়া সাংসদদের মধ্যে আজ উপস্থিত ছিলেন জহর সরকার। তিনিও মিছিলে হেঁটেছেন খড়্গে, জয়রাম রমেশদের সঙ্গে। ওয়েলের কাছে গিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছেন। যদিও তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়নি। দুপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যসভায় আসেন দণ্ডসংহিতা বিলটি পেশ করার সময়। তাঁকে দেখতে পেয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন জহর। শাহকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কাঁহা ভাগ গ্যায়ে থে?’ ডিএমকে-র তিরুচা শিবা এবং উপস্থিত কতিপয় সাংসদও একই স্লোগান দেন।

সংসদ থেকে বিজয় চক পর্যন্ত বিরোধীদের মিছিলের কয়েক ঘণ্টা পরেই লোকসভার তিন কংগ্রেস সাংসদকে সাসপেন্ড করার কথা জানানো হয়। এই তিন জন হলেন, কংগ্রেসের ডি কে সুরেশ, দীপক বৈজ এবং নকুল নাথ। ডি কে সুরেশ বেঙ্গালুরু গ্রামীণকেন্দ্রের কংগ্রেস সাংসদ। তিনি কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমারের ভাই। দীপক বৈজ ছত্তীসগঢ়ের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এবং বস্তারের সাংসদ। নকুল নাথ মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া কেন্দ্রের সাংসদ তথা কমল নাথের পুত্র। অভিযোগ, এঁরা লোকসভায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে ঢুকেছিলেন এবং ক্রমাগত অধিবেশনের কাজে বাধা সৃষ্টি করছিলেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী এঁদের সাসপেনশনের প্রস্তাব আনেন এবং কার্যনির্বাহী স্পিকার রমা দেবী এই তিন সাংসদকে সাসপেন্ড করেন।

এর পর লোকসভা পুরোপুরি বিরোধীশূন্য হয়ে যায়। রাজ্যসভায় বসে থাকেন শুধু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা জেডিএস নেতা দেবগৌড়া এবং এছাড়া এনডিএ-র বাইরের থাকা বিজেপির মিত্র দলগুলির (বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস) সাংসদেরা। ফলে প্রশ্নোত্তর পর্বেই হোক বা বিল নিয়ে আলোচনা— বিরোধীশূন্য সংসদে বিরোধীদের এবং বিরোধী-শাসিত রাজ্যের সরকারগুলির তীব্র সমালোচনা চালিয়ে যান বিজেপির সাংসদ, মন্ত্রীরা। সেই সঙ্গে মোদীর ব্যক্তিগত প্রশংসা এবং সরকারের প্রশংসাও চলতে থাকে অবিরাম। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, স্বাধীন ভারতের সংসদে এমনটা এর আগে কখনই দেখা যায়নি।

আজ সকালে (তখনও সাসপেন্ড হওয়া বিরোধী সাংসদের তালিকা ছিল ১৪৩) তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে একটি হিসাব দেওয়া হয়। যাঁদের সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁদের নির্বাচনী এলাকার যোগফল করে সেই সংক্রান্ত তথ্য পেশ করে তৃণমূল। বলা হচ্ছে, লোকসভার ১০ কোটি এবং রাজ্যসভার ১৯ কোটি, অর্থাৎ মোট ২৯ কোটি মানুষের প্রতিনিধিদের বাইরে রেখেই সংসদ চালাচ্ছে মোদী সরকার। সংখ্যার হিসাবে একটি তালিকা তৈরি করে দেখানো হয়েছে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকছে তামিলনাড়ুর (সাড়ে ছ কোটি)। এর পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ (৫.৭ কোটি)।

বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, সরকার বিতর্কহীন পরিবেশে, বিতর্কিত বিলগুলি পাশ করিয়ে নিতে চেয়েছে বলেই এ ভাবে নজিরবিহীন সংখ্যায় সাসপেন্ড করিয়েছে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম বিল পাশ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যসভা থেকে প্রথম সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন মৌনব্রত নিয়েছেন শুক্রবার পর্যন্ত। সূত্রের খবর, তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, এই মৌন প্রতিবাদ তিনি এই বছরের শেষ দিন পর্যন্ত চালাবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement