গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
মেসেজে নজরদারি বাড়াতে চলেছে হোয়্যাটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। সোমবারই তাদের কড়া বার্তা পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই লিখিত জবাব দিয়ে গুজব ছড়ানো রুখতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলল হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের মতোই তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। ই-মেলে পাঠানো ওই বার্তায় হোয়াটসঅ্যাপের তরফে বলা হয়েছে, সরকার, প্রশাসন ও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির একযোগে এই বিপদের মোকাবিলা করা প্রয়োজন।
বুধবার ওই ই-মেল পাঠিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের মূল সংস্থা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থার পক্ষ থেকে দ্বিমাত্রিক নিরাপত্তার বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, ‘ভারত সরকারের মতোই, আমরাও এই বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত। আমরাও এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে চাই। আমরা মনে করি, এটা সরকার, সভ্য সমাজ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটা রুখতে একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে।’
হোয়াটসঅ্যাপের চিঠিতে প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়েও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।বলা হয়েছে, অ্যাপটিতে শুরু থেকেই ব্লক করার অপশন রয়েছে। যে কোনও সময় যে কোনও ব্যক্তিকে ব্লক করা যেতে পারে একটি টাচের মাধ্যমে। ‘আমরা সম্প্রতি গ্রুপ চ্যাটের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন ফিচার এনেছি। অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর মেসেজ মনে হলে তা ছড়ানো রুখতে যা কাজে আসতে পারে। তাছাড়া কেউ গ্রুপ ছেড়ে গেলে বা ‘রিমুভ’ করলে তাকে ফের ‘অ্যাড’ করার ক্ষেত্রেও কিছু নতুন বিধিনিষেধ আনা হয়েছে। তাছাড়া গ্রুপে কারা কারা পোস্ট বা ফরওয়ার্ড করতে পারবে, গ্রুপ অ্যাডমিন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, এমন নিয়ন্ত্রণও আনা হচ্ছে। এই সবই ভুয়ো, গুজব, বা প্ররোচনামূলক মেসেজ ছড়ানো রুখতে সাহায্য করবে।’’ —আশ্বস্ত করেছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, একটি নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগের কাজ চলছে, যাতে বোঝা যাবে, মেসেজটি প্রেরক নিজে লিখেছেন, নাকি ফরওয়ার্ড করেছেন।
হোয়াটসঅ্যাপে ‘ছেলেধরা’ গুজবের জেরে সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। রবিবারও মহারাষ্ট্রে পাঁচ জনকে ‘শিশুচোর’ সন্দেহে পাঁচ ভিখারিকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। পরপর এই ঘটনার জেরে সোমবারই কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষকে কড়া বার্তা পাঠায়। ভুয়ো খবর, গুজব, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং প্ররোচনামূলক মেসেজ ছড়ানো রুখতে অবিলম্বে পদক্ষেপ করার কথা কড়া ভাষায় জানিয়ে দেয় কেন্দ্র।
কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি মহল মনে করছে, এই ধরনের প্রযুক্তিগত কিছু পরিবর্তন করেই এই আতঙ্কে ইতি টানা যাবে না। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও ভুয়ো বা প্ররোচনামূলক মেসেজ ছড়াতে চায়, তাহলে তা আটকানো কার্যত অসম্ভব। কারণ, কোনটা ভুয়ো বা প্ররোচনামূলক, সেটা শুধুমাত্র প্রযুক্তিগতভাবে ধরা প্রযুক্তির পক্ষে কঠিন। তাঁদের পরামর্শ, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা এবং কঠোর আইনই এই প্রবণতার অবসান ঘটাতে পারে। কোনও কিছু ইনবক্সে পেলেই না ভেবে বা না বুঝে ফরওয়ার্ড করার প্রবণতা যত দিন না বন্ধ হবে, শুধুমাত্র প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে তাতে লাগাম পরানো অতীব দুরূহ।